
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচই’ আন্দোলনের নেতৃত্বে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় একযোগে কর্মসূচি— দ্রুত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান
তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের উত্তরাঞ্চল। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচই’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলায়— লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় একযোগে ১১টি পয়েন্টে মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একই সময়ে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। কর্মসূচিতে অংশ নেয় লাখো মানুষ, যাদের স্লোগান একটাই— “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচই, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চাই।”
দুলু বলেন, “তিস্তা শুধু উত্তরাঞ্চলের নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করতে হবে। জনগণ এখন তিস্তার ন্যায্য অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছে।”
তিনি আরও বলেন, “তিস্তা সমস্যা কোনো স্থানীয় ইস্যু নয়— এটি একটি জাতীয় সমস্যা। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে রংপুরবাসীর বুকের ভেতরে জমে থাকা কান্না আজ আন্দোলনের আগুনে পরিণত হয়েছে।”
আন্দোলনের এই সমন্বয়ক অভিযোগ করেন, সরকারের ধীরগতি ও ষড়যন্ত্রের কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে, ফলে নদীর জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে, তারা জাতীয় শত্রুতে পরিণত হবে।”
একই সঙ্গে তিনি সরকারকে নভেম্বরের মধ্যেই মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার আহ্বান জানান এবং বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস আগেই কাজ শুরু না হলে রংপুরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো বিভাগ অচল করে দেওয়া হবে।”
জানা গেছে, গত কয়েক মাসে তিস্তা নদীর ভাঙন ও চর জেগে ওঠার ফলে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষিজমি বিলীন হওয়া, ঘরবাড়ি হারানো ও পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির কারণে স্থানীয়রা চরম উদ্বেগে রয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের অবহেলায় তিস্তার বুকজুড়ে গড়ে উঠছে অসংখ্য চর, বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বসতভিটা। ফলে প্রতিনিয়ত বিপর্যয়ের মুখে পড়ছেন নদীপাড়ের মানুষ।
এর আগে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে লালমনিরহাটে গণমিছিল, পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদানসহ একাধিক কর্মসূচি পালন করা হয়।
দুলু বলেন, “তিস্তা ইস্যু এখন আর শুধু পরিবেশ বা অর্থনীতির প্রশ্ন নয়, এটি উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। সরকার যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দেবে, আর মানুষ খাদ্যের জন্য রাজধানীমুখী লংমার্চে নামতে বাধ্য হবে।”