
দীর্ঘদিনের অব্যাহত বর্ষণ ও প্রতিকূল অবস্থার কারণে থমকে থাকা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে পাবনা পৌরসভায়। পৌর প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে মাঠপর্যায়ে সরেজমিন তদারকি শুরু করে স্থবির হয়ে পড়া উন্নয়ন কাজগুলোকে নতুন গতি দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পৌরকর্মীদের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অবহেলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন।
নাগরিক সেবাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে পৌর প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নাগরিকরা হটলাইনে ফোন করলে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
জনগণের অভিযোগ ও সমস্যার দ্রুত সমাধানে ইতোমধ্যে একটি বিশেষ হটলাইন (০১৩২৩-৪১৫৫০৩) চালু করা হয়েছে। এই নম্বরে ফোন করেই নাগরিকরা সরাসরি পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন। প্রশাসক বলেন, “সময় নষ্টের আর সুযোগ নেই। বৃষ্টি যতটা বিলম্ব ঘটিয়েছে, এখন তার চেয়েও দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। দায়িত্বে গাফিলতি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
৪টি বড় উদ্যোগে আলোকিত ও নান্দনিক হচ্ছে পৌর এলাকা, সড়ক আলোকায়ন, পরিচ্ছন্নতা এবং নগরায়নে নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে অবকাঠামোকে আলোকিত ও নান্দনিক করতে ইতোমধ্যে চারটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে:
১. গাছপাড়া থেকে এডওয়ার্ড কলেজ পর্যন্ত সড়কজুড়ে ল্যাম্পপোষ্ট স্থাপন ও নিয়মিত ক্লিনিং ড্রাইভ শুরু হয়েছে।
২. জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কে আলোকায়ন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
৩. বনমালি অডিটোরিয়াম সংলগ্ন ফাঁকা স্থানে নির্মিত হবে আধুনিক “পৌর স্কয়ার”, যা সাংস্কৃতিক আয়োজন ও গণসমাবেশের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
৪. বাস টার্মিনালের পাশের খালি জায়গায় স্থাপন করা হবে পাবলিক পার্ক, যেখানে বিনোদন, হাঁটা ও বসার ব্যবস্থা থাকবে।
প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলমের সক্রিয় তদারকি ও সমন্বয়ের ফলে চলমান প্রকল্পগুলোতেও দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে:
এডিপি ২০২৪-২৫: ৩টি প্যাকেজে ২৩টি স্কিমের কাজের প্রায় ৯০% সম্পন্ন।
এডিপি বিশেষ ২০২৪-২৫: ২টি প্যাকেজে ৭টি স্কিমের ৫০% অগ্রগতি।
LGCRRP : ১২টি প্যাকেজের ৮৫টি স্কিমের মধ্যে ৮০% কাজ শেষ হয়েছে।
RUTDP : ২৬ জুন ২০২৫ অনুমোদিত ১টি প্যাকেজে ৩টি স্কিমের দরপত্র মূল্যায়ন চলছে, শিগগিরই কার্যাদেশ দেওয়া হবে।
বৃহত্তর পাবনা-বগুড়া অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প: ২১টির মধ্যে ৯টি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে, বাকি ১২টির কাজ দ্রুত মেয়াদে শুরু হবে। জন আস্থায় ফেরার ইতিবাচক সাড়া প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে কেবল কার্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কর্মকর্তাদের নিয়ে শহরের রাস্তা, ড্রেনেজ, জনসেবা এলাকা এবং উন্নয়নকাজের অগ্রগতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, “নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।”
বৃষ্টিজনিত স্থবিরতা কাটিয়ে উন্নয়ন তৎপরতা, নতুন প্রকল্প এবং নাগরিকমুখী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শহরে পরিবর্তনের সুর স্পষ্ট হচ্ছে। তদারকি জোরদার হওয়ায় এবং হটলাইন চালুর ফলে মানুষের মধ্যেও আস্থা ফিরতে শুরু করেছে।
পৌরসভার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কয়েকজন পৌর বাসিন্দা বলেন, প্রায় ১৫০ বছরের প্রাচীন এই পৌরসভা ও প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও পৌরবাসী সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তবে এখন “স্মরণ কালের সেরা সেবা কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে”। তারা আশা প্রকাশ করেন, সেবার এই মান যেন অব্যাহত থাকে, যাতে পৌরসভা তার প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহন করতে পারে।