ঢাকা ০৯:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
News Title :
কাজিপুরে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে নদী খননের মাটি তিস্তা মহাপরিকল্পনার দাবিতে একযোগে মশাল প্রজ্জ্বলন বিলাইছড়িতে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার ও দলীয় কার্যক্রম গতিশীল করতে ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সভা বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত গাইবান্ধায় ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু; ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পক্ষ থেকে এস.এম. শফিউল আজমকে সংবর্ধনা  আখতারুজ্জামান স্মরণে ঈশ্বরদীতে স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত “জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে নাগরিক সেবা” — বিভাগীয় কমিশনার এইচএসসিতে পাশের হার ৫১.৫৪ শতাংশ; ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড রাজস্থলীতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা : নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে

পাবনা জেলার জন্মদিনে গৌরবগাঁথা : ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, শিল্প ও সম্ভাবনার আলোকছটা

১৮২৮ সালের ১৬ অক্টোবর’ প্রতিষ্ঠিত পাবনা জেলা আজ ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, শিক্ষা–সংস্কৃতি, কৃষি–শিল্প, সাহিত্য ও বিশিষ্টজনের অবদানে সমৃদ্ধ। ১৮২৮ সালের এই দিনে পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পাবনা। ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, কৃষি, তাঁত–বস্ত্র, মন্দির–মসজিদ, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা, সাহিত্য–সংস্কৃতি ও প্রথিতযশা ব্যক্তিদের অবদানে আজকের পাবনা এক সম্ভাবনাময় ও গর্বিত জেলা।

রাজশাহী ও যশোর জেলার কিছু অংশ নিয়ে ১৮২৮ সালের ১৬ অক্টোবর গঠিত হয় পাবনা জেলা। জেলার নামকরণের উৎস নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত—কেউ বলেন ‘পাবনদ্বীপ’ থেকে, কেউ বলেন প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনভূমি শব্দ থেকে এসেছে পাবনা। প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চল ছিল কৃষি, ব্যবসা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। নদী ও নৌপথকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল বাণিজ্য, তাঁত, মৃৎশিল্প ও সংগীতচর্চার ঐতিহ্য।

ধান, পেঁয়াজ, আলু, আখ, শাকসবজি, তেলবীজ ও ফলমূলের জন্য পাবনা সুপরিচিত। এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা। তাঁত ও হোসিয়ারি বস্ত্রশিল্প পাবনার ঐতিহ্য বহন করে—পাবনার তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও হোসিয়ারি কাপড় দেশ–বিদেশে সমাদৃত। ইশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পাবনা সুগার মিল, ইপিজেড ও বস্ত্রশিল্প এলাকা আধুনিক শিল্পায়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

পাবনা জেলায় রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনা ও ঐতিহাসিক নিদর্শন— ভাড়ারা মসজিদ ,বনমালী রায় বাহাদুরের জমিদারবাড়ি,জোড়বাংলা মন্দির,চাটমোহর শাহী মসজিদ,এক রাতের মসজিদ,এক কাতারের মসজিদ,জুবিলী ট্যাংক (পাবনা শহর), এসব স্থাপনা প্রাচীন কারুকাজ, জমিদার আমল ও সুলতানি ঐতিহ্যের সাক্ষী বহন করছে, যা জেলার ইতিহাস ও স্থাপত্য ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাবনার ভূমিকা গৌরবময়। জেলা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিফলক ও শহীদ স্মরণিকা। মুক্তিকামী জনগণের সাহসিকতা, ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার ইতিহাস পাবনার মানুষ আজও গর্বের সঙ্গে ধারণ করে। এছাড়া *২০২৪ সালের ৪ আগস্ট* স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পাবনায় এক তরুণ আন্দোলনকারীর প্রাণদান নতুন প্রজন্মকে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

পাবনা জেলার শিক্ষাক্ষেত্র দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (PUST),পাবনা মেডিকেল কলেজ, এডওয়ার্ড কলেজ,পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট—সব প্রতিষ্ঠানই শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে এসব প্রতিষ্ঠান এখন পাবনার গর্ব।

পাবনা বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির উর্বর ভূমি। এ জেলার কৃতি সন্তানদের মধ্যে রয়েছেন— কবি বন্দে আলী মিয়া (জন্ম: সাঁথিয়া, পাবনা) কবি ওমর আলী (পাবনা সদর) কবি আহসান হাবীব (শংকরদহ, সাঁথিয়া) বেগম সুফিয়া কামাল (শৈশব কেটেছে পাবনায়) ড. বারীন মজুমদার (সঙ্গীতজ্ঞ ও গবেষক) ড. ফজলে রাব্বি (বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ) মোস্তফা কামাল (লেখক ও কথাসাহিত্যিক) বাপ্পি লাহিড়ী (বিশ্বখ্যাত সংগীত পরিচালক ও গায়ক; পূর্বপুরুষের নিবাস পাবনায়) ভাষাসৈনিক ও সাংবাদিক রণেশ মৈত্র (জন্ম: পাবনা শহর; আজীবন গণমাধ্যমকর্মী ও আন্দোলনের সৈনিক) ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল ও কাবাডিতে পাবনার খেলোয়াড়রা জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করেছেন।
পাবনা জেলা স্টেডিয়াম ও ইশ্বরদী স্টেডিয়াম খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ক্রীড়াপ্রেমীদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।

পাবনা প্রেসক্লাব বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও সক্রিয় সাংবাদিক সংগঠন। এখান থেকে বহু সাংবাদিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করছেন। গণমাধ্যমের বিকাশে পাবনার সাংবাদিক সমাজ অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন পাবনা জেলার সম্ভাবনা সীমাহীন। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প, তাঁত ও হোসিয়ারি পণ্য রপ্তানি, নদীভিত্তিক পর্যটন, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পকে ঘিরে শিল্পায়ন—এসব উদ্যোগ পাবনাকে ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারে।

পাবনা জেলার জন্মদিন শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক স্মারক নয়—এটি গৌরব, সংগ্রাম, ঐতিহ্য ও সম্ভাবনার প্রতীক। ১৬ অক্টোবর জেলা দিবসে নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব—এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়া।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

বার্তা বিভাগ

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

কাজিপুরে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে নদী খননের মাটি

পাবনা জেলার জন্মদিনে গৌরবগাঁথা : ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, শিল্প ও সম্ভাবনার আলোকছটা

আপডেট সময় ০৮:০৮:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

১৮২৮ সালের ১৬ অক্টোবর’ প্রতিষ্ঠিত পাবনা জেলা আজ ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, শিক্ষা–সংস্কৃতি, কৃষি–শিল্প, সাহিত্য ও বিশিষ্টজনের অবদানে সমৃদ্ধ। ১৮২৮ সালের এই দিনে পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পাবনা। ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, কৃষি, তাঁত–বস্ত্র, মন্দির–মসজিদ, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা, সাহিত্য–সংস্কৃতি ও প্রথিতযশা ব্যক্তিদের অবদানে আজকের পাবনা এক সম্ভাবনাময় ও গর্বিত জেলা।

রাজশাহী ও যশোর জেলার কিছু অংশ নিয়ে ১৮২৮ সালের ১৬ অক্টোবর গঠিত হয় পাবনা জেলা। জেলার নামকরণের উৎস নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত—কেউ বলেন ‘পাবনদ্বীপ’ থেকে, কেউ বলেন প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনভূমি শব্দ থেকে এসেছে পাবনা। প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চল ছিল কৃষি, ব্যবসা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। নদী ও নৌপথকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল বাণিজ্য, তাঁত, মৃৎশিল্প ও সংগীতচর্চার ঐতিহ্য।

ধান, পেঁয়াজ, আলু, আখ, শাকসবজি, তেলবীজ ও ফলমূলের জন্য পাবনা সুপরিচিত। এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা। তাঁত ও হোসিয়ারি বস্ত্রশিল্প পাবনার ঐতিহ্য বহন করে—পাবনার তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও হোসিয়ারি কাপড় দেশ–বিদেশে সমাদৃত। ইশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পাবনা সুগার মিল, ইপিজেড ও বস্ত্রশিল্প এলাকা আধুনিক শিল্পায়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

পাবনা জেলায় রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনা ও ঐতিহাসিক নিদর্শন— ভাড়ারা মসজিদ ,বনমালী রায় বাহাদুরের জমিদারবাড়ি,জোড়বাংলা মন্দির,চাটমোহর শাহী মসজিদ,এক রাতের মসজিদ,এক কাতারের মসজিদ,জুবিলী ট্যাংক (পাবনা শহর), এসব স্থাপনা প্রাচীন কারুকাজ, জমিদার আমল ও সুলতানি ঐতিহ্যের সাক্ষী বহন করছে, যা জেলার ইতিহাস ও স্থাপত্য ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাবনার ভূমিকা গৌরবময়। জেলা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিফলক ও শহীদ স্মরণিকা। মুক্তিকামী জনগণের সাহসিকতা, ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার ইতিহাস পাবনার মানুষ আজও গর্বের সঙ্গে ধারণ করে। এছাড়া *২০২৪ সালের ৪ আগস্ট* স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পাবনায় এক তরুণ আন্দোলনকারীর প্রাণদান নতুন প্রজন্মকে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

পাবনা জেলার শিক্ষাক্ষেত্র দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (PUST),পাবনা মেডিকেল কলেজ, এডওয়ার্ড কলেজ,পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট—সব প্রতিষ্ঠানই শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে এসব প্রতিষ্ঠান এখন পাবনার গর্ব।

পাবনা বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির উর্বর ভূমি। এ জেলার কৃতি সন্তানদের মধ্যে রয়েছেন— কবি বন্দে আলী মিয়া (জন্ম: সাঁথিয়া, পাবনা) কবি ওমর আলী (পাবনা সদর) কবি আহসান হাবীব (শংকরদহ, সাঁথিয়া) বেগম সুফিয়া কামাল (শৈশব কেটেছে পাবনায়) ড. বারীন মজুমদার (সঙ্গীতজ্ঞ ও গবেষক) ড. ফজলে রাব্বি (বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ) মোস্তফা কামাল (লেখক ও কথাসাহিত্যিক) বাপ্পি লাহিড়ী (বিশ্বখ্যাত সংগীত পরিচালক ও গায়ক; পূর্বপুরুষের নিবাস পাবনায়) ভাষাসৈনিক ও সাংবাদিক রণেশ মৈত্র (জন্ম: পাবনা শহর; আজীবন গণমাধ্যমকর্মী ও আন্দোলনের সৈনিক) ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল ও কাবাডিতে পাবনার খেলোয়াড়রা জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করেছেন।
পাবনা জেলা স্টেডিয়াম ও ইশ্বরদী স্টেডিয়াম খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ক্রীড়াপ্রেমীদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।

পাবনা প্রেসক্লাব বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও সক্রিয় সাংবাদিক সংগঠন। এখান থেকে বহু সাংবাদিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করছেন। গণমাধ্যমের বিকাশে পাবনার সাংবাদিক সমাজ অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন পাবনা জেলার সম্ভাবনা সীমাহীন। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প, তাঁত ও হোসিয়ারি পণ্য রপ্তানি, নদীভিত্তিক পর্যটন, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পকে ঘিরে শিল্পায়ন—এসব উদ্যোগ পাবনাকে ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে পারে।

পাবনা জেলার জন্মদিন শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক স্মারক নয়—এটি গৌরব, সংগ্রাম, ঐতিহ্য ও সম্ভাবনার প্রতীক। ১৬ অক্টোবর জেলা দিবসে নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব—এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়া।