
খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা এলাকায় সম্প্রতি সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ। খাগড়াছড়ি গুইমারায় সাম্প্রদায়িক হামলার এবং আদিবাসী এক ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিচারের দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের উপর পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা ও ঘরবাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদে বান্দরবানের চিম্বুকবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ম্রো ছাত্র ও যুব সমাজ।
বুধবার( ১লা অক্টোবর) দুপুরে চিম্বুক ১৬ মাইল নামক ( বটতলে ) বাজার এলাকায় জড়ো হয়ে এই বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ শুরু হয়। সেখানে চিম্বুকবাসী ম্রো আদিবাসী ছাত্র ও যুব সমাজ আয়োজনে ( সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষার্থী দনওয়াই ম্রো এর সভাপতিত্বে খাগড়াছড়ি গুইমারায় সাম্প্রতিক হামলার ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
প্রতিবাদ সমাবেশের (বান্দরবান সরকারী কলেজের) ছাত্র মেনরুম ম্রো সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠানের উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, রুইয়াং ম্রো, চ্যংরাও ম্রো, কাপ্রু পাড়া ( সাবেক মেম্বার ) মেনচিত ম্রো, (চবি, সাবেক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) টুম্পাও ম্রো, (মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র রিয়ং ম্রো ও সচেতন নাগরিক য়ংসম ম্রো, প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা সাম্প্রতিক সংঘর্ষের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। কিন্তু একটি মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বারবার অশান্তি সৃষ্টি করছে। এর ফলে নিরীহ জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। দ্রুত অপরাধীদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তারা পাহাড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীরা সতর্ক করে বলেন, যদি পুনরায় সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটানো হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বক্তারা পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই হতে পারে পাহাড়ের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মূল পথ।
অন্যদিকে স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ পাহাড়ি অঞ্চলে সাধারণ মানুষের শান্তির দাবির প্রতিফলন। তারা আশা প্রকাশ করেন, জনগণের শক্তিশালী প্রতিবাদের বার্তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করবে।
চিম্বুকের বিক্ষোভ শুধু একটি ঘটনার প্রতিবাদ নয়, বরং পাহাড়ি জনগণের শান্তি ও নিরাপদ জীবনের প্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ। এখন দেখার বিষয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কতটা দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।