ঢাকা ১০:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্রামীণ জীবনে জোঁকের ভয়াবহ উপদ্রব: আতঙ্কে জনজীবন ও গবাদিপশু

সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামাঞ্চলে জোঁকের উপদ্রব অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কৃষক ও গবাদিপশু পালকরা তীব্র আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়িঘরের আশপাশ থেকে শুরু করে কৃষিজমি, ডোবা-নালা সর্বত্রই এই রক্তচোষা প্রাণীটির ব্যাপক আবির্ভাব দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালীন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এই উপদ্রবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যা গ্রামীণ জনজীবনে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে।

বৃষ্টির জল বা ভেজা মাটির সংস্পর্শে এলেই ঝাঁকে ঝাঁকে জোঁক মানুষ ও গবাদিপশুর শরীরে উঠে যাচ্ছে এবং রক্ত শোষণ করছে।

কৃষিকাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ধানক্ষেত বা অন্যান্য আর্দ্র জমিতে কাজ করতে গেলেই পায়ে, হাতে, এমনকি শরীরের বিভিন্ন গোপন অংশে জোঁক কামড়ে ধরছে। জানা যায়, অনেক জায়গায় জোঁকের আতঙ্কে শ্রমিকরা জমিতে নামতে চাইছেন না, ফলে কৃষকদের ফসল কাটা বা রোপণে মারাত্মকভাবে বিলম্ব হচ্ছে।

গবাদিপশু যেমন গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার জন্য জোঁক এক বড় বিপদ। মাঠে বা জলাশয়ের ধারে চরাতে গেলেই এদের শরীরে জোঁক আক্রমণ করছে। একটি গবাদিপশুকে একসঙ্গে একাধিক জোঁক আক্রমণ করলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা দুর্বলতা এমনকি ছোট পশুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

শুধু মাঠ নয়, বাড়ির ভেতরের এবং বাইরের স্যাঁতসেঁতে স্থানে, জল রাখার পাত্রে বা জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় জোঁকের আনাগোনা বেড়েছে, যা দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

জোঁক রক্ত শোষণের সময় এক প্রকার লালা নিঃসরণ করে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। জোঁক সরে যাওয়ার পরেও ক্ষতস্থান থেকে অনেকক্ষণ রক্তপাত চলতে থাকে। যদিও জোঁকের কামড় সাধারণত মারাত্মক কিছু নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে সংক্রমণ বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো, এই অনবরত রক্ত শোষণ এবং এর থেকে সৃষ্ট আতঙ্ক মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।

এই ভয়াবহ উপদ্রব থেকে মুক্তি পেতে গ্রামবাসীরা বিভিন্ন লোকাল পদ্ধতির উপর নির্ভর করছেন। কেউ কেউ জোঁক তাড়াতে লবণ, তামাকের গুঁড়া/জল, ডেটল জল ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। অনেকে গামবুট বা পলিথিন দিয়ে পা মুড়িয়ে জমিতে নামছেন।

তবে এই সাময়িক প্রতিরোধ ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি দপ্তরের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছে আক্রান্ত অঞ্চলের মানুষ।

জোঁকের উপদ্রব কমাতে কার্যকর রাসায়নিক বা জৈব পদ্ধতি চিহ্নিত করে কৃষিজমি ও জনবহুল এলাকায় প্রয়োগের ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাছাড়াও জোঁক থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ ও গবাদিপশু পালকদের সঠিক করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার দাবি জানানো প্রয়োজন মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলেন যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ না নিলে গ্রামীণ অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্য উভয়ই হুমকির মুখে পড়তে পারে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রামীণ জীবনে জোঁকের ভয়াবহ উপদ্রব: আতঙ্কে জনজীবন ও গবাদিপশু

আপডেট সময় ০৫:১৫:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামাঞ্চলে জোঁকের উপদ্রব অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কৃষক ও গবাদিপশু পালকরা তীব্র আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়িঘরের আশপাশ থেকে শুরু করে কৃষিজমি, ডোবা-নালা সর্বত্রই এই রক্তচোষা প্রাণীটির ব্যাপক আবির্ভাব দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালীন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এই উপদ্রবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যা গ্রামীণ জনজীবনে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে।

বৃষ্টির জল বা ভেজা মাটির সংস্পর্শে এলেই ঝাঁকে ঝাঁকে জোঁক মানুষ ও গবাদিপশুর শরীরে উঠে যাচ্ছে এবং রক্ত শোষণ করছে।

কৃষিকাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ধানক্ষেত বা অন্যান্য আর্দ্র জমিতে কাজ করতে গেলেই পায়ে, হাতে, এমনকি শরীরের বিভিন্ন গোপন অংশে জোঁক কামড়ে ধরছে। জানা যায়, অনেক জায়গায় জোঁকের আতঙ্কে শ্রমিকরা জমিতে নামতে চাইছেন না, ফলে কৃষকদের ফসল কাটা বা রোপণে মারাত্মকভাবে বিলম্ব হচ্ছে।

গবাদিপশু যেমন গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার জন্য জোঁক এক বড় বিপদ। মাঠে বা জলাশয়ের ধারে চরাতে গেলেই এদের শরীরে জোঁক আক্রমণ করছে। একটি গবাদিপশুকে একসঙ্গে একাধিক জোঁক আক্রমণ করলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা দুর্বলতা এমনকি ছোট পশুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

শুধু মাঠ নয়, বাড়ির ভেতরের এবং বাইরের স্যাঁতসেঁতে স্থানে, জল রাখার পাত্রে বা জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় জোঁকের আনাগোনা বেড়েছে, যা দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

জোঁক রক্ত শোষণের সময় এক প্রকার লালা নিঃসরণ করে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। জোঁক সরে যাওয়ার পরেও ক্ষতস্থান থেকে অনেকক্ষণ রক্তপাত চলতে থাকে। যদিও জোঁকের কামড় সাধারণত মারাত্মক কিছু নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে সংক্রমণ বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো, এই অনবরত রক্ত শোষণ এবং এর থেকে সৃষ্ট আতঙ্ক মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।

এই ভয়াবহ উপদ্রব থেকে মুক্তি পেতে গ্রামবাসীরা বিভিন্ন লোকাল পদ্ধতির উপর নির্ভর করছেন। কেউ কেউ জোঁক তাড়াতে লবণ, তামাকের গুঁড়া/জল, ডেটল জল ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। অনেকে গামবুট বা পলিথিন দিয়ে পা মুড়িয়ে জমিতে নামছেন।

তবে এই সাময়িক প্রতিরোধ ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি দপ্তরের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছে আক্রান্ত অঞ্চলের মানুষ।

জোঁকের উপদ্রব কমাতে কার্যকর রাসায়নিক বা জৈব পদ্ধতি চিহ্নিত করে কৃষিজমি ও জনবহুল এলাকায় প্রয়োগের ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাছাড়াও জোঁক থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ ও গবাদিপশু পালকদের সঠিক করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার দাবি জানানো প্রয়োজন মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলেন যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ না নিলে গ্রামীণ অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্য উভয়ই হুমকির মুখে পড়তে পারে।