ঢাকা ০১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
News Title :
কাজিপুরে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে নদী খননের মাটি তিস্তা মহাপরিকল্পনার দাবিতে একযোগে মশাল প্রজ্জ্বলন বিলাইছড়িতে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার ও দলীয় কার্যক্রম গতিশীল করতে ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সভা বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত গাইবান্ধায় ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু; ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পক্ষ থেকে এস.এম. শফিউল আজমকে সংবর্ধনা  আখতারুজ্জামান স্মরণে ঈশ্বরদীতে স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত “জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে নাগরিক সেবা” — বিভাগীয় কমিশনার এইচএসসিতে পাশের হার ৫১.৫৪ শতাংশ; ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড রাজস্থলীতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা : নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় “পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়”এর এসএসসি ব্যাচ-২০১৮ এর পুনর্মিলনী উপলক্ষে “রিইউনিয়ন-২০২৫” অনুষ্ঠিত

0-4096x2304-0-0-{}-0-12#

প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দের একাংশ :

“পুরোনো দিনের স্মৃতি, নতুন করে বাঁচি। হাতে হাত রাখি, পুরোনো সম্পর্ক ফিরে ডাকি। স্মৃতিতে ফেরা, প্রাণের টানে। এসো মিলি আবার, হারানো দিনের গানে।”—এই আবেগ ও উদ্দীপনাকে সামনে রেখে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো ‘পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়’ এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী ২০২৫। গতকাল, শুক্রবার (২৯ আগস্ট, ২০২৫) বিদ্যালয়ের সবুজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাঁদের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিগুলো নতুন করে ঝালিয়ে নিতে একত্রিত হয়েছিলেন।

সকাল থেকে শুরু হওয়া এই মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ। সবার চোখে-মুখে ছিল উচ্ছ্বাস আর আনন্দের প্রতিচ্ছবি। একে অপরের সাথে কুশল বিনিময়, পুরোনো ক্লাসের বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়া—সব মিলিয়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনেকেই দীর্ঘদিন পর বন্ধুকে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন এবং নিজেদের জীবনের গল্প ভাগ করে নেন।

পরিচিতি পর্ব :

 

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল।

প্রথম পর্ব: পরিচিতি

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে তাদের বর্তমান অবস্থা, পড়াশোনা বা কর্মজীবনের বিষয় বর্ণনা করেন। একই সাথে বিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের পরিচিতি, বদলি শিক্ষক এবং নতুন নিযুক্ত শিক্ষকদেরও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় পর্ব: স্মৃতিচারণ

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্কুল জীবনের মজার ঘটনা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদান এবং নিজেদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। তাঁদের বক্তৃতায় উঠে আসে স্কুলের প্রতি তাঁদের গভীর ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার কথা।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী : মেহেদী হাসান

পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণকারী ২০১৮ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “স্কুল জীবনের স্মৃতি জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। আজ এখানে এসে ২০১৮ ব্যাচের সবাইকে একসাথে পেলাম। পেলাম সেইসব শিক্ষকমণ্ডলীকে, যাদের সাথে অতিবাহিত করেছিলাম রঙিন কিছু মুহূর্ত। কত স্মৃতি, হাসি-কান্না, আনন্দ-উৎসব—সবকিছুই অতীতের দিনগুলোতে মেতে উঠতাম। বিদ্যালয়ের আঙিনায় পা দিতেই পূর্বের কাটানো সেই মুহূর্তগুলো চোখের কোণায় ভেসে উঠল।”

প্রাক্তন শিক্ষার্থী : মৌমিতান্নাহার ঋতু

মৌমিতান্নাহার ঋতু বলেন, “আজ এই স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজনের পেছনে আমার ব্যাচমেট এবং সহযোগিতা করা স্যারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁদের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ফলস্বরূপ আজকে আমরা মিলনমেলার এই স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার পেলাম। আমাদের জীর্ণশীর্ণ সেই ছোট বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত অনেক পরিবর্তন এসেছে, প্রশস্ত হয়েছে বিদ্যালয়ের আঙিনা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, আধুনিক শিক্ষার সরঞ্জাম এবং পরিবেশগত আরও অনেক উন্নয়ন যা আমাদের মনকে প্রশান্ত করে দিলো। তবে আমাদের স্যার-ম্যাডামেরা এখনো রয়ে গেছেন সেই আগের মতোই স্নেহময়ী, মমতাশীল এবং কোমলপ্রাণ। বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে আমার চোখটা আটকে গেলো, স্যার-ম্যাডাম এবং সহপাঠীদের সাথে নিয়ে ফুলের বাগান তৈরি করেছিলাম, আজ অবধি সেই বাগানটির কোনো অযত্ন হয়নি। তাঁরা আজও বাগানটি রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের স্মৃতিগুলোও তেমনিভাবে স্যারদের মনের বাগানে সুসজ্জিত রয়েছে এবং থাকবে চিরকাল।”

প্রাক্তন শিক্ষার্থী : মার্জিয়া আক্তার তন্নী

মার্জিয়া আক্তার তন্নী বলেন, “এই দিনটার জন্য আমরা অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম। পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে যেন আবার সেই স্কুল জীবনে ফিরে গেছি। বিদ্যালয়ের আঙিনায় কাটানো দিনগুলো জীবনের সেরা সময়। পুরোনো বন্ধুদের সাথে আবার দেখা হওয়া এক দারুণ অনুভূতি। এতটাই আবেগাপ্লুত আজ যে, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। দু’চোখ ভরে শুধু চারপাশ দেখে যাচ্ছি। মনে কত শত কথা, কিছুই যেন গুছিয়ে বলতে পারছি না। স্যারদের অক্লান্ত শ্রম, সুশিক্ষা এবং দোয়ায় আজকে আমরা অধিকাংশই সফল এবং অনেকেই প্রায় সফলতার প্রান্তে পৌঁছাতে পেরেছি। তাঁদের সার্বিক সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু আমাদের সার্বক্ষণিক কাম্য।”

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি এবং অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক : জনাব মোঃ মাহবুব হাসান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মো. মাহবুব হাসান বলেন, “প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি আমি এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত আছি। ছোট একটি ভবন থেকে শুরু করে আজকে আমরা বহুতল ভবন এবং সহস্রাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে বেশ অনেকটাই অগ্রসর হতে পেরেছি। ২০১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অনুরোধে প্রথমবারের মতো পুনর্মিলনীর আয়োজন করতে সক্ষম হলাম, যা আগামীর অনুপ্রেরণা। ইনশাআল্লাহ! আমরা এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজনের সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাবো।”

তিনি উপস্থিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ইতিমধ্যেই তোমরা অনেকেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম বয়ে এনেছ। তোমাদের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস, আগামীতে তোমরা আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।”

এছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশ হিসেবে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা পেশ করেন যা অনুষ্ঠানকে আরও অনেক বেশি প্রাণবন্ত করেছে।

কেক কর্তনের মুহুর্তে :

তৃতীয় পর্ব: কেক কর্তন এবং স্থিরচিত্র ধারণ

প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দদের মাঝে কেক কাটা ও সৌজন্য উপহার বিনিময়, একফ্রেমে আলোকচিত্র গ্রহণ এবং খাবার পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে জমকালো এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন, অত্র বিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রধান শিক্ষক জনাব মো. মাহবুব হাসান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, জনাব এস এম মেহেদী হাসান, নির্বাহী সম্পাদক (দৈনিক জাতীয় নববাণী)।

সম্মানিত অতিথি ছিলেন, জনাব শফিকুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবী।

অনুষ্ঠানের সঞ্চলনায় ছিলেন, অত্র স্কুলের সহকারী শিক্ষক জনাব আতিকুল ইসলাম আওলাদ।

আরও উপস্থিত ছিলেন জনাব মো. নাইমুল হাসান – সহকারী প্রধান শিক্ষক, জনাব মো. আবুল কাশেম – সহকারী শিক্ষক, জনাব মো. মতিউর রহমান – সহকারী শিক্ষক, জনাব মো. আনোয়ার হোসেন – সহকারী শিক্ষক, মোছা. আছমা ইয়াসমিন – সহকারী শিক্ষিকা, ফারহানা আক্তার – সহকারী শিক্ষিকাসহ আরও অন্যান্য শিক্ষক এবং শিক্ষিকাবৃন্দ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এবং অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, এসএসসি ব্যাচ-২০১৮

উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ :

অনুষ্ঠানের আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন অত্র স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এসএসসি ব্যাচ-২০১৮।

আয়োজকদের নাম: মেহেদী হাসান, শাকিল হাসান, সজিবুল হক সজীব, মো. উজ্জ্বল, মৌমিতান্নাহার ঋতু, মার্জিয়া আক্তার তন্নী, রীমা আক্তারসহ আরো অনেকেই।

 

পঙ্গুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রবেশদ্বার :

এই পুনর্মিলনী শুধু একটি অনুষ্ঠান ছিল না, বরং এটি ছিল এক আবেগঘন মিলনমেলা, যা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মনে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করেছে। এই অনুষ্ঠান স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবনের দৌড়ে যতই এগিয়ে যাই না কেন, আমাদের শেকড় সবসময় সেই স্কুল আর তার স্মৃতিতেই বাঁধা। আয়োজক কমিটি আশা করছে, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এমন আয়োজন করা হবে, যাতে স্কুলের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কাজিপুরে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে নদী খননের মাটি

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় “পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়”এর এসএসসি ব্যাচ-২০১৮ এর পুনর্মিলনী উপলক্ষে “রিইউনিয়ন-২০২৫” অনুষ্ঠিত

আপডেট সময় ০৫:২৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দের একাংশ :

“পুরোনো দিনের স্মৃতি, নতুন করে বাঁচি। হাতে হাত রাখি, পুরোনো সম্পর্ক ফিরে ডাকি। স্মৃতিতে ফেরা, প্রাণের টানে। এসো মিলি আবার, হারানো দিনের গানে।”—এই আবেগ ও উদ্দীপনাকে সামনে রেখে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো ‘পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়’ এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী ২০২৫। গতকাল, শুক্রবার (২৯ আগস্ট, ২০২৫) বিদ্যালয়ের সবুজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাঁদের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিগুলো নতুন করে ঝালিয়ে নিতে একত্রিত হয়েছিলেন।

সকাল থেকে শুরু হওয়া এই মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ। সবার চোখে-মুখে ছিল উচ্ছ্বাস আর আনন্দের প্রতিচ্ছবি। একে অপরের সাথে কুশল বিনিময়, পুরোনো ক্লাসের বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়া—সব মিলিয়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনেকেই দীর্ঘদিন পর বন্ধুকে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন এবং নিজেদের জীবনের গল্প ভাগ করে নেন।

পরিচিতি পর্ব :

 

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল।

প্রথম পর্ব: পরিচিতি

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে তাদের বর্তমান অবস্থা, পড়াশোনা বা কর্মজীবনের বিষয় বর্ণনা করেন। একই সাথে বিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের পরিচিতি, বদলি শিক্ষক এবং নতুন নিযুক্ত শিক্ষকদেরও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় পর্ব: স্মৃতিচারণ

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্কুল জীবনের মজার ঘটনা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদান এবং নিজেদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। তাঁদের বক্তৃতায় উঠে আসে স্কুলের প্রতি তাঁদের গভীর ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার কথা।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী : মেহেদী হাসান

পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণকারী ২০১৮ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “স্কুল জীবনের স্মৃতি জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। আজ এখানে এসে ২০১৮ ব্যাচের সবাইকে একসাথে পেলাম। পেলাম সেইসব শিক্ষকমণ্ডলীকে, যাদের সাথে অতিবাহিত করেছিলাম রঙিন কিছু মুহূর্ত। কত স্মৃতি, হাসি-কান্না, আনন্দ-উৎসব—সবকিছুই অতীতের দিনগুলোতে মেতে উঠতাম। বিদ্যালয়ের আঙিনায় পা দিতেই পূর্বের কাটানো সেই মুহূর্তগুলো চোখের কোণায় ভেসে উঠল।”

প্রাক্তন শিক্ষার্থী : মৌমিতান্নাহার ঋতু

মৌমিতান্নাহার ঋতু বলেন, “আজ এই স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজনের পেছনে আমার ব্যাচমেট এবং সহযোগিতা করা স্যারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁদের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ফলস্বরূপ আজকে আমরা মিলনমেলার এই স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার পেলাম। আমাদের জীর্ণশীর্ণ সেই ছোট বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত অনেক পরিবর্তন এসেছে, প্রশস্ত হয়েছে বিদ্যালয়ের আঙিনা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, আধুনিক শিক্ষার সরঞ্জাম এবং পরিবেশগত আরও অনেক উন্নয়ন যা আমাদের মনকে প্রশান্ত করে দিলো। তবে আমাদের স্যার-ম্যাডামেরা এখনো রয়ে গেছেন সেই আগের মতোই স্নেহময়ী, মমতাশীল এবং কোমলপ্রাণ। বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে আমার চোখটা আটকে গেলো, স্যার-ম্যাডাম এবং সহপাঠীদের সাথে নিয়ে ফুলের বাগান তৈরি করেছিলাম, আজ অবধি সেই বাগানটির কোনো অযত্ন হয়নি। তাঁরা আজও বাগানটি রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের স্মৃতিগুলোও তেমনিভাবে স্যারদের মনের বাগানে সুসজ্জিত রয়েছে এবং থাকবে চিরকাল।”

প্রাক্তন শিক্ষার্থী : মার্জিয়া আক্তার তন্নী

মার্জিয়া আক্তার তন্নী বলেন, “এই দিনটার জন্য আমরা অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম। পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে যেন আবার সেই স্কুল জীবনে ফিরে গেছি। বিদ্যালয়ের আঙিনায় কাটানো দিনগুলো জীবনের সেরা সময়। পুরোনো বন্ধুদের সাথে আবার দেখা হওয়া এক দারুণ অনুভূতি। এতটাই আবেগাপ্লুত আজ যে, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। দু’চোখ ভরে শুধু চারপাশ দেখে যাচ্ছি। মনে কত শত কথা, কিছুই যেন গুছিয়ে বলতে পারছি না। স্যারদের অক্লান্ত শ্রম, সুশিক্ষা এবং দোয়ায় আজকে আমরা অধিকাংশই সফল এবং অনেকেই প্রায় সফলতার প্রান্তে পৌঁছাতে পেরেছি। তাঁদের সার্বিক সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু আমাদের সার্বক্ষণিক কাম্য।”

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি এবং অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক : জনাব মোঃ মাহবুব হাসান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মো. মাহবুব হাসান বলেন, “প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি আমি এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত আছি। ছোট একটি ভবন থেকে শুরু করে আজকে আমরা বহুতল ভবন এবং সহস্রাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে বেশ অনেকটাই অগ্রসর হতে পেরেছি। ২০১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অনুরোধে প্রথমবারের মতো পুনর্মিলনীর আয়োজন করতে সক্ষম হলাম, যা আগামীর অনুপ্রেরণা। ইনশাআল্লাহ! আমরা এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজনের সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাবো।”

তিনি উপস্থিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ইতিমধ্যেই তোমরা অনেকেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম বয়ে এনেছ। তোমাদের প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস, আগামীতে তোমরা আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।”

এছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশ হিসেবে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা পেশ করেন যা অনুষ্ঠানকে আরও অনেক বেশি প্রাণবন্ত করেছে।

কেক কর্তনের মুহুর্তে :

তৃতীয় পর্ব: কেক কর্তন এবং স্থিরচিত্র ধারণ

প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দদের মাঝে কেক কাটা ও সৌজন্য উপহার বিনিময়, একফ্রেমে আলোকচিত্র গ্রহণ এবং খাবার পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে জমকালো এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন, অত্র বিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রধান শিক্ষক জনাব মো. মাহবুব হাসান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, জনাব এস এম মেহেদী হাসান, নির্বাহী সম্পাদক (দৈনিক জাতীয় নববাণী)।

সম্মানিত অতিথি ছিলেন, জনাব শফিকুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবী।

অনুষ্ঠানের সঞ্চলনায় ছিলেন, অত্র স্কুলের সহকারী শিক্ষক জনাব আতিকুল ইসলাম আওলাদ।

আরও উপস্থিত ছিলেন জনাব মো. নাইমুল হাসান – সহকারী প্রধান শিক্ষক, জনাব মো. আবুল কাশেম – সহকারী শিক্ষক, জনাব মো. মতিউর রহমান – সহকারী শিক্ষক, জনাব মো. আনোয়ার হোসেন – সহকারী শিক্ষক, মোছা. আছমা ইয়াসমিন – সহকারী শিক্ষিকা, ফারহানা আক্তার – সহকারী শিক্ষিকাসহ আরও অন্যান্য শিক্ষক এবং শিক্ষিকাবৃন্দ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এবং অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, এসএসসি ব্যাচ-২০১৮

উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ :

অনুষ্ঠানের আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন অত্র স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এসএসসি ব্যাচ-২০১৮।

আয়োজকদের নাম: মেহেদী হাসান, শাকিল হাসান, সজিবুল হক সজীব, মো. উজ্জ্বল, মৌমিতান্নাহার ঋতু, মার্জিয়া আক্তার তন্নী, রীমা আক্তারসহ আরো অনেকেই।

 

পঙ্গুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রবেশদ্বার :

এই পুনর্মিলনী শুধু একটি অনুষ্ঠান ছিল না, বরং এটি ছিল এক আবেগঘন মিলনমেলা, যা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মনে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করেছে। এই অনুষ্ঠান স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবনের দৌড়ে যতই এগিয়ে যাই না কেন, আমাদের শেকড় সবসময় সেই স্কুল আর তার স্মৃতিতেই বাঁধা। আয়োজক কমিটি আশা করছে, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এমন আয়োজন করা হবে, যাতে স্কুলের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।