ঢাকা ০১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
News Title :
নীলফামারীতে জামায়াতের উদ্যোগে রাস্তা সংস্কার মিরপুরের কালশী রোডে কমিউনিটি সেন্টারে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট ঢাকা-১৮ আসনে ‘সমৃদ্ধ সমাজ’ গড়ার অঙ্গীকার এস এম জাহাঙ্গীরের: বিএনপি’র ৩১ দফা ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দক্ষিণখানে উঠান বৈঠক একটি কুচক্রী মহল ধর্মকে ব্যবহার করে ভোটের রাজনীতি করছে – ঈশ্বরদীতে হাবিবুর রহমান হাবিব পাপ্পু সরকার সহ ৭ বিএনপি নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটি সুষ্ঠু রাষ্ট্র কাঠামো উপহার পায় : এম কফিল উদ্দিন টঙ্গীতে খতিব নিখোঁজের ঘটনায় ইসকন বিরোধী বিক্ষোভ গাইবান্ধায় ৯ বছরের শিশুকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ গাইবান্ধায় সেচ পাম্প চালু করতে গিয়ে বাবা-ছেলের মৃত্যু ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রোয়াংছড়িতে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও গণসংযোগ

শিশুর মানসিক বিকাশে মা-বাবার ভূমিকা

স্বাস্থ্যকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়—শারীরিক ও মানসিক। মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে আগমনের পর থেকেই শিশুর এই দুই ধরনের বিকাশ শুরু হয়। এ সময় মায়ের শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি শিশুর সামগ্রিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

জন্মের পর সন্তানের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে মা-বাবারা যতটা সচেতন থাকেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ততটা গুরুত্ব দেন না। অথচ একটি উন্নত জাতি গঠনে মানসিক স্বাস্থ্যের ভূমিকা শারীরিক স্বাস্থ্যের চেয়েও বেশি। এই মানসিক বিকাশের মূল ভিত্তি গড়ে ওঠে পরিবারের পরিবেশ ও মা-বাবার আচরণের মধ্য দিয়ে।

একটি দম্পতি যত বেশি সচেতন ও দূরদর্শী হন, তাদের সন্তানও তত বেশি সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠে। অনেক মা-বাবা সন্তানের খাবার, পোশাক বা চিকিৎসায় যত্নবান হলেও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে অবহেলা করেন। অথচ মানসিক বিকাশ ব্যাহত হলে সন্তান ভবিষ্যতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব ক্ষেত্রেই বোঝা হয়ে উঠতে পারে। তাই শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক বিকাশেও সমান মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

শিশু জন্মগতভাবেই কৌতূহলী ও অনুসন্ধিৎসু। কিন্তু অনেক সময় আমরা তাকে ‘অবুঝ’ বলে হেলা করি—শুধু তার অভিজ্ঞতার অভাব বা প্রকাশক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ভিত্তি গড়ে ওঠে জীবনের শুরুতেই, যখন তার শারীরিক ভারসাম্য পুরোপুরি তৈরি হয়নি।

শিশুর মন এক স্বচ্ছ আয়নার মতো—সে যাদের সবচেয়ে কাছের মনে করে, তাদের আচরণ ও কথাবার্তা নিজের মধ্যে ধারণ করে। এই অভিজ্ঞতাই পরবর্তীতে তার মানসিক বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলে।

শিশু প্রথমে মায়ের, তারপর বাবার এবং পরে পরিবারের অন্যান্য সদস্য, শিক্ষক ও সহপাঠীদের সংস্পর্শে আসে। এই সম্পর্কগুলোর মাধুর্য, সম্মান ও আচরণই তার মানসিক বিকাশের মূল ভিত্তি স্থাপন করে।

যখন শিশু কথা বলা শুরু করে এবং প্রশ্ন করে—‘এটা কী? ওটা কী?’—তখন অনেক অভিভাবক বিরক্ত হয়ে ধমক দেন। এতে শিশুর কৌতূহল ও জানার আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে, যা তার মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।

শৈশবে যদি পরিবারের পরিবেশ ভালোবাসাপূর্ণ, সহনশীল ও সংযত হয়, তাহলে সেই শিশু ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসী ও সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

শহর বা গ্রাম—যেখানেই হোক, সন্তান লালনপালনে অভিভাবকদের সংযমী ও দায়িত্বশীল হতে হবে। শিশুর সামনে হিংসা, প্রতিশোধ, ঝগড়া বা নেতিবাচক আচরণ কোনোভাবেই দেখানো উচিত নয়। পারিবারিক অশান্তি শিশুর মনে ভয়, অবিশ্বাস ও ক্ষোভের জন্ম দেয়, যা পরবর্তীতে তার চরিত্র গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অনেক সময় মা-বাবার অজ্ঞতা বা অসাবধানতার কারণেই শিশুর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। যেমন—ডাক্তার নিষেধ করলেও মা শিশুর আবদার মেনে আইসক্রিম দিয়ে বলেন, “বাবাকে বলো না।” বা বাবা কিছু কিনে দিয়ে বলেন, “মাকে বলো না।” এসব আচরণ শিশুর মনে মিথ্যাচারের অভ্যাস তৈরি করে, যা চরিত্র ও মানসিক বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

এমনকি অনেক মা শিশুর সামনে বাবার পকেট বা মানিব্যাগ থেকে টাকা নেন, যা শিশুর কাছে অসততার দৃষ্টান্ত হয়ে যায়। তাই শিশুর সামনে মা-বাবার সততা, সংযম ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা জরুরি।

যেসব পরিবারে নিয়মিত কলহ, তর্ক-বিতর্ক বা সহিংসতা চলে, সেখানে বেড়ে ওঠা শিশু মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে না।

তেরো বছর বয়সে বাবাকে হারানো আদিব পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে—কারণ, তার মায়ের নেতিবাচক আচরণ ও মানসিক উদাসীনতা। অন্যদিকে, নাদিয়া নামের এক মেয়ে শহরের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারে থেকেও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়, শুধু বাবা-মায়ের কলহপূর্ণ দাম্পত্য জীবনের কারণে। এক ভাই সরকারি কর্মকর্তা হলেও অন্য ভাই জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। এমন উদাহরণ সমাজে অজস্র, যার মূল কারণ শৈশবের মানসিক বিকাশে ঘাটতি।

সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত আবেগ বা উদাসীনতা—উভয়ই তার মানসিক বিকাশের পথে বাধা। তাই মা-বাবাকে শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও সমান, এমনকি আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

বার্তা বিভাগ

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

নীলফামারীতে জামায়াতের উদ্যোগে রাস্তা সংস্কার

শিশুর মানসিক বিকাশে মা-বাবার ভূমিকা

আপডেট সময় ০৫:২০:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

স্বাস্থ্যকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়—শারীরিক ও মানসিক। মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে আগমনের পর থেকেই শিশুর এই দুই ধরনের বিকাশ শুরু হয়। এ সময় মায়ের শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি শিশুর সামগ্রিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

জন্মের পর সন্তানের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে মা-বাবারা যতটা সচেতন থাকেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ততটা গুরুত্ব দেন না। অথচ একটি উন্নত জাতি গঠনে মানসিক স্বাস্থ্যের ভূমিকা শারীরিক স্বাস্থ্যের চেয়েও বেশি। এই মানসিক বিকাশের মূল ভিত্তি গড়ে ওঠে পরিবারের পরিবেশ ও মা-বাবার আচরণের মধ্য দিয়ে।

একটি দম্পতি যত বেশি সচেতন ও দূরদর্শী হন, তাদের সন্তানও তত বেশি সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠে। অনেক মা-বাবা সন্তানের খাবার, পোশাক বা চিকিৎসায় যত্নবান হলেও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে অবহেলা করেন। অথচ মানসিক বিকাশ ব্যাহত হলে সন্তান ভবিষ্যতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব ক্ষেত্রেই বোঝা হয়ে উঠতে পারে। তাই শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক বিকাশেও সমান মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

শিশু জন্মগতভাবেই কৌতূহলী ও অনুসন্ধিৎসু। কিন্তু অনেক সময় আমরা তাকে ‘অবুঝ’ বলে হেলা করি—শুধু তার অভিজ্ঞতার অভাব বা প্রকাশক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ভিত্তি গড়ে ওঠে জীবনের শুরুতেই, যখন তার শারীরিক ভারসাম্য পুরোপুরি তৈরি হয়নি।

শিশুর মন এক স্বচ্ছ আয়নার মতো—সে যাদের সবচেয়ে কাছের মনে করে, তাদের আচরণ ও কথাবার্তা নিজের মধ্যে ধারণ করে। এই অভিজ্ঞতাই পরবর্তীতে তার মানসিক বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলে।

শিশু প্রথমে মায়ের, তারপর বাবার এবং পরে পরিবারের অন্যান্য সদস্য, শিক্ষক ও সহপাঠীদের সংস্পর্শে আসে। এই সম্পর্কগুলোর মাধুর্য, সম্মান ও আচরণই তার মানসিক বিকাশের মূল ভিত্তি স্থাপন করে।

যখন শিশু কথা বলা শুরু করে এবং প্রশ্ন করে—‘এটা কী? ওটা কী?’—তখন অনেক অভিভাবক বিরক্ত হয়ে ধমক দেন। এতে শিশুর কৌতূহল ও জানার আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে, যা তার মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।

শৈশবে যদি পরিবারের পরিবেশ ভালোবাসাপূর্ণ, সহনশীল ও সংযত হয়, তাহলে সেই শিশু ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসী ও সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

শহর বা গ্রাম—যেখানেই হোক, সন্তান লালনপালনে অভিভাবকদের সংযমী ও দায়িত্বশীল হতে হবে। শিশুর সামনে হিংসা, প্রতিশোধ, ঝগড়া বা নেতিবাচক আচরণ কোনোভাবেই দেখানো উচিত নয়। পারিবারিক অশান্তি শিশুর মনে ভয়, অবিশ্বাস ও ক্ষোভের জন্ম দেয়, যা পরবর্তীতে তার চরিত্র গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অনেক সময় মা-বাবার অজ্ঞতা বা অসাবধানতার কারণেই শিশুর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। যেমন—ডাক্তার নিষেধ করলেও মা শিশুর আবদার মেনে আইসক্রিম দিয়ে বলেন, “বাবাকে বলো না।” বা বাবা কিছু কিনে দিয়ে বলেন, “মাকে বলো না।” এসব আচরণ শিশুর মনে মিথ্যাচারের অভ্যাস তৈরি করে, যা চরিত্র ও মানসিক বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

এমনকি অনেক মা শিশুর সামনে বাবার পকেট বা মানিব্যাগ থেকে টাকা নেন, যা শিশুর কাছে অসততার দৃষ্টান্ত হয়ে যায়। তাই শিশুর সামনে মা-বাবার সততা, সংযম ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা জরুরি।

যেসব পরিবারে নিয়মিত কলহ, তর্ক-বিতর্ক বা সহিংসতা চলে, সেখানে বেড়ে ওঠা শিশু মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে না।

তেরো বছর বয়সে বাবাকে হারানো আদিব পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে—কারণ, তার মায়ের নেতিবাচক আচরণ ও মানসিক উদাসীনতা। অন্যদিকে, নাদিয়া নামের এক মেয়ে শহরের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারে থেকেও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়, শুধু বাবা-মায়ের কলহপূর্ণ দাম্পত্য জীবনের কারণে। এক ভাই সরকারি কর্মকর্তা হলেও অন্য ভাই জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। এমন উদাহরণ সমাজে অজস্র, যার মূল কারণ শৈশবের মানসিক বিকাশে ঘাটতি।

সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত আবেগ বা উদাসীনতা—উভয়ই তার মানসিক বিকাশের পথে বাধা। তাই মা-বাবাকে শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও সমান, এমনকি আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।