
আজ সোমবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘাতকের নির্মম হত্যার শিকার হন। তাই সারা দেশের মতো রাজশাহীতে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদত বাষির্কী উপলক্ষ্যে আজ সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সভায় বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্, এনডিসি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, জাতির পিতাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে নিজেকে অনেক ক্ষুদ্র মনে হয়। তাঁকে নিয়ে কথা বলা কি আমাকে মানায়? বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলা তাকেই মানায় যে বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছে। এই মহামানবের ৫৫ বছরের জীবনকে যদি ৩ ভাগে ভাগ করি তাহলে শৈশব, কিশোর, তারণ্য ও যৌবন প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বের কথা ঘন্টার পর ঘন্টা বলা যায়।
৭ মার্চের ভাষণের কথা উল্লেখ করে জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেন, প্রত্যেকটি শব্দ চয়নে এত ডিপ্লোম্যাটিক ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা মাত্র নয় মাসে স্বাধীন হয়েছি- এই স্বাধীনতার পেছনে ছিল তাঁর সেই জাদুকরি ভাষণ। তার বক্তব্য অনুকরণ করার অনেক বার চেষ্টা করেছি। আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে তা কি সম্ভব? শুধু লজ্জা পাই; আমরাই বিশ্বাস ঘাতক, ক্ষমতার লোভে তাঁকে হত্যা করেছি।
তিনি বলেন, কতটা সাহস থাকলে একজন মানুষ মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পা তুলে বসে থাকতে পারে, তা বঙ্গবন্ধুকে দেখে শেখা যায়। তৎকালীন সাত কোটি বাঙালির সাহস যুক্ত করলে তাঁর সাহসের সমান হতে পারত। তিনি যত নরম ছিলেন, ছিলেন তত-ই শক্ত।
বঙ্গবন্ধুর শাসন দক্ষতার কথা তুলে ধরে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ৫৫ বছরের জীবনে বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনা করতে পেরেছিলেন। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ১২১টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করেন। বাংলাদেশ ৩৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ অর্জন করে।
‘তোমরা জানো না আমার মরণ নাই, এই বাংলায় প্রতিটি দিবসে আমি বারবার জন্মাই’- এই চরণটুকু আবৃত্তি করে জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেন, প্রতিটি দিবসে, প্রতিটি মিছিলে, আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর নাম আসে। ঘাতকরা মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুকে মারলে তাঁর নাম এ দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, ওরা ভুল ভেবেছিল। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু ততদিন থাকবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। এখন আমাদের কর্তব্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া টার্গেট পূরণ করা। এ লক্ষ্যে আমাদের যার যার অবস্থান থেকে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করা উচিত। তা হলে জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে পারব। আর এভাবেই আমরা বঙ্গবন্ধুকে যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে পারব।
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আব্দুল বাতেন, আরএমপি’র কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাদী আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন।
আলোচনা সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এর আগে নগরীর বঙ্গবন্ধু চত্তরে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত শোক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিতে বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।