ঢাকা ০৯:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
News Title :
গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে ইউপি সদস্যের সংবাদ সম্মেলন ওসমানী বিমানবন্দরে বিএনপি নেতা মিছবাহ উদ্দিনকে সংবর্ধনা ফ্রান্সে জাতীয়তাবাদী ঐক্য ফোরাম, বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার কমিটি গঠন : সভাপতি – ফারুক, সম্পাদক- ইরশাদ উত্তরায় এবি পার্টির কর্মশালা: ‘জনগণের রাজনীতিই আমাদের মূল লক্ষ্য’ – মজিবর রহমান মনজু বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা: জনজীবনের কষ্ট ও দুর্ভোগ যুবদল নেতার উপর হামলায় বটিয়াঘাটা উপজেলা যুবদলের বিবৃতি কেওক্রাডং উন্মুক্ত: বান্দরবানে পর্যটকদের উপচে পড়া ঢল গাজীপুরে শিশু ধর্ষণের দায়ে পূজা মন্ডপের সহ-সভাপতি গ্রেফতার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন বগুড়া ধুনটে ইউএনও ও ওসির সাথে উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের মতবিনিময়

আগামী সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত কি তাহলে সত্যি সত্যি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাচ্ছে?

যদিও শিরোনাম দেখে পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে! তবে সত্যি হতে পারে আগামীর পার্লামেন্ট হবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটের পার্লামেন্ট। বিভিন্ন জরিপেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভোটের হার বেড়েছে। এর জন্য সিঁড়ি বা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বিগত ১৫-১৭ বছরের অপশাসন, জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে নিরহ ছাত্র- জনতার উপর জুলুম নির্যাতন, অন্যায়ভাবে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিং বা বিচারকি হত্যা কান্ড। যদিও বিএনপির অনেকেই মনে করে জামায়াত ক্ষমতায় আসার চিন্তা পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ( পিটিআই ) হল পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক দল যা ১৯৯৬ সালে ক্রিকেটার এবং রাজনীতিবিদ ইমরান খান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাই কোন দলকে ছোট বা ক্ষুদ্র বা ছোট ভাবা বোকামীর শামিল। বাস্তবতা হচ্ছে ডাকসু ও জাগসুতে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের প্যানেল হারার পর তাদের টনক নড়েছে। এর পরও জামায়াতকে হালকা হিসেবে নিলে জাতীয় নির্বাচনে তাদের কপালে দু:খ ছাড়া সুখ নেই। সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বারবার নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াতের সাথে সর্ম্পক ঠিক রাখা এবং বিরুদ্ধাচরণ না করতে। এ নির্দেশনা না মেনে জামায়াতের বিভিন্ন কার্যক্রম ও ইসলাম নিয়ে সমালোচনা, বিএনপিসহ তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দখলবাজি, অশালীন বক্তব্যের কারণে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে জামায়াতের দিকে ঝুকছে সাধারণ মানুষ। তাছাড়াও বর্তমান বাংলাদেশের পরিবেশ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। বিভিন্ন জরিপে ভোটের হার বিএনপি ৪০-৪৫% এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৩০-৩৫%। আবার দৈনিক ডেইলি ক্যাম্পাস সুত্রে জানাগেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জরিপে বিএনপির চেয়ে ৫% এগিয়ে। তবে রাজনীতির শেষ কথা ও জরিপ বলে কিছুই।

জামায়াত আগামী নির্বাচনে জিতেও যেতে পারে মন্তব্য করেন: ড. মির্জা গালিব। তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব মনে করেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রধান দুটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশনের এক টক শোতে ভিডিও কলে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জরিপ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ভোটের ব্যবধান খুব বেশি নেই। তার মতে, এবার জামায়াত অতীতের যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় ভালো ফল করতে পারে।
ড. গালিব বলেন, “জনগণ পরিবর্তন চায়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম একটি ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক ধারা দেখতে আগ্রহী। তাই বিএনপি ও জামায়াতের কাছে মানুষের প্রত্যাশা হলো তারা যেন পুরোনো রাজনীতি না করে, বরং ভবিষ্যতের পরিবর্তনের জন্য স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা জনগণের সামনে উপস্থাপন করে।”

টক শোতে আলোচনায় উঠে আসে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের কূটনৈতিক কার্যক্রমও। জানা যায়, শুধু ৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তারা অন্তত ১৫ দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০-এ।

ড. গালিবের মতে, এর পেছনে মূল কারণ হলো জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। জামায়াত এখন একটি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে আসছে। তিনি বলেন, “আগে জামায়াত কখনো শীর্ষ দুটি দলের মধ্যে ছিল না। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপটে তারা বিএনপির সমানতালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, এমনকি নির্বাচনেও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তাছাড়া ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল জামায়াতে ইসলামীর আমিরের কাছে জানতে চেয়েছে, জামায়াত যদি আগামীতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পায়, তাহলে তাদের মূল এজেন্ডা কী হবে?

গত রবিবার এই বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলকে জামায়াতের আমির তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো ১. দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নৈতিকতা, উৎপাদনমুখী, কারিগরি দক্ষতা, বৈষয়িক ও মানবিক করে গড়ে তোলা; ২. দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন এবং ৩. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

জামায়াত দীর্ঘদিন বিএনপির জোটসঙ্গী ছিল। আবার জামায়াত যদি সত্যিই সরকার গঠন করতে পারে, সেই দায় আওয়ামী লীগের ওপরেও বর্তাবে। কেননা, তারাও জামায়াতকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলার পথে না গিয়ে তাদের নির্মূল করার পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের এটি না জানার কথা নয় যে, আদর্শভিত্তিক কোনো দলকে চাইলেই নির্মূল করা যায় না। বরং নির্মূলকরণের প্রক্রিয়ার ভেতরেই ওই দলটি শক্তিশালী হতে থাকে। তারা নানা কায়দায় পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে নিজেদের শক্তিশালী করতে থাকে।

জামায়াত যে গত ১৫ বছরে কীভাবে নিজেদের শক্তিশালী করেছে, তার প্রমাণ জুলাই অভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তী রাজনীতি। সুতরাং জামায়াতকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি বলে গালিগালাজ করে তাদের প্রশাসনিকভাবে নানা কৌশলে নির্মূল করার পথে না গিয়ে আওয়ামী লীগ যদি তাদের আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতো এবং জামায়াত, বিএনপিসহ অন্য যেকোনো দলের চেয়ে উত্তম রাজনীতি করতো; উন্নয়নের দোহাই দিয়ে মানুষকে সুশাসন ও গণতন্ত্রবঞ্চিত না করতো—তাহলে হয়তো চব্বিশের অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হতো না। বরং ২০১৪ থেকে পরপর তিনটি নির্বাচনের মধ্যে একটি বা দুটিতে আওয়ামী লীগ হেরে যেতো এবং যখন আওয়ামী লীগ হেরে যেতা তখন বিএনপির মতো একটি মধ্যপন্থী দল ক্ষতায় আসতো। জামায়াত তাদের সঙ্গে হয়তো ক্ষমতার অংশীদার হতো। কিন্তু এককভাবে কিংবা অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

আগামী নির্বাচন সত্যিই কবে হবে আর সেই নির্বাচনে আসলেই জামায়াত সরকার গঠনের মতো আসন পাবে কি না, তা এখন পর্যন্ত নানা অঙ্কের হিসাবে বন্দি। মানুষ গত ৫৪ বছরে তিনটি বড় দলের শাসন দেখেছে এবং কোনো সরকারই যে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি, বরং প্রতিটি সরকারের বিরুদ্ধেই লাগামহীন অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে—ফলে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশই হয়তো এবার নতুন কিছু ভাববে। তারা হয়তো নত্নু কাউকে ভোট দিতে চাইবে।

তবে রিফাইন আওয়ামীলীগ বলে যদি আওয়ামীলীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় অথবা জাতীয় পার্টির ব্যানারে আওয়ামীলীগ নেতাদের নির্বাচন করার সুযোগ হয় সকল জরিপ ও ভোটের হিসেব নিকেশ অন্যরকম হতে পারে। তাই বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বিতর্কে না জড়িয়ে সহবস্থান মূলক ও আদর্শিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে ভবিষ্যতে নির্বাচনি ও রাজনৈতিক সুফল পাওয়া যাবে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে ইউপি সদস্যের সংবাদ সম্মেলন

আগামী সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত কি তাহলে সত্যি সত্যি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাচ্ছে?

আপডেট সময় ০৭:১৬:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

যদিও শিরোনাম দেখে পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে! তবে সত্যি হতে পারে আগামীর পার্লামেন্ট হবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটের পার্লামেন্ট। বিভিন্ন জরিপেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভোটের হার বেড়েছে। এর জন্য সিঁড়ি বা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বিগত ১৫-১৭ বছরের অপশাসন, জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে নিরহ ছাত্র- জনতার উপর জুলুম নির্যাতন, অন্যায়ভাবে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিং বা বিচারকি হত্যা কান্ড। যদিও বিএনপির অনেকেই মনে করে জামায়াত ক্ষমতায় আসার চিন্তা পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ( পিটিআই ) হল পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক দল যা ১৯৯৬ সালে ক্রিকেটার এবং রাজনীতিবিদ ইমরান খান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাই কোন দলকে ছোট বা ক্ষুদ্র বা ছোট ভাবা বোকামীর শামিল। বাস্তবতা হচ্ছে ডাকসু ও জাগসুতে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের প্যানেল হারার পর তাদের টনক নড়েছে। এর পরও জামায়াতকে হালকা হিসেবে নিলে জাতীয় নির্বাচনে তাদের কপালে দু:খ ছাড়া সুখ নেই। সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বারবার নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াতের সাথে সর্ম্পক ঠিক রাখা এবং বিরুদ্ধাচরণ না করতে। এ নির্দেশনা না মেনে জামায়াতের বিভিন্ন কার্যক্রম ও ইসলাম নিয়ে সমালোচনা, বিএনপিসহ তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দখলবাজি, অশালীন বক্তব্যের কারণে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে জামায়াতের দিকে ঝুকছে সাধারণ মানুষ। তাছাড়াও বর্তমান বাংলাদেশের পরিবেশ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। বিভিন্ন জরিপে ভোটের হার বিএনপি ৪০-৪৫% এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৩০-৩৫%। আবার দৈনিক ডেইলি ক্যাম্পাস সুত্রে জানাগেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জরিপে বিএনপির চেয়ে ৫% এগিয়ে। তবে রাজনীতির শেষ কথা ও জরিপ বলে কিছুই।

জামায়াত আগামী নির্বাচনে জিতেও যেতে পারে মন্তব্য করেন: ড. মির্জা গালিব। তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব মনে করেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রধান দুটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশনের এক টক শোতে ভিডিও কলে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জরিপ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ভোটের ব্যবধান খুব বেশি নেই। তার মতে, এবার জামায়াত অতীতের যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় ভালো ফল করতে পারে।
ড. গালিব বলেন, “জনগণ পরিবর্তন চায়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম একটি ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক ধারা দেখতে আগ্রহী। তাই বিএনপি ও জামায়াতের কাছে মানুষের প্রত্যাশা হলো তারা যেন পুরোনো রাজনীতি না করে, বরং ভবিষ্যতের পরিবর্তনের জন্য স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা জনগণের সামনে উপস্থাপন করে।”

টক শোতে আলোচনায় উঠে আসে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের কূটনৈতিক কার্যক্রমও। জানা যায়, শুধু ৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তারা অন্তত ১৫ দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০-এ।

ড. গালিবের মতে, এর পেছনে মূল কারণ হলো জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। জামায়াত এখন একটি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে আসছে। তিনি বলেন, “আগে জামায়াত কখনো শীর্ষ দুটি দলের মধ্যে ছিল না। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপটে তারা বিএনপির সমানতালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, এমনকি নির্বাচনেও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তাছাড়া ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল জামায়াতে ইসলামীর আমিরের কাছে জানতে চেয়েছে, জামায়াত যদি আগামীতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পায়, তাহলে তাদের মূল এজেন্ডা কী হবে?

গত রবিবার এই বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলকে জামায়াতের আমির তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো ১. দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নৈতিকতা, উৎপাদনমুখী, কারিগরি দক্ষতা, বৈষয়িক ও মানবিক করে গড়ে তোলা; ২. দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন এবং ৩. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

জামায়াত দীর্ঘদিন বিএনপির জোটসঙ্গী ছিল। আবার জামায়াত যদি সত্যিই সরকার গঠন করতে পারে, সেই দায় আওয়ামী লীগের ওপরেও বর্তাবে। কেননা, তারাও জামায়াতকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলার পথে না গিয়ে তাদের নির্মূল করার পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের এটি না জানার কথা নয় যে, আদর্শভিত্তিক কোনো দলকে চাইলেই নির্মূল করা যায় না। বরং নির্মূলকরণের প্রক্রিয়ার ভেতরেই ওই দলটি শক্তিশালী হতে থাকে। তারা নানা কায়দায় পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে নিজেদের শক্তিশালী করতে থাকে।

জামায়াত যে গত ১৫ বছরে কীভাবে নিজেদের শক্তিশালী করেছে, তার প্রমাণ জুলাই অভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তী রাজনীতি। সুতরাং জামায়াতকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি বলে গালিগালাজ করে তাদের প্রশাসনিকভাবে নানা কৌশলে নির্মূল করার পথে না গিয়ে আওয়ামী লীগ যদি তাদের আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতো এবং জামায়াত, বিএনপিসহ অন্য যেকোনো দলের চেয়ে উত্তম রাজনীতি করতো; উন্নয়নের দোহাই দিয়ে মানুষকে সুশাসন ও গণতন্ত্রবঞ্চিত না করতো—তাহলে হয়তো চব্বিশের অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হতো না। বরং ২০১৪ থেকে পরপর তিনটি নির্বাচনের মধ্যে একটি বা দুটিতে আওয়ামী লীগ হেরে যেতো এবং যখন আওয়ামী লীগ হেরে যেতা তখন বিএনপির মতো একটি মধ্যপন্থী দল ক্ষতায় আসতো। জামায়াত তাদের সঙ্গে হয়তো ক্ষমতার অংশীদার হতো। কিন্তু এককভাবে কিংবা অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

আগামী নির্বাচন সত্যিই কবে হবে আর সেই নির্বাচনে আসলেই জামায়াত সরকার গঠনের মতো আসন পাবে কি না, তা এখন পর্যন্ত নানা অঙ্কের হিসাবে বন্দি। মানুষ গত ৫৪ বছরে তিনটি বড় দলের শাসন দেখেছে এবং কোনো সরকারই যে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি, বরং প্রতিটি সরকারের বিরুদ্ধেই লাগামহীন অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে—ফলে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশই হয়তো এবার নতুন কিছু ভাববে। তারা হয়তো নত্নু কাউকে ভোট দিতে চাইবে।

তবে রিফাইন আওয়ামীলীগ বলে যদি আওয়ামীলীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় অথবা জাতীয় পার্টির ব্যানারে আওয়ামীলীগ নেতাদের নির্বাচন করার সুযোগ হয় সকল জরিপ ও ভোটের হিসেব নিকেশ অন্যরকম হতে পারে। তাই বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বিতর্কে না জড়িয়ে সহবস্থান মূলক ও আদর্শিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে ভবিষ্যতে নির্বাচনি ও রাজনৈতিক সুফল পাওয়া যাবে।