
বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং। দীর্ঘদিন পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় বান্দরবানের রুমা উপজেলায় নেমেছে পর্যটকদের ঢল। মেঘছোঁয়া পাহাড়, সবুজ বনভূমি আর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের টানে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসু ছুটে যাচ্ছেন কেওক্রাডং চূড়ায়। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে স্থানীয় পর্যটন শিল্প, নতুন করে চাঙা হয়েছে পাহাড়ি অর্থনীতি।
গত বুধবার (১লা অক্টোবর ) সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা বান্দরবানের রুমা উপজেলায় ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রাণ ফিরে পেল পর্যটন স্পট। প্রশাসনের নির্দেশে দীর্ঘ সময় পর্যটন কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা থাকলেও এবার পূর্ণাঙ্গভাবে উন্মুক্ত করায় পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বগালেক ও কেওক্রাডং। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটি ও টানা সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণপিপাসুদের উপচে পড়া ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় এ পাহাড়ি জনপদ।
বিশেষ তথ্য সূত্রে জানা যায়, কেওক্রাডং হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা বান্দরবানে রুমা উপজেলায় অবস্থিত একটি পর্বতশৃঙ্গ। এটি বাংলাদেশের সরকারিভাবে স্বীকৃত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এর প্রকৃত উচ্চতা প্রায় ৯৮৬ মিটার (৩,২৩৫ ফুট) হলেও, সরকারিভাবে স্বীকৃত উচ্চতা ১,২৩০ মিটার (৪,০৪০ ফুট)।
বগালেক রুমা বাজার থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত একটি হ্রদ। এটি একটি প্রাকৃতিক গভীর মিঠা পানির হ্রদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১,২৪৬ ফুট (৩৮০ মিটার)। হ্রদের আয়তন ১৮.৫৬ একর । এটি একটি বদ্ধ হ্রদ যার গভীরতা ১৫৩ মিটার (৫০২ ফুট)।
মেঘের রাজ্যে ভিন্ন এক অনুভূতি কেওক্রাডং। চূড়ায় উঠে পর্যটকরা পাচ্ছেন মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার অন্যরকম অভিজ্ঞতা। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা ভ্রমণপিপাসু গ্রুপের সঙ্গে এসে তারা মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতির অনন্য রূপে। ঢাকার তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশ থেকেও পর্যটকরা ভিড় করছেন এখানে।
পর্যটকদের ভিড় বাড়ায় স্থানীয় হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ ও পরিবহন খাতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। পাহাড়ি যুবকেরা গাইড সার্ভিস, জিপ ও মোটরসাইকেল ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত আয় করছেন। ফলে দীর্ঘদিন মন্দার পর স্থানীয় অর্থনীতিতে এসেছে নতুন গতি।
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পাহাড়ি পথগুলোতে নিয়মিত টহল চালানো হচ্ছে।
ময়মনসিংহ থেকে আসা ইকবাল হোসেন এবং আনোয়ারা, চট্টগ্রাম থেকে আসা শুভ বড়ুয়া, শাহনেওয়াজ নয়ন বলেন, “কেওক্রাডং যাওয়ার স্বপ্ন ছিল অনেকদিনের। এবার এসে মনে হচ্ছে সত্যিই বাংলাদেশ অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘকে হাতের কাছে পাওয়া—এ অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আর জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
রুমা পর্যটক সেবা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লালরৌ কুয়াল বম জানান, কেওক্রাডংসহ বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলগুলো নিয়মিত উন্মুক্ত রাখলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা আরও বাড়বে। এর ফলে একদিকে যেমন পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হবে, অন্যদিকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটবে।
প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণকারীদের কাছে কেওক্রাডং এখন কেবল একটি পাহাড় নয়, বরং এক রোমাঞ্চকর স্বপ্ন পূরণের স্থান।