
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, প্রতি বছর বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতার এক চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। সামান্য থেকে মাঝারি বৃষ্টিতেও নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়। এই জলাবদ্ধতা কেবল দৈনন্দিন জীবনে স্থবিরতা আনে না, বরং নগরবাসীর জন্য সৃষ্টি করে এক দুর্বিষহ পরিস্থিতি। গত কয়েক দিন ধরে চলা ভারী বৃষ্টিতে ঢাকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
অবিরাম বর্ষণে ৪ অক্টোবর, ২০২৫ শুক্রবার রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, শান্তিনগর, মালিবাগ, আরামবাগ, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি ২৭, কারওয়ান বাজার, এবং বিজয় সরণি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। এই পানি নিষ্কাশন হতে দীর্ঘ সময় লাগছে, যা মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার স্বল্প ধারণক্ষমতা, এবং খাল ও প্রাকৃতিক জলাধার দখল হয়ে যাওয়ার ফল। এছাড়া ড্রেনগুলোতে পলিথিন ও কঠিন বর্জ্য জমে থাকার কারণেও পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় শহরের প্রধান সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক রাস্তায় জমে থাকা পানিতে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ছে, যা যানজটকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য নগরবাসীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকেও নগরবাসীকে হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অফিসগামী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ পথচারীরা জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নোংরা ও দূষিত পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে গিয়ে পোশাক নষ্ট হচ্ছে, এবং অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন বের হতে হয়, তাদের কষ্ট সবথেকে বেশি।
রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানি, যা ময়লা-আবর্জনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের বর্জ্যের সাথে মিশে যায়, তা নগরবাসীর জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এ ধরনের জলাবদ্ধতা পানিবাহিত রোগ (যেমন: ডায়রিয়া) এবং ডেঙ্গু মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে।
জলাবদ্ধতার কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ছে, যার ফলে ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘ যানজটের কারণে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বৃষ্টির সময় বিভিন্ন স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে যায়, যা পথচারী ও যানবাহনের জন্য বিপদ ডেকে আনে। অনেক ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের পানি নিষ্কাশনের কাজ করতে দেখা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও ধীরগতি সম্পন্ন।
ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা একটি বার্ষিক সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপের পাশাপাশি সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার নিয়মিত ও কার্যকর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, দখল হয়ে যাওয়া খাল ও জলাধার পুনরুদ্ধার, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহার রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণই এখন সময়ের দাবি।