
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী টিএন্ডটি জামে মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানীকে অপহরণ, বর্বর নির্যাতন এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন (International Society for Krishna Consciousness)-এর পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে আজ (শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫) রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শত শত মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, আলেম-ওলামা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা অবিলম্বে মুফতি মহিবুল্লাহর অপহরণ ও নির্যাতনের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি দেশে ইসকনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কঠোর দাবি জানান।
গত বুধবার (২২ অক্টোবর, ২০২৫) সকালে টঙ্গী থেকে নিখোঁজ হন মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানী। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর বৃহস্পতিবার ভোরে তাকে পঞ্চগড় সদর উপজেলায় সড়কের পাশে শিকল বাঁধা ও বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উদ্ধারের পর মুফতি মুহিবুল্লাহ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন যে, একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে এসে পাঁচজন লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা তাকে অমানবিক নির্যাতন করে এবং জুমার বয়ানে ইসকনবিরোধী কথা বলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানায়। গত কয়েক মাস ধরেই তাকে ইসকনের নাম ব্যবহার করে উড়ো চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আজকের মানববন্ধন ও মহাসমাবেশগুলোতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের বক্তব্যে কঠোর হুঁশিয়ারি ও সুনির্দিষ্ট কয়েকটি দাবি উঠে আসে:
”মুফতি মহিবুল্লাহর উপর আঘাত কোনো ব্যক্তির উপর আঘাত নয়, এটা গোটা মুসলিম উম্মাহর ঈমানের উপর আঘাত। ইসকনের মতো একটি উগ্রবাদী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। তারা আমাদের আলেমদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে! অবিলম্বে সরকারকে হুঁশিয়ার করছি, এই ইসকনকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যথায়, আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
“যে কাপুরুষেরা একজন নিরপরাধ খতিব সাহেবকে অপহরণ করে বর্বর নির্যাতন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মুফতি মহিবুল্লাহর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ঘটনায় জড়িত ইসকনের মদদদাতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিচারের দাবিতে প্রয়োজনে আমরা রক্তের বন্যা বইয়ে দেব।”
”এই দেশ সবার, আমরা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু যখন কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠী ধর্মের নামে অন্য ধর্মকে আঘাত করে এবং আলেমদের অপহরণ করে, তখন চুপ থাকা যায় না। আমরা দেশের শান্তি চাই। সরকারকে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
“বক্তাদের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, খতিব সাহেবকে দীর্ঘদিন ধরে উড়ো চিঠিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, জিডি করা সত্ত্বেও কেন প্রশাসন আগে থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি? তারা অবিলম্বে তদন্তের গতি বাড়িয়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।
ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছাড়াও পঞ্চগড়, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সব স্থানেই বক্তারা ইসকনকে ‘উগ্রবাদী’, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ এবং ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী’ সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আল্টিমেটাম দেন।
মুফতি মহিবুল্লাহর পরিবার জানিয়েছেন, তারা টঙ্গী পূর্ব থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার চেয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার বাদ জুমা টঙ্গী বাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি টঙ্গী স্টেশন রোড হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেয়। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে শুরু হওয়া মিছিলে কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন ইসলামের শত্রুরা হুশিয়ার সাবধান দুনিয়ার মুসলিম এক হও বাংলার জমিনে ইসকনের ঠাঁই নাই ।বিক্ষোভ চলাকালীন সময় মহাসড়কের ফ্লাইওভারের নিচে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। তবে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে দোয়া ও মোনাজাত শেষে মিছিল শেষ হলে যান চলাচল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়।
টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অহিদুজ্জামান বলেন, পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া থানার হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় একটি গাছের সঙ্গে শিকলবদ্ধ অবস্থায় মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তদন্ত চলছে।”স্থানীয়ভাবে এ ঘটনাকে ঘিরে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ও উত্তেজনা দেখা দিলেও পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতায় বর্তমানে পুরো এলাকায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
মোঃ আব্দুল হামিদ খান : জেষ্ঠ প্রতিনিধি 



















