
মো. সোহেল মিয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকাসক্তদের মধ্যে টাকা দিয়ে ইয়াবা সেবনের এক নতুন ও বিপজ্জনক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাদকসেবীরা ইয়াবা সেবনের জন্য কাগজের রোল হিসেবে নোট ব্যবহার করছে, যার ফলে টাকার নোট পুড়ে যাচ্ছে, বিকৃত হচ্ছে এবং এক নতুন ধরনের আর্থিক ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে আসা ২০ টাকার নোটসহ বিভিন্ন মূল্যমানের নোটের ওপর এমন পোড়া বা ছেঁড়া দাগ দেখা যাচ্ছে।
মাদকাসক্তদের মধ্যে প্রচলিত একটি পদ্ধতি হলো, একটি ছোট পাইপ বা রোল ব্যবহার করে ইয়াবার ধোঁয়া টানা। এই পাইপ তৈরির জন্য তারা প্রায়শই টাকার নোট ব্যবহার করছে, কারণ এটি সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। নোটকে রোল করার পর তাতে আগুন লাগিয়ে ইয়াবার ধোঁয়া সেবন করা হয়। এর ফলে নোটের প্রান্তিক অংশ পুড়ে যায় বা বিকৃত হয়ে যায়।
বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এই ধরনের পোড়া ও ছেঁড়া নোটের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, “দিনে অনেকগুলো পোড়া বা ছেঁড়া নোট হাতে আসছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে নিতে না চাইলে তারা ঝগড়া করে। আবার এই নোটগুলো সহজে কেউ নিতে চায় না, ফলে আমাদের লোকসান হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল একটি আর্থিক সমস্যা নয়, বরং মাদকের ভয়াবহতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের একটি সুস্পষ্ট প্রতিফলন। এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে মাদকাসক্তরা তাদের আসক্তির জন্য যেকোনো পর্যায়ে যেতে প্রস্তুত। টাকা হলো দেশের অর্থনীতির প্রতীক, এবং এটিকে এমনভাবে ব্যবহার করা কেবল একটি অপরাধ নয়, বরং দেশের অর্থনীতির প্রতি এক ধরনের অবমাননা।
বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে এমন ঘটনা তাদের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মুদ্রার নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে হলে একদিকে যেমন মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করতে হবে, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই ভয়াবহ প্রবণতা ঠেকাতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে হবে এবং পাশাপাশি মাদকবিরোধী প্রচারণাও জোরদার করতে হবে। সাধারণ মানুষকেও সচেতন করতে হবে যে এই ধরনের বিকৃত নোটের লেনদেন থেকে বিরত থাকা উচিত। তা না হলে, একদিকে যেমন মাদকের ভয়াবহতা বাড়বে, তেমনি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাও ক্ষতির শিকার হবে।
নিজস্ব সংবাদ : 

























