
“সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়” এই মূল প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গাজীপুরে আজ ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে জেলা সমবায় বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যার মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি, জাতীয় ও সমবায় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা ও শ্রেষ্ঠ সমবায়ীদের সম্মাননা প্রদান করেন।
আজ সকাল ১০টায় দিবসটি উপলক্ষে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে জাতীয় ও সমবায় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়। এরপর চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য সমবায় র্যালি বের করা হয়।
গাজীপুর জেলার সকল উপজেলার সমবায় সমিতির সদস্য, সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় সমবায়ের গুরুত্ব ও সচেতনতা বিষয়ক বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করা হয়, যা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সমবায়কে গতিশীল করার র্যালি শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন, গীতা ও বাইবেল পাঠের মাধ্যমে শুরু করা হয়।
জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপসহকারী নিবন্ধক মনিরা আক্তার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন: জনাব মোঃ মোতাসেন বিল্লাহ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), গাজীপুর। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন: জনাব আহমদ হোসেন ভূঁইয়া, উপ পরিচালক (উপ সচিব), স্থানীয় সরকার, গাজীপুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন: জনাব মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, গাজীপুর সদর গাজীপুর ও জনাব আরিফা সুলতানা শিপা, জেলা সমবায় অফিসার, গাজীপুর।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জনাব আহমদ হোসেন ভূঁইয়া সমবায়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “বর্তমান সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ‘সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়’— এই প্রতিপাদ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সমবায় সমিতিগুলোকে আরও বেশি প্রযুক্তি নির্ভর ও স্বচ্ছ হতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই সমবায়ীরা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারে।”
বিশেষ অতিথি ও জেলা সমবায় কর্মকর্তা জনাব আরিফা সুলতানা শিপা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “সমবায় দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে একত্রিত করে বিশাল মূলধন তৈরি করা সম্ভব, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। আমরা সমবায় সমিতিগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সমবায় কার্যক্রম পরিচালনার উপর গুরুত্ব আরোপ করছি।”
অন্যান্য বক্তারা বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সম্ভব। সমবায় আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সমিতির সদস্যদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বজায় রাখা জরুরি।
আলোচনা সভার শেষ পর্যায়ে সমবায় খাতে বিশেষ অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ সমবায়ী ও সমিতিকে ‘জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০২৪’ বা সম্মাননা স্মারক ও সনদ প্রদান করা হয়।
গাজীপুরের ৫টি ক্যাটাগরির (সমবায়ী কৃষিভিত্তিক বা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি, বহুমুখী সমবায় সমিতি, পেশা ভিত্তিক সমবায় সমিতি, সঞ্চয় ও ঋণদাতা ক্রেডিট প্রোগ্রাম এবং ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি) সেরা সমিতি থেকে দুইজন করে মোট ১০ জন সফল সমবায়ীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত সমবায়ীরা এই স্বীকৃতিকে সমবায় কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন বলে জানান। সফলভাবে এই দিবসটি উদযাপনের মধ্য দিয়ে গাজীপুরে সমবায় আন্দোলন আরও সুসংহত হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।
মোঃ আব্দুল হামিদ খান, জ্যেষ্ট প্রতিনিধি : 


















