
চিনিকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মনে করে ডায়াবেটিস রোগীরা সাধারণত মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দেন। তবে চিকিৎসকদের মতে, শুধু চিনি বা মিষ্টি বাদ দিলেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কিছু খাবার আছে, যেগুলো মিষ্টি না হলেও শরীরে প্রবেশের পর দ্রুত গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এসব খাবার নিয়মিত খেলে অনেকে অজান্তেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে পড়েন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানোর অন্যতম প্রধান খাবার হলো সাদা চাল। এটি উচ্চমাত্রার রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এবং কম ফাইবারযুক্ত হওয়ায় দ্রুত ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয় ও শরীরে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে ময়দার তৈরি খাবারও ক্ষতিকর, কারণ প্রক্রিয়াজাত শস্য থেকে তৈরি ময়দায় ফাইবার ও পুষ্টিগুণের অভাব থাকায় তা দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ায়। নিয়মিত ময়দার খাবার খেলে শুধু ডায়াবেটিস নয়, ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিও বাড়ে।
অনেকে চিনির বিকল্প হিসেবে মধু ও গুড় ব্যবহার করেন, কিন্তু এগুলিও মূলত গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের সংমিশ্রণ। ফলে অতিরিক্ত সেবনে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সকালের নাস্তায় খাওয়া অনেক সিরিয়ালজাতীয় খাবারেও চিনি ও কৃত্রিম উপাদান বেশি থাকে, যা দ্রুত সুগার বাড়ায়।
প্যাকেটজাত ফলের রসও রক্তে শর্করা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এমনকি বাড়িতে বানানো ফলের রসেও ফাইবার নষ্ট হয়ে যায়, ফলে শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ তৈরি হয়। পাশাপাশি সস ও ভাজা খাবার, যেমন কেচাপ, বারবিকিউ সস বা মেয়োনিজে থাকা লুকানো চিনি ও প্রিজারভেটিভ শরীরে অতিরিক্ত চিনি জমিয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। স্টার্চযুক্ত সবজি—বিশেষ করে আলু—তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে।
তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ময়দার পরিবর্তে গম, জোয়ার বা রাগির আটা ব্যবহার করলে ফাইবার বৃদ্ধি পায় এবং শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রিত থাকে। সিরিয়ালের বিকল্প হিসেবে ওটস বা কিনোয়া এবং ফলের রসের পরিবর্তে পুরো ফল খাওয়া অনেক বেশি উপকারী। এছাড়া, প্রক্রিয়াজাত সসের পরিবর্তে বাড়িতে পুদিনা, টকদই বা তেঁতুল দিয়ে তৈরি স্বাস্থ্যকর সস বা ডিপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
মাসুদ রানা : 

























