ঢাকা ১১:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
News Title :
আলীকদমে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ২ লাখ টাকা জরিমানা মানিকগঞ্জের টিআরইউ’র নতুন কমিটি গঠন  গাজীপুরে ২১ দফা দাবিতে সাংবাদিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ  বগুড়ায় অকাল বৃষ্টিতে ধানচাষে বিপর্যয়: লক্ষাধিক কৃষকের বছরের স্বপ্ন ভেসে গেল “সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়” প্রতিপাদ্যে গাজীপুরে বর্ণাঢ্য সমবায় দিবস উদযাপন  উখিয়ার মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি ‘৯২ ব্যাচ এর শুভেচ্ছা বিনিময় ও ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প করার দাবী ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এতিম পরিবারের জমি দখলে চাচার বিরুদ্ধে অভিযোগ হরিণাকুণ্ডু’র ইউএনও কে বিদায় জানালেন মুক্তিযোদ্ধারা তাড়াশে যুবদলের আহ্বায়ক এফ.এম. শাহ-আলমের উদ্যোগে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন পীরগঞ্জে ৫৪ তম সমবায় দিবস পালিত 

পলাশবাড়ী মহিলা কলেজে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের অভিযোগ

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের উদ্যোগে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অবসরে যাচ্ছেন কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার। তাঁর বিদায়ের প্রাক্কালে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগকে ঘিরে শিক্ষক মহলে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে এবং সিনিয়রিটির ক্রম ভেঙে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান পাপুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

কলেজের সিনিয়র প্রভাষক মুরাদ আজম চৌধুরী বলেন, “বিদায়ী অধ্যক্ষ ও বর্তমান গভর্নিং বডির যোগসাজশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান পাপুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার নীলনকশা তৈরি হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সিনিয়র পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে থেকে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু তা উপেক্ষা করে সিনিয়রিটি ভেঙে পাপুলকে বসানোর চেষ্টা চলছে, যা সম্পূর্ণ অনিয়ম।”

অভিযোগ রয়েছে, পাপুল ১২তম শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ লাভ করেছেন, অন্যদিকে ২২তম শিক্ষক রফিকুল ইসলাম এখনো সেই পদ পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “মোস্তাফিজুর রহমান পাপুল সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সেই সুবাদেই পাপুল, তাঁর স্ত্রী রওনক জাহানারা এবং বোন ফারজানা সুলতানা শিক্ষকতা পান। অথচ তাঁদের তিনজনের বিরুদ্ধেই দীর্ঘদিন কলেজে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “বিশেষ করে প্রদর্শক ফারজানা সুলতানা প্রায় ২৫–৩০ বছরের চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই অনুপস্থিত ছিলেন। পাপুল ও তাঁর স্ত্রীও নিয়মিত ক্লাস নেন না।”

অন্য একজন শিক্ষক বলেন, “যিনি নিয়মিত ক্লাস নেন না, তাঁকে যদি অধ্যক্ষের মতো দায়িত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়, তাহলে কলেজের শিক্ষার মান ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

এ বিষয়ে কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের প্যানেলে ছিলেন সাতজন শিক্ষক। মিটিংয়ে পাপুল ছাড়া অন্য সবাই দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাই দায়িত্ব তাঁর কাঁধে পড়েছে।”

বিদায়ী অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকারও একই দাবি করেন। তাঁর ভাষায়, “যাঁরা সিনিয়র, তাঁরা দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। পাপুলকে দায়িত্ব দিলে তাতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসে না। সব কিছুই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা মেনেই করা হচ্ছে।”

তবে শিক্ষক সমাজের একাংশ বলছেন, এ সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী মহলের চাপ ও ব্যক্তিগত স্বার্থ।

এখন দেখার বিষয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয় কি না, নাকি অনিয়মের অভিযোগই শেষ পর্যন্ত সত্য প্রমাণিত হয়—সেই দিকেই নজর রাখছে স্থানীয় শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষার্থীরা।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

বার্তা বিভাগ

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

আলীকদমে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ২ লাখ টাকা জরিমানা

পলাশবাড়ী মহিলা কলেজে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের অভিযোগ

আপডেট সময় ০৫:৫০:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের উদ্যোগে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অবসরে যাচ্ছেন কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার। তাঁর বিদায়ের প্রাক্কালে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগকে ঘিরে শিক্ষক মহলে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে এবং সিনিয়রিটির ক্রম ভেঙে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান পাপুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

কলেজের সিনিয়র প্রভাষক মুরাদ আজম চৌধুরী বলেন, “বিদায়ী অধ্যক্ষ ও বর্তমান গভর্নিং বডির যোগসাজশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান পাপুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার নীলনকশা তৈরি হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সিনিয়র পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে থেকে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু তা উপেক্ষা করে সিনিয়রিটি ভেঙে পাপুলকে বসানোর চেষ্টা চলছে, যা সম্পূর্ণ অনিয়ম।”

অভিযোগ রয়েছে, পাপুল ১২তম শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ লাভ করেছেন, অন্যদিকে ২২তম শিক্ষক রফিকুল ইসলাম এখনো সেই পদ পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “মোস্তাফিজুর রহমান পাপুল সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সেই সুবাদেই পাপুল, তাঁর স্ত্রী রওনক জাহানারা এবং বোন ফারজানা সুলতানা শিক্ষকতা পান। অথচ তাঁদের তিনজনের বিরুদ্ধেই দীর্ঘদিন কলেজে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “বিশেষ করে প্রদর্শক ফারজানা সুলতানা প্রায় ২৫–৩০ বছরের চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই অনুপস্থিত ছিলেন। পাপুল ও তাঁর স্ত্রীও নিয়মিত ক্লাস নেন না।”

অন্য একজন শিক্ষক বলেন, “যিনি নিয়মিত ক্লাস নেন না, তাঁকে যদি অধ্যক্ষের মতো দায়িত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়, তাহলে কলেজের শিক্ষার মান ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

এ বিষয়ে কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের প্যানেলে ছিলেন সাতজন শিক্ষক। মিটিংয়ে পাপুল ছাড়া অন্য সবাই দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাই দায়িত্ব তাঁর কাঁধে পড়েছে।”

বিদায়ী অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকারও একই দাবি করেন। তাঁর ভাষায়, “যাঁরা সিনিয়র, তাঁরা দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। পাপুলকে দায়িত্ব দিলে তাতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসে না। সব কিছুই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা মেনেই করা হচ্ছে।”

তবে শিক্ষক সমাজের একাংশ বলছেন, এ সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী মহলের চাপ ও ব্যক্তিগত স্বার্থ।

এখন দেখার বিষয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয় কি না, নাকি অনিয়মের অভিযোগই শেষ পর্যন্ত সত্য প্রমাণিত হয়—সেই দিকেই নজর রাখছে স্থানীয় শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষার্থীরা।