
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি গত ৩ নভেম্বর ঘোষিত ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে। দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই তালিকায় বড় ধরনের পরিবর্তন বা সংশোধন আসতে পারে, যা প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি আসনে প্রভাব ফেলবে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তালিকা ঘোষণার সময় এটিকে ‘সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং যেকোনো সময় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হলো— তালিকা ঘোষণার পর সৃষ্ট তীব্র ক্ষোভ সামাল দেওয়া, মনোনয়নবঞ্চিত হেভিওয়েট সিনিয়র নেতাদের অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা নিশ্চিত করা।
তালিকা ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষ করে মনোনয়নবঞ্চিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘোষিত প্রার্থীদের আচরণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে অন্তত এক-পঞ্চমাংশ আসনে তীব্র ক্ষোভ ও বিরোধ দেখা গেছে। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের তদন্তে জানা গেছে, বঞ্চিত নেতারা শক্ত অবস্থানে আছেন এবং কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ বিষয়ে বলেন, বিএনপি একটি বিশাল দল হওয়ায় কয়েকটি আসনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ স্বাভাবিক। তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানান, ফাঁকা থাকা ৬৩টি আসনের সবগুলো শরিকদের জন্য রাখা হবে না, এর মধ্যে দলীয় আসনও রয়েছে।
চূড়ান্ত তালিকায় অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি আসনে পরিবর্তন আনা হবে। ঘোষিত তালিকায় নাম না থাকা হেভিওয়েট সিনিয়র নেতাদের মধ্য থেকে নতুন করে ১০ থেকে ১৫ জনের নাম যুক্ত হতে পারে। এই তালিকায় রয়েছেন— বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আসলাম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেল, সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু এবং মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা দলের নেতাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ২০টি নাম যুক্ত হতে পারে। ফলে ঘোষিত তালিকা থেকেও কিছু প্রার্থীর নাম বাদ যাবে। যদিও এসব আসনে এখনো কারও নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে জোটের প্রার্থীরা যে মনোনয়ন পাবেন তা প্রায় নিশ্চিত।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন: নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২), গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫), জাতীয় জোটের নেতা সৈয়দ এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ-৫), এলডিপির চেয়ারম্যান ড. অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক (চট্টগ্রাম-১৪), দলটির মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব (লক্ষ্মীপুর-৪), বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ঢাকা-১৭), এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ (ঢাকা-১৩), গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩), দলটির মহাসচিব রাশেদ খান (ঝিনাইদহ-২), এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২), লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান (ঝালকাঠি-১), জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের জুনায়েদ আল হাবিব (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) এবং ড. রেজা কিবরিয়া (হবিগঞ্জ-১)।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি উভয়ই নিশ্চিত করেছেন যে, আসন সমঝোতার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং এ মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হবে।
মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে প্রকাশ্যে কঠোর প্রতিক্রিয়া না দেখালেও, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, মাদারীপুর, মেহেরপুর, সাতক্ষীরাসহ অন্তত দশটি জেলায় বিক্ষোভ, সমাবেশ, অবরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সিনিয়র নেতাদের মতে, এবারের মনোনয়নে বিগত আন্দোলনে ভূমিকা দেখে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। দলীয় নীতিনির্ধারকদের মতে, এক পরিবারে একজনের বেশি মনোনয়ন পাবেন না—বিএনপি এমন নীতিতে বিশ্বাসী, ফলে অনেক সিনিয়র নেতার সন্তান বা আত্মীয়স্বজন এবার মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন।
ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় ৮৪ জন প্রার্থী একেবারেই নতুন, যারা এর আগে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। তবে এদের মধ্যে অন্তত ১০ জন প্রার্থীর বাবা-মা আগে এমপি ছিলেন। এছাড়া প্রার্থী তালিকায় চারজন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং ১১টি আসনে ৯ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।
মো. মোস্তফা কামাল : 





















