
হাইকোর্টের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণ, নিধন ও টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সিরাজগঞ্জ শহরসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় কুকুরের উপদ্রব ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি এতটাই মারাত্মক যে, অনানুষ্ঠানিক এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে—জেলাজুড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ মানুষ কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন পশুর আক্রমণে আহত হচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ শহরের কোর্ট এলাকা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর এবং এমনকি জেলা সদর হাসপাতালের ভেতরেও বেওয়ারিশ কুকুরের অবাধ চলাফেরা দেখা যায়। হাসপাতালে প্রতিবেদকের চোখে পড়ে—একটি কুকুর ১২টি বাচ্চা নিয়ে অবস্থান করছে। এতে করে ভবিষ্যতে কুকুরের সংখ্যা কী পরিমাণে বাড়তে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কুকুর বা বিড়ালের কামড়ে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় র্যাবিস ভ্যাকসিন। কিন্তু পুরো জেলার একমাত্র ভরসা সিরাজগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালেই পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন মজুদ নেই। খোলা বাজারেও সবসময় ভ্যাকসিন পাওয়া যায় না। ফলে অনেকেই সময়মতো ভ্যাকসিন নিতে না পেরে জীবন সংকটের মুখে পড়ছেন। আক্রান্তদের অভিযোগ—“হাসপাতালে ভ্যাকসিন না পেয়ে বাজারে খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও পাইনি।”
হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা জানান—প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অনেকেই সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না। আবার অনেকে অর্থের অভাবে বেশি দামে ভ্যাকসিন কিনতেও সক্ষম নন। সিরাজগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ড. শিমুল তালুকদার জানান,
আগে প্রতিদিন ৫০–৬০ জন কুকুর–বিড়ালের কামড়ের রোগী আসতেন। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ৩০০–৪০০ জনে। তিনি আরও জানান,
এই মাসে ৫,০০০ ডোজ ভ্যাকসিনের চাহিদাপত্র ঢাকা পাঠানো হলেও বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৩০০ ডোজ। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। আবাসিক চিকিৎসকের মতে,
প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে জেলা সদর, উপজেলা ও পৌরসভাগুলোতে বেওয়ারি শ কুকুরকে টিকাদান এবং অসুস্থ বা দুর্বল কুকুর অপসারণের কাজ পরিচালিত হতো। এতে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকত। কিন্তু হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন,
“এত বিপুলসংখ্যক রোগী সামলানো এখন আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”হাসপাতালের কর্মকর্তারা মনে করছেন—
শুধু জেলা সদর নয়, প্রতিটি উপজেলা হাসপাতাল এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হলে দূর-দূরান্তের দরিদ্র মানুষ দ্রুত চিকিৎসা পেতে পারতেন। এতে ভ্যাকসিন সংকট এবং রোগীর চাপও কমে আসত। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে বলেন—
“কুকুর নিধনে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমরা দায়ী নই। বিষয়টি সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখবে।”সিরাজগঞ্জ জেলাব্যাপী বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ আহত হওয়া সত্ত্বেও ভ্যাকসিন সংকট দূর হয়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
এ সমস্যা সমাধানে ভ্যাকসিন সরবরাহ বৃদ্ধি, হাইকোর্টের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা, এবং সামগ্রিক কুকুর নিয়ন্ত্রণ নীতির সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
হাফিজুর রহমান বাবলু, (সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি) : 



















