ঢাকা ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
News Title :
মিশরের সীমান্ত এলাকা বন্ধ ঘোষণা করলো ইসরাইল চাদে পানি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ৩৩ প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেই জুলাই সনদ নিতে চাই: হাসনাত আব্দুল্লাহ জকসু নির্বাচনের তারিখ ২২ ডিসেম্বর চূড়ান্ত সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক একীভূতকরণে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিপূরণ পাবেন : বাংলাদেশ ব্যাংক গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর: সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথমবারের মতো ৪৮ দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের জন্য নতুন জার্সি প্রকাশ করলো অ্যাডিডাস: আর্জেন্টিনাসহ ২২ দেশের ২০২৬ বিশ্বকাপের জার্সি উন্মোচন পীরগঞ্জে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ, আলোচনায় ‘ঢাকা বিরিয়ানি হাউজ’ সলঙ্গা হেরোইনসহ ২ মাদক কারবারি আটক

– একজন সচেতন নাগরিকের কলমে: রাজপথে আর কত রক্ত ঝরলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বৈষম্য দূর হবে?

স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এসেও আমরা কি সত্যিকার অর্থে বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র গড়তে পেরেছি?

পাকিস্তান আমলে দীর্ঘ ২৪ বছর আমরা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়েছিলাম। সেই শোষণের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল পাহাড়সম বৈষম্য, যা ঘোচাতে লড়তে হয়েছিল ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে, আর মানুষ আশায় বুক বাঁধে—এবার আর বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট হতে হবে না। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই বৈষম্য ফিরে আসে নতুন মোড়কে, নতুন রূপে।

আজ, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর, আবারও রাজপথে রক্ত ঝরছে। এবারের যোদ্ধারা হলেন আমাদের সাহসী শিক্ষার্থীরা। তারা নেমে এসেছিল শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করার দাবিতে। আবু সাইদ, মুগ্ধসহ প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়; আহত হয় প্রায় ৩০ হাজার। পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এ ঘটনায়। মানুষ রাতের ঘুম হারিয়ে, বুকে রক্তাক্ত যন্ত্রণা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল।

৩৬ দিনের লাগাতার আন্দোলনের পরে ৫ আগস্ট ২০২৪, ঘটে “বর্ষা বিপ্লব”—আরেকটি মোড় ঘোরানো অধ্যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়, নেতৃত্বে আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। দেশজুড়ে আবারও আশার আলো জাগে—এবার নিশ্চয়ই সকল বৈষম্যের অবসান ঘটবে।

এই আশায় বুক বেঁধেই আবারো রাজপথে দাঁড়ালেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তারা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার কথা তুলে ধরতে চাইলেন সভা-সমাবেশে। কিন্তু তার ফলাফল কী? পুলিশি বাধা, লাঠিচার্জ, গ্রেফতার আর রক্তাক্ত রাজপথ। শিক্ষক, যিনি জাতি গড়ার কারিগর, তাকে আবারো রক্ত দিয়ে মূল্য চুকাতে হলো তার ন্যায্য দাবির।

প্রশ্ন জাগে—এ বৈষম্যের ভিত্তি কোথায়?

সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি এক। সিলেবাস, পাঠ্যবই, পরীক্ষা প্রশ্ন সব এক। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো অংশে পিছিয়ে নেই, বরং অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে। তবুও বৈষম্য স্পষ্ট:

  • সরকারি শিক্ষকেরা পান বাস্তবসম্মত বাড়ি ভাড়া, অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষকের জন্য মাত্র ১,০০০ টাকা।

  • দুই ঈদের বোনাস সীমিত করে ৫০% এ আনা হয়েছে।

  • চিকিৎসা ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা, যা বর্তমান বাজারে একদিনের ওষুধ কিনতেও যথেষ্ট নয়।

  • শিক্ষা ভাতা নেই বললেই চলে।

  • অবসরের টাকা তুলতেও বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।

এই পেশার মানুষদের কি ন্যূনতম মানবিক মর্যাদা পাওয়ার অধিকার নেই? যারা সমাজকে আলোকিত করেন, তারাই কেন অন্ধকারে থাকবেন?

একটি জাতির উন্নতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলো শিক্ষা। আর সেই শিক্ষার ধারক ও বাহক হলেন শিক্ষক। একজন শিক্ষক যদি আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন, যদি দিনের পর দিন মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, তাহলে আমরা কেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আশা করছি?

আজ সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার—শিক্ষকদের এই বৈষম্যের অবসান কবে হবে? আর কত রক্ত ঝরলে নীতি-নির্ধারকেরা জাগবেন? শিক্ষকরাও তো মানুষ। তাদেরও অধিকার আছে পরিবার নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার।

এবার সময় এসেছে—শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন চাই।
এবার সময় এসেছে—শিক্ষকদের রক্ত নয়, সম্মান পাওয়ার।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

বার্তা বিভাগ

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

মিশরের সীমান্ত এলাকা বন্ধ ঘোষণা করলো ইসরাইল

– একজন সচেতন নাগরিকের কলমে: রাজপথে আর কত রক্ত ঝরলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বৈষম্য দূর হবে?

আপডেট সময় ০২:২৮:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এসেও আমরা কি সত্যিকার অর্থে বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র গড়তে পেরেছি?

পাকিস্তান আমলে দীর্ঘ ২৪ বছর আমরা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়েছিলাম। সেই শোষণের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল পাহাড়সম বৈষম্য, যা ঘোচাতে লড়তে হয়েছিল ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে, আর মানুষ আশায় বুক বাঁধে—এবার আর বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট হতে হবে না। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই বৈষম্য ফিরে আসে নতুন মোড়কে, নতুন রূপে।

আজ, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর, আবারও রাজপথে রক্ত ঝরছে। এবারের যোদ্ধারা হলেন আমাদের সাহসী শিক্ষার্থীরা। তারা নেমে এসেছিল শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করার দাবিতে। আবু সাইদ, মুগ্ধসহ প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়; আহত হয় প্রায় ৩০ হাজার। পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এ ঘটনায়। মানুষ রাতের ঘুম হারিয়ে, বুকে রক্তাক্ত যন্ত্রণা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল।

৩৬ দিনের লাগাতার আন্দোলনের পরে ৫ আগস্ট ২০২৪, ঘটে “বর্ষা বিপ্লব”—আরেকটি মোড় ঘোরানো অধ্যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়, নেতৃত্বে আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। দেশজুড়ে আবারও আশার আলো জাগে—এবার নিশ্চয়ই সকল বৈষম্যের অবসান ঘটবে।

এই আশায় বুক বেঁধেই আবারো রাজপথে দাঁড়ালেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তারা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার কথা তুলে ধরতে চাইলেন সভা-সমাবেশে। কিন্তু তার ফলাফল কী? পুলিশি বাধা, লাঠিচার্জ, গ্রেফতার আর রক্তাক্ত রাজপথ। শিক্ষক, যিনি জাতি গড়ার কারিগর, তাকে আবারো রক্ত দিয়ে মূল্য চুকাতে হলো তার ন্যায্য দাবির।

প্রশ্ন জাগে—এ বৈষম্যের ভিত্তি কোথায়?

সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি এক। সিলেবাস, পাঠ্যবই, পরীক্ষা প্রশ্ন সব এক। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো অংশে পিছিয়ে নেই, বরং অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে। তবুও বৈষম্য স্পষ্ট:

  • সরকারি শিক্ষকেরা পান বাস্তবসম্মত বাড়ি ভাড়া, অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষকের জন্য মাত্র ১,০০০ টাকা।

  • দুই ঈদের বোনাস সীমিত করে ৫০% এ আনা হয়েছে।

  • চিকিৎসা ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা, যা বর্তমান বাজারে একদিনের ওষুধ কিনতেও যথেষ্ট নয়।

  • শিক্ষা ভাতা নেই বললেই চলে।

  • অবসরের টাকা তুলতেও বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।

এই পেশার মানুষদের কি ন্যূনতম মানবিক মর্যাদা পাওয়ার অধিকার নেই? যারা সমাজকে আলোকিত করেন, তারাই কেন অন্ধকারে থাকবেন?

একটি জাতির উন্নতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলো শিক্ষা। আর সেই শিক্ষার ধারক ও বাহক হলেন শিক্ষক। একজন শিক্ষক যদি আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন, যদি দিনের পর দিন মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, তাহলে আমরা কেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আশা করছি?

আজ সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার—শিক্ষকদের এই বৈষম্যের অবসান কবে হবে? আর কত রক্ত ঝরলে নীতি-নির্ধারকেরা জাগবেন? শিক্ষকরাও তো মানুষ। তাদেরও অধিকার আছে পরিবার নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার।

এবার সময় এসেছে—শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন চাই।
এবার সময় এসেছে—শিক্ষকদের রক্ত নয়, সম্মান পাওয়ার।