
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তিন দফা যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকায় শিক্ষক সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষক সমাজ। শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজীর নেতৃত্বে এই আন্দোলন দেশের শিক্ষা অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষকরা দাবি করছেন—তাদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ একমত। কিন্তু বিএনপি-ঘনিষ্ঠ শিক্ষক নেতা সেলিম সরকারের ঘনিষ্ঠ ও দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিত এক ব্যক্তির অনুসরণে শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অভিযোগ আছে, তিনি ৮ হাজার টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মে জড়িত ছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সাজুর তোষামোদে লিপ্ত ছিলেন।
তবে শিক্ষক সমাজের দাবিকে উপেক্ষা করে এই ধরনের অপতৎপরতা সফল হয়নি। ৫ আগস্টের রক্তস্নাত আন্দোলনের পর নতুন বাংলাদেশে নতুন কোনো বাটপার বা তেলবাজের জায়গা হবে না বলে মন্তব্য করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
দেলোয়ার হোসেন আজিজী হিমালয়ের মতো দৃঢ় অবস্থান নিয়ে শিক্ষকদের ফ্রন্টলাইনে নেতৃত্ব দেন। তিনি ঘোষণা দেন, “আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক সমাজ ঘরে ফিরবে না।”
পরে শিক্ষা উপদেষ্টা ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। কিন্তু অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “সরকার আমাদের কষ্ট বুঝতে চায় না। যদি সত্যিই আমাদের কথা না শোনে, তবে আমাদের শহীদ মিনারে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলুক।”
এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং উপস্থিত শিক্ষকরাও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
তিনি আরও ঘোষণা দেন, “আমাদের যৌক্তিক দাবি যত দিন পর্যন্ত পূরণ না হবে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
শিক্ষকদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানাতে রাত তিনটায় শহীদ মিনারে উপস্থিত হন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত জিএস ফরহাদ হোসেনও উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের প্রতি সহমর্মিতা জানান এবং দেলোয়ার হোসেন আজিজীকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেলেন।
সেলিম ছাড়া দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতারা সবাই শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান এবং দ্রুত দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
অবশেষে টানা ১০ দিনের আন্দোলনের পর সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং তা শিক্ষক নেতা দেলোয়ার হোসেন আজিজীর হাতে তুলে দেয়।
প্রজ্ঞাপন হাতে নিয়ে তিনি আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এ সময় শিক্ষকদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাসে ভরে ওঠে পুরো সমাবেশ।
অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি পূরণে আগামী কয়েক শনিবার অতিরিক্ত শ্রেণি কার্যক্রম চলবে।”
৫ আগস্টের আন্দোলনে অবদানের জন্য যেমন হাসনাত আব্দুল্লাহরা মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন, তেমনি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজীও এখন ছয় লাখ শিক্ষক পরিবারের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।
মো. আব্দুর রহমান (বকুল) : উল্লাপাড়া প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ 





















