
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদকে অর্থনৈতিক দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে তদন্তের প্রেক্ষিতে অভিযোগসমূহ সত্য প্রমাণিত হওয়ায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ঢাকা তার দায়িত্ব থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ নারী ঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে পূর্বে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অপসারিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে আদালতের নির্দেশে পুনরায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্ব গ্রহণের পর আব্দুল মজিদ আগের মতোই অর্থনৈতিক লুটপাট, নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারি সহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এসব বিষয়ে জাতীয় পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও তার দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড ভাইরাল হয়ে পড়ে।
এরপর অভিভাবকগণ মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানটিতে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
কমিটির সদস্যরা তদন্তে মজিদের বিরুদ্ধে আনিত অর্থনৈতিক দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি এবং স্বেচ্ছাচারিতার সুস্পষ্ট সত্যতা খুঁজে পান বলে জানান। এই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা, আব্দুল মজিদকে তার দায়িত্ব থেকে অপসারণের নির্দেশ প্রদান করে। মহাপরিচালক প্রফেসর বি. এম. আব্দুল হান্নান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদের অপসারণের খবর উল্লাপাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তির পরিবেশ নেমে আসে। শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত উল্লাপাড়া উপজেলার সুনামধন্য এই স্কুলটির শিক্ষার মান, আব্দুল মজিদের নারী কেলেঙ্কারি ও অর্থনৈতিক লুটপাটের কারণে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল।
অভিভাবক ও এলাকাবাসীর ধারণা, আব্দুল মজিদের অপসারণের মধ্য দিয়ে স্কুলটির সার্বিক উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কলঙ্কের কালিমা থেকে মুক্তি পাবে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বিশ্বাস জানান, যেহেতু শিক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত ও বিশ্লেষণপূর্বক আব্দুল মজিদের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য তারা কাজ করে যাবেন।
এদিকে স্কুলের বর্তমান সভাপতি, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান যে, তিনি আব্দুল মজিদের অপসারণের বিষয়টি অবগত হয়েছেন এবং শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে অভিযোগ রয়েছে যে, আতাউর রহমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর অভিভাবক সমাবেশ ও বিভিন্ন সময়ে আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের নানা অভিযোগ উত্থাপিত হলেও তিনি তা আমলে নেননি। উপরন্তু, নানা তদন্ত ও অভিযোগ সত্ত্বেও তিনি আব্দুল মজিদকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এমনকি মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এই চিঠি পাওয়ার পরেও তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বিলম্বের কারণে আব্দুল মজিদ হাইকোর্টে নির্দেশের বিপক্ষে রিট করার সুযোগ পাচ্ছেন বলেও অভিভাবকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অভিভাবকদের দাবি, স্কুলটির সুনাম, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং উল্লাপাড়ার মর্যাদা রক্ষায় শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী, স্কুল থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সৎ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করতে হবে।
হাফিজুর রহমান বাবলু : জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ 























