
লিন্ডা ফাতেমা তুজ জোহরা—খুলনার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক পরিচিত নাম, কখনো আশ্রয়, কখনো অনুপ্রেরণা। নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আত্মবিশ্বাস, সংগ্রাম আর সাফল্যের গল্প।
২০১৯ সাল। একঝাঁক স্বপ্ন দেখা নারী উদ্যোক্তা ছড়িয়ে ছিলেন খুলনার এপ্রান্ত থেকে ওপার পর্যন্ত। কিন্তু কেউ কাউকে চিনতেন না, জানতেন না। ঠিক তখনই “Khulna Online Sellers Group” নামের এক ছোট্ট ফেসবুক গ্রুপ খুলে বসেন লিন্ডা। সেই ছোট্ট উদ্যোগই হয়ে ওঠে খুলনার নারীদের বড় ভরসা।
তিনি বুঝেছিলেন—নারীরা শুধু অনলাইনে কাজ করলেই হবে না, দরকার বাস্তব জায়গায় নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ। তাই উৎসবকে ঘিরেই আয়োজন করতে থাকেন একের পর এক মেলা—‘ঈদ মেলা’, ‘পূজার বাজার মেলা’, ‘বিজয় মেলা’, ‘ফাল্গুন মেলা’ বা ‘উইন্টার ফেস্ট’।
প্রতিটি মেলায় অংশ নিয়েছেন শত শত নারী উদ্যোক্তা। কেউ প্রথমবার পণ্য নিয়ে বসেছেন, কেউ আগের চেয়ে বড় হয়েছেন, কেউবা জীবনের প্রথম বিক্রিটাই করেছেন লিন্ডার মেলায় বসে।
তবে পথচলা কি সবসময় সহজ ছিল? মোটেই না।
মঞ্চের আলো যতই ঝলমলে হোক, পর্দার পেছনে ছিল ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার আর প্রতিকূলতা। ২০২৩ সালে এক মেলায় বাধা পড়ে যায়। এরপরের অধ্যায়টা আরও কঠিন—বিনা দোষে জেল। লিন্ডার জীবন যেন তখন এক যুদ্ধক্ষেত্র। কিন্তু ভেঙে পড়ার বদলে তিনি ফিরলেন আরও দৃঢ় হয়ে।
তার জীবনের আরেক অধ্যায়ে আছেন রাজনীতিবিদ মাহমুদুল হাসান বিপ্লব—খুলনা মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, যিনি লিন্ডার স্বামী। তাদের একমাত্র কন্যা অপ্সরী হাসান আজও মায়ের পথচলার নীরব সাক্ষী।
রয়েল মোড়ের প্রাণকেন্দ্রে এখন লিন্ডার নিজস্ব শো-রুম—“Fashion Zone by Linda”। তবে এটি শুধু ব্যবসার জায়গা নয়, এখানেও তৈরি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়নের গল্প।
লিন্ডার ব্যক্তিত্ব সাদাসিধে কিন্তু বক্তব্যে দৃঢ়তা।
আমারও প্রথম ধারণা ছিল—তিনি হয়তো অহংকারী, পৌঁছানো কঠিন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাছ থেকে দেখেছি ভিন্ন এক মানুষ—খুব আন্তরিক, অমায়িক, মানবিক। তিনি কাজের প্রশংসা করতে জানেন, ছোটদের সম্মান দিতে জানেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানেন।
তিনি স্পষ্টবক্তা—সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে কখনো কুণ্ঠা করেন না।
আজ খুলনার বহু নারী যখন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে, “আমি উদ্যোক্তা”, তখন সেই আত্মবিশ্বাসের পেছনে একজন লিন্ডা ফাতেমার নিরলস শ্রম জড়িয়ে আছে।