
হাজারো জনতার উপস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়া, শাপলা চত্বর, ভাঙা ব্রিজ এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে আবারও চেঙ্গী স্কয়ারে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাহাড়ে একের পর এক নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পাহাড়ের নারীদের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। বক্তারা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে নারী নিপীড়ন রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
বক্তব্য রাখেন কৃপায়ন ত্রিপুরা, ক্যাচিংনু মারমা, আকাশ ত্রিপুরা, কবিতা চাকমা, উক্যনু মারমা প্রমুখ। তারা বলেন, আজকের সমাবেশে বিপুল মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে পাহাড়ের মানুষ আর ধর্ষণের ঘটনা সহ্য করতে রাজি নয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া আন্দোলন এখনও জাগ্রত রয়েছে। বক্তারা নিহত আন্দোলনকারীদের আত্মাহুতি স্মরণ করেন।
কবিতা চাকমা সমাবেশে বলেন, “গত মঙ্গলবার আমাদের এক বোন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আমরা তার বিচারের দাবিতেই আজকের সমাবেশে মিলিত হয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত প্রতিটি ধর্ষণের বিচার করতে হবে।”
সমাবেশ থেকে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ দুটি দাবি উত্থাপন করেছে—
১. আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের অন্যতম নেতা উক্যনুং মারমাকে অবৈধভাবে তুলে নেওয়া জোন কমান্ডারকে অপসারণ করতে হবে।
২. সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার সকল আসামিকে গ্রেফতার করতে হবে।
এই দাবিতে আগামীকাল শনিবার ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পুরো খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দাবি পূরণ না হলে দুর্গাপূজা শেষে হরতালসহ লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে দুর্গাপূজার সময়ে ধর্মীয় আবহে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে না।
সড়ক অবরোধ চলাকালে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি নেটওয়ার্কের গাড়ি এবং সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।
গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক স্কুলছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করেন। পুলিশ এ পর্যন্ত শয়ন শীল (১৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। আদালত তাকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তবে পলাতক রয়েছে আরও দুই আসামি।
ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়িতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এদিকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা ও ধর্ষণের ঘটনার পর পাহাড়ে সৃষ্ট অস্থিরতার প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি শহরে “সর্বস্তরের জনগণ ও ছাত্র-জনতা” ব্যানারে পৃথক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।