
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নাদোসৈয়দপুর ও চরকুশাবাড়ি গ্রাম-এ দুই গ্রামের মাঝখানে প্রবাহিত গুমানী নদী। স্বাধীনতার পর থেকে একাধিক জনপ্রতিনিধি নদীর উপর সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও আজও বাস্তবায়িত হয়নি প্রতিশ্রুত সেই সেতু। ফলে কয়েক হাজার মানুষ আজও রশি টেনে টেনে নৌকা দিয়ে নদী পারাপারের ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর দুই তীরে বাঁধা একটি মোটা রশিকে আঁকড়ে ধরে ছোট্ট একটি নৌকায় যাত্রীদের টেনে টেনে পারাপার করা হয়। এভাবেই শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এপার-ওপার করেন। বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে গেলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। প্রায়ই ঘটে নৌকাডুবির ঘটনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি সেতুর অভাবে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন। জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসা কিংবা কেনাকাটার জন্য যেতে হয় গুরদাসপুর বা তাড়াশ উপজেলা সদরে। তখন নদী পারাপারই হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় বাধা।
কৃষিজীবীরা জানান, সেতু না থাকায় তাদের উৎপাদিত ধান, পাট, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল বাজারজাতকরণে ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন তারা।
চরকুশাবাড়ি গ্রামের বস্ত্র ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন আমাদের নাদোসৈয়দপুর বাজারে যেতে হয়। আবার জেলা শহরেও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করতে হয়। একটি সেতু হলে শুধু আমাদের ব্যবসা নয়, কৃষিপণ্যও সহজে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো যাবে।”
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তাড়াশের উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক জানান, গুমানী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এখনো সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি। জনস্বার্থে বিষয়টি দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, “এ বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানা নেই। তবে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের ভাষ্য, একটি মাত্র সেতু নির্মাণ হলে বদলে যাবে নাদোসৈয়দপুর ও চরকুশাবাড়ি দুই পাড়ের হাজারো মানুষের জীবন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত যেমন সহজ হবে, তেমনি কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে বাজারজাত করতে পারবেন।
অর্ধশতাব্দীর প্রতিশ্রুতি যেন আর কেবল আশ্বাসেই আটকে না থাকে, এমন প্রত্যাশাই আজ দুই গ্রামের মানুষের।