
চলনবিলাঞ্চলের বিস্তৃত জলাভূমি ও উর্বর মাটির কোলে প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে উদ্ভাসিত হয় এক প্রাকৃতিক সম্পদ—তাল। বিশেষ করে তাড়াশ উপজেলা দীর্ঘকাল ধরে তালের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট, পুকুরপাড়, বাড়ির আঙিনা এবং পতিত জমি যেন তালগাছের বনেই পরিণত হয়েছে। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে এই তাল বিশেষভাবে পাকে, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্বাদ বাঙালির গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে আছে।
আশ্চর্যজনকভাবে, এই তালগাছ বেড়ে ওঠার জন্য তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। এই অঞ্চলের গবাদিপশু, যেমন গরু বা ছাগল,ও তালগাছের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। ফলে এই সময়ে চলনবিলে পাকা তাল খুব সহজে পাওয়া যায়, যা গ্রামের প্রতিটি পরিবারের জীবনে এক আনন্দের উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
এই প্রাকৃতিক উপহার শুধু গ্রামীণ জীবনকেই সমৃদ্ধ করছে না, বরং বাণিজ্যিক সম্ভাবনারও এক উজ্জ্বল দিক তুলে ধরছে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের পাকা তাল শহরের বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামের গৃহস্থরা বাড়িতে নানান ধরনের পিঠা-পুলি, ক্ষীরসা, পায়েস, তালের পিঠি ও তালের বড়া তৈরি করেন। আত্মীয়-স্বজন এবং জামাইদের আপ্যায়নের জন্য এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মহিষলুটি বাজারের তালের ব্যবসায়ী ইয়াকুব আকন্দ জানান, স্থানীয়ভাবে পাকা তাল আকারভেদে প্রতি পিস ৫ থেকে ২০ টাকায় কেনা যায়। শহরের বাজারে তা বিক্রি করে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সরাসরি গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করা যায়, তবে ব্যবসায়িক লাভ আরও অনেক বাড়ে।
চলনবিলের এই প্রাকৃতিক সম্পদ শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দিক থেকেও অনন্য। গ্রামীণ জীবনের আনন্দ আর অতিথিসেবার ঐতিহ্যকে এই তাল আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। এ যেন বর্ষার বৃষ্টির মতো, যা শুধু মাটিকে সজীব করে না, মানুষের হৃদয়কেও ভরে তোলে আনন্দ আর মধুর স্মৃতিতে।