
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৪ নং মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া বড়বাড়ী জামে মসজিদের ছয় শতাংশ জমি জাল রেজুলেশন করে বিক্রি করা হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠেছে মসজিদ কমিটির সাবেক সেক্রেটারি আরিফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। মসজিদ কমিটি এই নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে রবিবার (২৬ অক্টোবর) লক্ষ্মীপুর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে।
কমিটির সভাপতি, সহসেক্রেটারি, কোষাধ্যক্ষ ও অন্যান্য সদস্যরা বলেন, মসজিদ পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে গত ১২ আগস্ট একটি সাধারণ সভায় লিখিত কমিটি গঠন করা হয়। ওই সভায় আরিফ চৌধুরীকে সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরে ১৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় মসজিদের সাড়ে ছয় শতাংশ জমি জনাব আবুকে শতাংশপ্রতি আড়াই লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হবে এবং আবুর কাছ থেকে অগ্রিম হিসেবে ৯৮০,০০০ টাকা গ্রহণ করা হয়—উক্ত মিটিংয়ে সাবেক সেক্রেটারিও উপস্থিত ছিলেন বলে তারা জানিয়েছেন।
তবে অভিযোগ অনুযায়ী, আরিফ চৌধুরী মসজিদের রেজুলেশন খালি জায়গায় নিজের নামে একক ক্ষমতার স্বাক্ষর সংযুক্ত করে গত ২১ সেপ্টেম্বর ওই ছয় শতাংশ জমি অন্যত্র বিক্রি করে দেন। কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এ সংক্রান্ত কোনো সদস্য বা স্থানীয় স্থায়ী অধিবাসীকে সঙ্গে রেখে কিংবা মিটিং ডাকিয়া না পরে তিনি একপাক্ষিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেন এবং রেজিস্ট্রি করান—যা বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার শামিল।
কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. ইউছুফ বলেন, “আমরা নতুন কমিটির রেজুলেশনে কাউকে এককভাবে মসজিদের জমি বিক্রির ক্ষমতা প্রদান করিনি। সাবেক সেক্রেটারি খালি জায়গায় নিজের স্বার্থে ক্ষমতা সংযুক্ত করেছেন, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বেআইনি।”
প্রতিবাদ সূত্রে জানা যায়, কমিটির অনেকে আরিফকে পুনরায় তিন বার সভায় ডাকার পরও তিনি উপস্থিত হননি এবং রেজিস্টেশন বই, মূল্যবান দলিলাদি ও সিলমোহর কমিটির নিকট হস্তান্তর না করে রেখেছেন। যখন আরিফকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, মাওলানা ইসমাইল তাঁকে জমি বিক্রির পরামর্শ দিয়েছেন এবং টাকা তিনি নেননি—টাকা নেওয়ার কথা বলেছেন মাওলানা ইসমাইল। এছাড়া তিনি রেজুলেশন বই ও অন্যান্য দলিল মিটিংয়ে হস্তান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়নি।
মামলার এজাহারে এবং কমিটির বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, মসজিদের ছয় শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি প্রদানের সময় সাবেক সেক্রেটারি কোনো কমিটি সদস্য বা স্থায়ী এলাকাবাসীকে সঙ্গী করেননি। দলিলে সাড়ে ছয় শতাংশ আছে কিন্তু খতিয়ানে ছয় শতাংশ আসছে। এটা সংশোধন না করেই ছয় শতাংশ জমিন বিক্রি করে দেন, এতে মসজিদ আধা শতাংশ জমিন হতে বঞ্চিত হয়। ফলে মসজিদের জমি খতিয়ানে সাড়ে ছয় শতাংশ হিসেবে থাকা সত্ত্বেও মসজিদ থেকে অর্ধশতাংশ জমি বঞ্চিত হয়েছে বলে কমিটি ধারণা করছে। মসজিদের সভাপতি মো. আবদুল লতিফ দাবি করেন, “আমরা যাকে জমি দেবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং অগ্রিমও নেওয়া হয়েছিল—সে ব্যক্তি এখনো বঞ্চিত। অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে মসজিদের জমি অন্যত্র বিক্রি করা হয়েছে। আমরা চাই, তদন্ত করে সুষ্ঠু সমাধান এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর আলীয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ইসমাইল বলেন, “সেক্রেটারি আমাকে পরামর্শ নিয়েছে—আমি কোনো সদস্য নই, তাই এককভাবে জমি হস্তান্তরের কোনও ক্ষমতা আমার নেই। আমি যদি মালেকদের জমি দিতে বলি, তবুও তিনি তা করেননি। রেজুলেশন কোথা থেকে পেয়েছেন তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।”
মামলা ও তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে—কমিটি দাবি করেছে, যাদের দ্বারা এমন জঘন্য কাজ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
 
																			 লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা :
																লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা :								 









