ঢাকা ০৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পালংখালী ইউনিয়ন জুড়ে সিএনজি,টমটম সমিতির নামে চলে চাঁ’দা আদায় নিয়ন্ত্রণ করে সমবায় অফিস

  • নুরুল বশর
  • আপডেট সময় ১০:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪
  • ৫২ বার পড়া হয়েছে

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন জুড়ে সমবায় অফিসের অনুমোদিত আছে নাম ভাঙ্গিয়ে সিএনজি টমটম পুঁজি করে বিপুল পরিমাণে চাঁদা উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট।

সিএনজি ও টমটম সমিতির নাম ব্যবহার করে ইউনিয়নের
বালুখালী, মরা আমগাছ তলা, থাইংখালী, জামতলী ও পালংখালী স্টেশনে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সহ নানা কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ ব্যস্ততম জাতীয় মহাসড়ক হওয়ায় এসব স্ট্যান্ড অতিক্রম করতে হয় প্রতিদিন প্রায় ১ থেক দেড় হাজার সিএনজি ও ৪ হাজারের অধিক টমটম থেকে।

স্ট্যান্ডগুলোতে সিন্ডিকেটের দায়িত্বে থাকা কথিত লাইনসম্যানরা লাইন পরিচালনার অজুহাতে উখিয়া-টেকনাফ মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করা সাধারণ চালকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় সিএনজি প্রতি দৈনিক ২০ থেকে ৫০ টাকা।

দৈনিক এই লাইন ফি ছাড়াও নিয়মিত স্ট্যান্ড ব্যবহার করা স্থানীয় চার শতাধিক সিএনজি চালককে দিতে হয় মাসিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা।

অনৈতিকভাবে আদায়কৃত এই অর্থ হিসেব করলে প্রতিমাসে যার পরিমাণ স্ট্যান্ড প্রতি ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকায় দাঁড়ায়। সে হিসেবে এক পালংখালী ইউনিয়নেই উঠে ১৬ লাখ টাকা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ও ঈদের মৌসুমে ছাড়িয়ে যায় ২০ লাখ টাকারও বেশি।

নিরুপায় সাধারণ সিএনজি চালকরা জানান,
প্রশাসনকে ম্যানেজ করা বাবদ সমিতির সদস্য হিসেবে এই টাকা দেওয়া তাদের জন্য বাধ্যতামূলক।

সিন্ডিকেটের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চালক বলেন, চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে হাতে থাকা সবুজ লাঠি দিয়ে কথিত লাইনসম্যানরা মারধর করে এছাড়াও স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার সুযোগ দেয় না।

উখিয়ার ২৬ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুই-তৃতীয়াংশই পালংখালীতে,যেখানে ৬ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গার বসবাস। কাঁটাতার পেরিয়ে প্রতিদিন এখানকার স্থানীয় বাজারগুলোতে নানা কারণে হাজারো রোহিঙ্গার আগমন ঘটে, যাদের ব্যবহার করতে হয় সিএনজির মতো সাধারণ গণপরিবহন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাহিনীর পরিসংখ্যানে অপরাধপ্রবণ ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত বালুখালী ৮ ইস্ট, ৮ ওয়েস্ট, ৯,১০,১১,১২, ১৫ নং ক্যাম্প এর বিভিন্ন অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সাথে এই সিএনজি সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে।

সখ্যতায় অবৈধ অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে এসব ক্যাম্প কেন্দ্রীক মাদক কারবার, অপহরণ এর মতো কাজে সক্রিয় রোহিঙ্গাচক্রের নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেটভুক্ত স্থানীয় অসাধুরা।
ক্যাম্প জুড়ে রয়েছে সিএনজি টমটম গাড়ির সিন্ডিকেট প্রতিদিন দিতে হয় ১ হাজার টাকা করে সিন্ডিকেট কে সেই টাকা আবার ভাগবাটোয়ারা হয় ক্যাম্পের প্রশাসন সহ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালুখালী ও মরাগাছ তলা এলাকায় এই সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা আব্দুর রহিম লালু নামে এক ব্যক্তি।

সমিতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে লালু বলেন, ” আমি আমার মানুষ দিয়ে টাকা তুলে সবগুলো সভাপতি মামুন চৌধুরীকে দিয়ে আসি। উনিই সব দেখভাল করেন, আমরা উনার গোলাম মাত্র।”

মামুন চৌধুরী উখিয়া অটো রিক্সা, সিএনজি, মাহেন্দ্র ও টেম্পো পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি’র দায়িত্বে আছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে সম্প্রতি প্রাসঙ্গিক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, বালুখালীতে তাঁর সমিতির কথায় কোন প্রকারের টাকা উত্তোলন করা হয় না।

করোনা মহামারীর পূর্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সিএনজির অবাধ চলাচল থাকলেও ক্যাম্প প্রশাসন ও এপিবিএনের তৎপরতায় ২০২১ সালের পর থেকে সেখানে রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ।

তবে কিছু সিএনজি ৮ এপিবিএন
নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পগুলোতে বিশেষ অনুমতি নিয়ে চললেও ১৪ এপিবিএন কোন চালক মালিককে প্রদান করেনি অনুমতি।

৮ এপিবিএনের অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, “আভ্যন্তরীণ নানা বিষয়কে মাথায় রেখে ক্যাম্প এলাকায় আমরা গণপরিবহন সিএনজি শিথিল করেছি। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপরাধ দমাতে এপিবিএন বদ্ধপরিকর এবং সে অনুযায়ী আমাদের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত আছে। ”

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হোসাইন বলেন, ” কোনভাবেই অনৈতিক চাঁদা আদায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, ড়সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নিবো।”

অন্যদিকে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ চাঁদাবাজি বা টোকেন বাণিজ্য করার সুযোগ নেই বলে দাবী করে, অপরাধী যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান শাহপুরী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

বান্দরবানে সংবাদ কর্মী আসমত হোসনকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেন পৌর বিএনপি নেতা আলী

পালংখালী ইউনিয়ন জুড়ে সিএনজি,টমটম সমিতির নামে চলে চাঁ’দা আদায় নিয়ন্ত্রণ করে সমবায় অফিস

আপডেট সময় ১০:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন জুড়ে সমবায় অফিসের অনুমোদিত আছে নাম ভাঙ্গিয়ে সিএনজি টমটম পুঁজি করে বিপুল পরিমাণে চাঁদা উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট।

সিএনজি ও টমটম সমিতির নাম ব্যবহার করে ইউনিয়নের
বালুখালী, মরা আমগাছ তলা, থাইংখালী, জামতলী ও পালংখালী স্টেশনে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প সহ নানা কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ ব্যস্ততম জাতীয় মহাসড়ক হওয়ায় এসব স্ট্যান্ড অতিক্রম করতে হয় প্রতিদিন প্রায় ১ থেক দেড় হাজার সিএনজি ও ৪ হাজারের অধিক টমটম থেকে।

স্ট্যান্ডগুলোতে সিন্ডিকেটের দায়িত্বে থাকা কথিত লাইনসম্যানরা লাইন পরিচালনার অজুহাতে উখিয়া-টেকনাফ মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করা সাধারণ চালকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় সিএনজি প্রতি দৈনিক ২০ থেকে ৫০ টাকা।

দৈনিক এই লাইন ফি ছাড়াও নিয়মিত স্ট্যান্ড ব্যবহার করা স্থানীয় চার শতাধিক সিএনজি চালককে দিতে হয় মাসিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা।

অনৈতিকভাবে আদায়কৃত এই অর্থ হিসেব করলে প্রতিমাসে যার পরিমাণ স্ট্যান্ড প্রতি ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকায় দাঁড়ায়। সে হিসেবে এক পালংখালী ইউনিয়নেই উঠে ১৬ লাখ টাকা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ও ঈদের মৌসুমে ছাড়িয়ে যায় ২০ লাখ টাকারও বেশি।

নিরুপায় সাধারণ সিএনজি চালকরা জানান,
প্রশাসনকে ম্যানেজ করা বাবদ সমিতির সদস্য হিসেবে এই টাকা দেওয়া তাদের জন্য বাধ্যতামূলক।

সিন্ডিকেটের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চালক বলেন, চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে হাতে থাকা সবুজ লাঠি দিয়ে কথিত লাইনসম্যানরা মারধর করে এছাড়াও স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার সুযোগ দেয় না।

উখিয়ার ২৬ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুই-তৃতীয়াংশই পালংখালীতে,যেখানে ৬ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গার বসবাস। কাঁটাতার পেরিয়ে প্রতিদিন এখানকার স্থানীয় বাজারগুলোতে নানা কারণে হাজারো রোহিঙ্গার আগমন ঘটে, যাদের ব্যবহার করতে হয় সিএনজির মতো সাধারণ গণপরিবহন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাহিনীর পরিসংখ্যানে অপরাধপ্রবণ ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত বালুখালী ৮ ইস্ট, ৮ ওয়েস্ট, ৯,১০,১১,১২, ১৫ নং ক্যাম্প এর বিভিন্ন অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সাথে এই সিএনজি সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে।

সখ্যতায় অবৈধ অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে এসব ক্যাম্প কেন্দ্রীক মাদক কারবার, অপহরণ এর মতো কাজে সক্রিয় রোহিঙ্গাচক্রের নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেটভুক্ত স্থানীয় অসাধুরা।
ক্যাম্প জুড়ে রয়েছে সিএনজি টমটম গাড়ির সিন্ডিকেট প্রতিদিন দিতে হয় ১ হাজার টাকা করে সিন্ডিকেট কে সেই টাকা আবার ভাগবাটোয়ারা হয় ক্যাম্পের প্রশাসন সহ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালুখালী ও মরাগাছ তলা এলাকায় এই সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা আব্দুর রহিম লালু নামে এক ব্যক্তি।

সমিতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে লালু বলেন, ” আমি আমার মানুষ দিয়ে টাকা তুলে সবগুলো সভাপতি মামুন চৌধুরীকে দিয়ে আসি। উনিই সব দেখভাল করেন, আমরা উনার গোলাম মাত্র।”

মামুন চৌধুরী উখিয়া অটো রিক্সা, সিএনজি, মাহেন্দ্র ও টেম্পো পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি’র দায়িত্বে আছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে সম্প্রতি প্রাসঙ্গিক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, বালুখালীতে তাঁর সমিতির কথায় কোন প্রকারের টাকা উত্তোলন করা হয় না।

করোনা মহামারীর পূর্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সিএনজির অবাধ চলাচল থাকলেও ক্যাম্প প্রশাসন ও এপিবিএনের তৎপরতায় ২০২১ সালের পর থেকে সেখানে রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ।

তবে কিছু সিএনজি ৮ এপিবিএন
নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পগুলোতে বিশেষ অনুমতি নিয়ে চললেও ১৪ এপিবিএন কোন চালক মালিককে প্রদান করেনি অনুমতি।

৮ এপিবিএনের অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, “আভ্যন্তরীণ নানা বিষয়কে মাথায় রেখে ক্যাম্প এলাকায় আমরা গণপরিবহন সিএনজি শিথিল করেছি। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপরাধ দমাতে এপিবিএন বদ্ধপরিকর এবং সে অনুযায়ী আমাদের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত আছে। ”

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হোসাইন বলেন, ” কোনভাবেই অনৈতিক চাঁদা আদায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, ড়সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নিবো।”

অন্যদিকে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ চাঁদাবাজি বা টোকেন বাণিজ্য করার সুযোগ নেই বলে দাবী করে, অপরাধী যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান শাহপুরী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন।