ঢাকা ১২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লামার টংঙ্গা ঝিরি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালুর দাবি

দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে ১৯৯৪ সালে বান্দরবানের লামা উপজেলায় স্থানীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় টংঙ্গা ঝিরি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাতীয়করণ না হওয়ায় ২০১৩ সালে শিক্ষকরা চাকরি ছেড়ে দিলে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এলাকায় শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যালয়টি পুনরায় চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

টংঙ্গা ঝিরি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের টংঙ্গা ঝিরি ত্রিপুরা পাড়ায় অবস্থিত। টংঙ্গা ঝিরি পাড়া, মারিয়া পাড়া, নতুন টংঙ্গা ঝিরি পাড়া, ছবিচন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া, ফুইট্টাঝিড়ি পাড়া, পন্দঝিরি পাড়া ও মাঝের বেতছড়া পাড়াসহ অন্তত সাতটি পাড়ার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল বিদ্যালয়টি।

বর্তমানে শুধু টংঙ্গা ঝিরি ত্রিপুরা পাড়ায় ১১৬টি পরিবার বসবাস করে। এসব পরিবারে কয়েক শতাধিক শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার উপযোগী হলেও অল্পসংখ্যক শিশু তিন কিলোমিটার দূরের কম্পোনিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পাঠ গ্রহণ করছে। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা ও দীর্ঘ পথ হওয়ায় অধিকাংশ শিশু নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তর শেষ না করেই পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির চার কক্ষবিশিষ্ট একটি জরাজীর্ণ পাকা ভবন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কক্ষের দরজা-জানালা ভাঙা হলেও কক্ষগুলো পরিচ্ছন্ন। এসব কক্ষে স্থানীয় বাসিন্দারা ধান, চাল ও শুকনো খাবার সংরক্ষণ করছেন। অপর দুটি কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছে। একটি কক্ষের খোলা জানালা দিয়ে দেখা যায়, সেখানে কাঠের তৈরি চার স্তরের মাচায় মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয় ভবনটি বর্তমানে পাড়াবাসীর মালামাল সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি স্থানীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠার পর প্রধান শিক্ষকসহ ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ নভেম্বর এলজিইডির অর্থায়নে বিদ্যালয়টির পাকা ভবন নির্মিত হয়, যা উদ্বোধন করেন তৎকালীন লামা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কিশালয় চক্রবর্তী। সে সময় শিক্ষকেরা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে সামান্য সম্মানী এবং সরকারি তহবিল থেকে নির্ধারিত মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা পেতেন।

২০১৩ সালে বান্দরবানের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলেও টংঙ্গা ঝিরি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এতে হতাশ হয়ে শিক্ষকরা চাকরি ছেড়ে দিলে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। কেন বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়নি বা তৎকালীন শিক্ষকরা কারা ছিলেন—এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

টংঙ্গা ঝিরি ত্রিপুরা পাড়ার কারবারি বিরেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমাদের পাড়ায় ১১৬টি পরিবার রয়েছে। আশপাশের আরও ছয়টি পাড়ার শিশুদের পড়াশোনার একমাত্র ভরসা ছিল এই বিদ্যালয়টি। জাতীয়করণ না হওয়ায় শিক্ষকরা চলে গেলে আমরা নিজেরা বেতন দিতে না পারায় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়।

একই পাড়ার বাসিন্দা এরোমনি ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যালয়টি প্রায় ১২ বছর ধরে বন্ধ। এখন আমাদের শিশুদের তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কোম্পানিয়া ও সরই এলাকায় পাঠাতে হয়। দুর্গম পথের কারণে খরচও বাড়ছে। অনেক অভিভাবক শিশুদের পাঠাতে না পারায় তারা পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে।

তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য রায়হেল ত্রিপুরা বলেন, এই এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। যাতায়াত ও সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। আমরা পাড়াবাসী মিলেই বিদ্যালয়ের ভবন ও মাঠের জন্য জমি দিয়েছিলাম। ভবিষ্যতে বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু হবে এই আশায় এখনো ওই জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করিনি। আমরা সরকারি সহায়তায় বিদ্যালয়টি পুনরায় চালুর দাবি জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, টংঙ্গা ঝিরি পাড়ার বাসিন্দারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয়েছে এবং আমরা সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবো।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

লামার টংঙ্গা ঝিরি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালুর দাবি

আপডেট সময় ০৪:২০:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে ১৯৯৪ সালে বান্দরবানের লামা উপজেলায় স্থানীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় টংঙ্গা ঝিরি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাতীয়করণ না হওয়ায় ২০১৩ সালে শিক্ষকরা চাকরি ছেড়ে দিলে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এলাকায় শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যালয়টি পুনরায় চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

টংঙ্গা ঝিরি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের টংঙ্গা ঝিরি ত্রিপুরা পাড়ায় অবস্থিত। টংঙ্গা ঝিরি পাড়া, মারিয়া পাড়া, নতুন টংঙ্গা ঝিরি পাড়া, ছবিচন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া, ফুইট্টাঝিড়ি পাড়া, পন্দঝিরি পাড়া ও মাঝের বেতছড়া পাড়াসহ অন্তত সাতটি পাড়ার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল বিদ্যালয়টি।

বর্তমানে শুধু টংঙ্গা ঝিরি ত্রিপুরা পাড়ায় ১১৬টি পরিবার বসবাস করে। এসব পরিবারে কয়েক শতাধিক শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার উপযোগী হলেও অল্পসংখ্যক শিশু তিন কিলোমিটার দূরের কম্পোনিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পাঠ গ্রহণ করছে। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা ও দীর্ঘ পথ হওয়ায় অধিকাংশ শিশু নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তর শেষ না করেই পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির চার কক্ষবিশিষ্ট একটি জরাজীর্ণ পাকা ভবন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কক্ষের দরজা-জানালা ভাঙা হলেও কক্ষগুলো পরিচ্ছন্ন। এসব কক্ষে স্থানীয় বাসিন্দারা ধান, চাল ও শুকনো খাবার সংরক্ষণ করছেন। অপর দুটি কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছে। একটি কক্ষের খোলা জানালা দিয়ে দেখা যায়, সেখানে কাঠের তৈরি চার স্তরের মাচায় মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয় ভবনটি বর্তমানে পাড়াবাসীর মালামাল সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি স্থানীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠার পর প্রধান শিক্ষকসহ ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ নভেম্বর এলজিইডির অর্থায়নে বিদ্যালয়টির পাকা ভবন নির্মিত হয়, যা উদ্বোধন করেন তৎকালীন লামা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কিশালয় চক্রবর্তী। সে সময় শিক্ষকেরা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে সামান্য সম্মানী এবং সরকারি তহবিল থেকে নির্ধারিত মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা পেতেন।

২০১৩ সালে বান্দরবানের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলেও টংঙ্গা ঝিরি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এতে হতাশ হয়ে শিক্ষকরা চাকরি ছেড়ে দিলে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। কেন বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়নি বা তৎকালীন শিক্ষকরা কারা ছিলেন—এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

টংঙ্গা ঝিরি ত্রিপুরা পাড়ার কারবারি বিরেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমাদের পাড়ায় ১১৬টি পরিবার রয়েছে। আশপাশের আরও ছয়টি পাড়ার শিশুদের পড়াশোনার একমাত্র ভরসা ছিল এই বিদ্যালয়টি। জাতীয়করণ না হওয়ায় শিক্ষকরা চলে গেলে আমরা নিজেরা বেতন দিতে না পারায় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়।

একই পাড়ার বাসিন্দা এরোমনি ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যালয়টি প্রায় ১২ বছর ধরে বন্ধ। এখন আমাদের শিশুদের তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কোম্পানিয়া ও সরই এলাকায় পাঠাতে হয়। দুর্গম পথের কারণে খরচও বাড়ছে। অনেক অভিভাবক শিশুদের পাঠাতে না পারায় তারা পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে।

তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য রায়হেল ত্রিপুরা বলেন, এই এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। যাতায়াত ও সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। আমরা পাড়াবাসী মিলেই বিদ্যালয়ের ভবন ও মাঠের জন্য জমি দিয়েছিলাম। ভবিষ্যতে বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু হবে এই আশায় এখনো ওই জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করিনি। আমরা সরকারি সহায়তায় বিদ্যালয়টি পুনরায় চালুর দাবি জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, টংঙ্গা ঝিরি পাড়ার বাসিন্দারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয়েছে এবং আমরা সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবো।