ঢাকা ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগামীকাল থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেবেন প্রাথমিক শিক্ষকরা, তবে আন্দোলন স্থগিত নয়

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আগামীকাল রোববার থেকে আবারও বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের নেতাদের হঠাৎ ভিন্ন জেলায় বদলি আদেশ হওয়ার পরই প্রাথমিক শিক্ষকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মো. শামছুদ্দিন মাসুদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, “আমরা রোববার থেকে পরীক্ষা নেব। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান, তাদের ক্ষতি আমরা চাই না। দুই দিন পিছিয়ে গেলেও শিক্ষাজীবন অচল হবে না।” তিনি জানান, পরীক্ষার কর্মসূচি আওতামুক্ত থাকলেও আন্দোলনের অন্যান্য কর্মসূচি চলমান থাকবে। শিক্ষক নেতা মাহবুবর রহমানও বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের থামানো যাবে না। বদলি চাকরিরই অংশ, কিন্তু কর্মবিরতি চলবে এবং অন্যান্য কর্মসূচি পরীক্ষার পর অব্যাহত থাকবে।”

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য তিন দফা দাবি আদায়ে গত ২৭ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হয়। এরপর ১ ডিসেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন এবং ২ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের এমন কর্মসূচিতে সারাদেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটে। কোথাও কোথাও উপজেলা প্রশাসন ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় পরীক্ষা নেওয়া হলেও তাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরিবিধি ও ফৌজদারি আইনে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এর পরও শিক্ষকরা কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শাস্তিমূলক বদলির পথে হাঁটে। বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া পাঁচ শীর্ষ নেতাসহ আন্দোলনে যুক্ত ৪২ শিক্ষককে রীতি ভেঙে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪ ডিসেম্বরের আদেশে এই বদলি অনুমোদন দেওয়া হয়। আন্দোলনে যুক্ত নেতারা সবাই পার্শ্ববর্তী জেলায় বদলি হওয়ায় নিজ জেলায় থাকার সুযোগ তাঁদের থাকছে না।

এরপরই প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ এবং বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের যৌথ এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।” তবে সংগঠনের আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, যা নিয়ে তাঁদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আগামীকাল থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেবেন প্রাথমিক শিক্ষকরা, তবে আন্দোলন স্থগিত নয়

আপডেট সময় ০২:১২:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আগামীকাল রোববার থেকে আবারও বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের নেতাদের হঠাৎ ভিন্ন জেলায় বদলি আদেশ হওয়ার পরই প্রাথমিক শিক্ষকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মো. শামছুদ্দিন মাসুদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, “আমরা রোববার থেকে পরীক্ষা নেব। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান, তাদের ক্ষতি আমরা চাই না। দুই দিন পিছিয়ে গেলেও শিক্ষাজীবন অচল হবে না।” তিনি জানান, পরীক্ষার কর্মসূচি আওতামুক্ত থাকলেও আন্দোলনের অন্যান্য কর্মসূচি চলমান থাকবে। শিক্ষক নেতা মাহবুবর রহমানও বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের থামানো যাবে না। বদলি চাকরিরই অংশ, কিন্তু কর্মবিরতি চলবে এবং অন্যান্য কর্মসূচি পরীক্ষার পর অব্যাহত থাকবে।”

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য তিন দফা দাবি আদায়ে গত ২৭ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হয়। এরপর ১ ডিসেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন এবং ২ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের এমন কর্মসূচিতে সারাদেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটে। কোথাও কোথাও উপজেলা প্রশাসন ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় পরীক্ষা নেওয়া হলেও তাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরিবিধি ও ফৌজদারি আইনে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এর পরও শিক্ষকরা কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শাস্তিমূলক বদলির পথে হাঁটে। বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া পাঁচ শীর্ষ নেতাসহ আন্দোলনে যুক্ত ৪২ শিক্ষককে রীতি ভেঙে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪ ডিসেম্বরের আদেশে এই বদলি অনুমোদন দেওয়া হয়। আন্দোলনে যুক্ত নেতারা সবাই পার্শ্ববর্তী জেলায় বদলি হওয়ায় নিজ জেলায় থাকার সুযোগ তাঁদের থাকছে না।

এরপরই প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ এবং বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের যৌথ এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।” তবে সংগঠনের আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, যা নিয়ে তাঁদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের।