ঢাকা ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী গৃহবধূ শাহাজাদী

ইউটিউবে মাশরুম চাষের ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সিংসাড়া গ্রামের গৃহবধূ শাহাজাদী এখন মাশরুম চাষের মাধ্যমে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। দীর্ঘ সময় স্বামীর চাকুরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকার পর দুই বছর আগে গ্রামে স্থায়ী হয়ে তিনি এই উদ্যোগ নেন। স্বামীর একক আয়ের সঙ্গে নিজেকেও স্বাবলম্বী করার ভাবনা থেকে ২০২৩ সালে তিনি মাশরুম চাষ শুরু করেন। তাঁর স্বপ্ন একজন সফল মাশরুম চাষী হওয়া এবং স্থানীয়ভাবে এই চাষে আগ্রহী নতুনদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করা।

মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন মো. বাবলুর রহমানের স্ত্রী শাহাজাদী। আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় বর্তমানে তাঁর ৬ ফুট বাই ৯ ফুট আয়তনের মাশরুম প্রকল্প রয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা। তাঁর প্রজেক্টে এখন ৪০০টি স্পূন রয়েছে এবং প্রতিদিন ৩-৪ কেজি মাশরুম উৎপাদিত হচ্ছে, যা তিনি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। প্রচুর ক্রেতা চাহিদা থাকলেও উৎপাদন কম হওয়ায় তিনি চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না। বর্তমানে সব খরচ বাদ দিয়ে শাহাজাদী মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা এবং বছরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করেন। এই আয়ে তিনি নিজেকে সফল মাশরুম চাষী মনে করেন এবং তিনি একাই চাষ সংক্রান্ত সব কাজ সামলান।

মাশরুম চাষী শাহাজাদী বলেন, “গ্রামে এমন কাজকে অনেকে সহজে মেনে নেননি, তারপরও কারো কথায় কর্ণপাত না করে আমি এগিয়ে গিয়েছি। আমি এ পর্যন্ত সরকারি কোনো অনুদান বা কোনো ট্রেনিং করার সুযোগ পাইনি, তাই বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।” তিনি আরও বলেন, আত্রাইয়ে নতুন কেউ মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে তিনি তাঁদের হাতেকলমে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করবেন, যাতে স্থানীয় মাশরুমের চাহিদা পূরণ হয়। তিনি সফলতার পেছনে সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

মাশরুম চাষ খুবই সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, “আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাশরুম উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। আমরা উদ্যোক্তা শাহাজাদীকে একটি চাষ ঘর, একটি উৎপাদন ঘর এবং প্রয়োজনীয় সকল আনুষঙ্গিক বিষয় শিখিয়ে দিয়েছি।” তিনি জানান, মাশরুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ স্বাস্থ্যের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখে। তিনি আরও বলেন, স্বল্প পুঁজিতে ভালো মুনাফা অর্জনের জন্য মাশরুম চাষের বিকল্প নেই। নতুন কোনো উদ্যোক্তা মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা করা হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী গৃহবধূ শাহাজাদী

আপডেট সময় ০৬:১৪:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

ইউটিউবে মাশরুম চাষের ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সিংসাড়া গ্রামের গৃহবধূ শাহাজাদী এখন মাশরুম চাষের মাধ্যমে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। দীর্ঘ সময় স্বামীর চাকুরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকার পর দুই বছর আগে গ্রামে স্থায়ী হয়ে তিনি এই উদ্যোগ নেন। স্বামীর একক আয়ের সঙ্গে নিজেকেও স্বাবলম্বী করার ভাবনা থেকে ২০২৩ সালে তিনি মাশরুম চাষ শুরু করেন। তাঁর স্বপ্ন একজন সফল মাশরুম চাষী হওয়া এবং স্থানীয়ভাবে এই চাষে আগ্রহী নতুনদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করা।

মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন মো. বাবলুর রহমানের স্ত্রী শাহাজাদী। আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় বর্তমানে তাঁর ৬ ফুট বাই ৯ ফুট আয়তনের মাশরুম প্রকল্প রয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা। তাঁর প্রজেক্টে এখন ৪০০টি স্পূন রয়েছে এবং প্রতিদিন ৩-৪ কেজি মাশরুম উৎপাদিত হচ্ছে, যা তিনি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। প্রচুর ক্রেতা চাহিদা থাকলেও উৎপাদন কম হওয়ায় তিনি চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না। বর্তমানে সব খরচ বাদ দিয়ে শাহাজাদী মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা এবং বছরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করেন। এই আয়ে তিনি নিজেকে সফল মাশরুম চাষী মনে করেন এবং তিনি একাই চাষ সংক্রান্ত সব কাজ সামলান।

মাশরুম চাষী শাহাজাদী বলেন, “গ্রামে এমন কাজকে অনেকে সহজে মেনে নেননি, তারপরও কারো কথায় কর্ণপাত না করে আমি এগিয়ে গিয়েছি। আমি এ পর্যন্ত সরকারি কোনো অনুদান বা কোনো ট্রেনিং করার সুযোগ পাইনি, তাই বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।” তিনি আরও বলেন, আত্রাইয়ে নতুন কেউ মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে তিনি তাঁদের হাতেকলমে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করবেন, যাতে স্থানীয় মাশরুমের চাহিদা পূরণ হয়। তিনি সফলতার পেছনে সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

মাশরুম চাষ খুবই সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, “আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাশরুম উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। আমরা উদ্যোক্তা শাহাজাদীকে একটি চাষ ঘর, একটি উৎপাদন ঘর এবং প্রয়োজনীয় সকল আনুষঙ্গিক বিষয় শিখিয়ে দিয়েছি।” তিনি জানান, মাশরুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ স্বাস্থ্যের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখে। তিনি আরও বলেন, স্বল্প পুঁজিতে ভালো মুনাফা অর্জনের জন্য মাশরুম চাষের বিকল্প নেই। নতুন কোনো উদ্যোক্তা মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা করা হবে।