ঢাকা ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের নির্ভরতার প্রতীক ট্যুরিস্ট পুলিশ

কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তাদের কার্যক্রম অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা নেটিজেনদের নজর কেড়েছে। সৈকতের বালিয়াড়ি ও হোটেল মোটেল জোন নিরাপদ রাখতে এই কর্মকর্তা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছেন, যার সুফল পাচ্ছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি পর্যটকদের নিরাপত্তা, অপরাধ দমন, পরিবেশ রক্ষা ও সার্বিক সেবা নিশ্চিত করতে ধারাবাহিক সাফল্য দেখিয়েছেন, যা কক্সবাজারের পর্যটন খাতে নতুন আস্থা তৈরি করেছে। পর্যটকদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও চোর-ছিনতাইকারী, প্রতারক ও গলাকাটা অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

তিনি দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই পর্যটকের ছিনতাই হওয়া দশ হাজার ৫০০ টাকা ও আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স উদ্ধার করে ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়ে আলোচনায় আসেন। একইভাবে রাশিয়া থেকে আসা পর্যটক মনিকা কবিরের হারানো হ্যান্ডব্যাগ আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, সতেরোটি ক্যামেরা জব্দ এবং চুরি হওয়া ক্যামেরা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধারের ঘটনা ট্যুরিস্ট পুলিশের দ্রুত সাড়া দেওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণ। পরিবেশ রক্ষায়ও তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। মারমেইড বিচ রিসোর্টের অবৈধ সম্প্রসারণ উচ্ছেদ, সৈকতে নিয়মিত বিচ ক্লিনিং কর্মসূচি, ময়লা ফেলতে বিশেষ ঝুড়ি স্থাপনসহ পরিবেশবান্ধব সৈকত গঠনে তিনি নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন।

প্রতারণামূলক অপহরণের নাটক উদ্ঘাটন, প্রেমিক যুগল উদ্ধার, পর্যটকের গোসলের ভিডিও গোপনে ধারণ করে ছড়ানোয় অভিযুক্ত যুবক গ্রেপ্তার, লাইটহাউস এলাকায় অসামাজিক কার্যকলাপ দমনে অভিযানসহ একের পর এক পদক্ষেপে পর্যটকদের আস্থা বাড়ছে। লাইটহাউস এলাকায় অবৈধ সুড়ঙ্গপথ চিহ্নিত করে তেরো জন নারী-পুরুষকে আটক করাও ছিল তাঁর আলোচিত অভিযানগুলোর অন্যতম। পর্যটকদের চলাচলের পথ বন্ধ করে অবৈধ গাড়ি পার্কিং এর বিরুদ্ধেও নিয়মিত অভিযান করা হয়। তাঁর উদ্যোগে সৈকতে পচা মাছ (ফিশফ্রাই) বিক্রিরোধে অভিযান, বিভিন্ন স্পা সেন্টারে অনিয়মবিরোধী ব্যবস্থা এবং টিকটক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। এছাড়া, পর্যটক সহায়তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগে সেবার মান দৃশ্যমান হয়েছে। জিনিয়া হোটেল ও কক্স ভ্যালি হোটেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, হারানো অন্ধ শিশুকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, পর্যটকদের মূল্যবান সামগ্রী উদ্ধার, নারী অপহরণ মামলার ভিকটিমকে উদ্ধার, ইয়াবাসহ মাদককারবারি আটক, তরুণ-তরুণী উদ্ধারসহ নানা কার্যক্রম কক্সবাজারে নিরাপত্তার চিত্র বদলে দিয়েছে।

এক বছরে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাফল্যের তালিকাও দীর্ঘ। এ সময় ত্রিশ জন ছিনতাইকারী, ছত্রিশ জন ভাসমান অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং একশো পঁচাত্তরটি সিআর মামলা নিবন্ধিত হয়েছে। হারানো দেড়শো শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে ছে, যার মধ্যে একশো সাতাশটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া, ছাব্বিশটি চুরি হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার, নয় জন ইভটিজার গ্রেপ্তার, উনিশটি মৃতদেহ উদ্ধার ও পনেরো জন জীবিত ব্যক্তিকে পরিবারের কাছে ফেরানো হয়েছে। এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, “পর্যটক হয়রানির দিন শেষ। পর্যটকদের সঙ্গে কেউ নয়ছয় করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।” তিনি বলেন, চলতি পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে পর্যটকরা যাতে নিরাপদ ভ্রমণ শেষে নির্বিঘ্নে নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের নির্ভরতার প্রতীক ট্যুরিস্ট পুলিশ

আপডেট সময় ০৫:৫০:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তাদের কার্যক্রম অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা নেটিজেনদের নজর কেড়েছে। সৈকতের বালিয়াড়ি ও হোটেল মোটেল জোন নিরাপদ রাখতে এই কর্মকর্তা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছেন, যার সুফল পাচ্ছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি পর্যটকদের নিরাপত্তা, অপরাধ দমন, পরিবেশ রক্ষা ও সার্বিক সেবা নিশ্চিত করতে ধারাবাহিক সাফল্য দেখিয়েছেন, যা কক্সবাজারের পর্যটন খাতে নতুন আস্থা তৈরি করেছে। পর্যটকদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও চোর-ছিনতাইকারী, প্রতারক ও গলাকাটা অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

তিনি দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই পর্যটকের ছিনতাই হওয়া দশ হাজার ৫০০ টাকা ও আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স উদ্ধার করে ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়ে আলোচনায় আসেন। একইভাবে রাশিয়া থেকে আসা পর্যটক মনিকা কবিরের হারানো হ্যান্ডব্যাগ আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, সতেরোটি ক্যামেরা জব্দ এবং চুরি হওয়া ক্যামেরা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধারের ঘটনা ট্যুরিস্ট পুলিশের দ্রুত সাড়া দেওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণ। পরিবেশ রক্ষায়ও তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। মারমেইড বিচ রিসোর্টের অবৈধ সম্প্রসারণ উচ্ছেদ, সৈকতে নিয়মিত বিচ ক্লিনিং কর্মসূচি, ময়লা ফেলতে বিশেষ ঝুড়ি স্থাপনসহ পরিবেশবান্ধব সৈকত গঠনে তিনি নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন।

প্রতারণামূলক অপহরণের নাটক উদ্ঘাটন, প্রেমিক যুগল উদ্ধার, পর্যটকের গোসলের ভিডিও গোপনে ধারণ করে ছড়ানোয় অভিযুক্ত যুবক গ্রেপ্তার, লাইটহাউস এলাকায় অসামাজিক কার্যকলাপ দমনে অভিযানসহ একের পর এক পদক্ষেপে পর্যটকদের আস্থা বাড়ছে। লাইটহাউস এলাকায় অবৈধ সুড়ঙ্গপথ চিহ্নিত করে তেরো জন নারী-পুরুষকে আটক করাও ছিল তাঁর আলোচিত অভিযানগুলোর অন্যতম। পর্যটকদের চলাচলের পথ বন্ধ করে অবৈধ গাড়ি পার্কিং এর বিরুদ্ধেও নিয়মিত অভিযান করা হয়। তাঁর উদ্যোগে সৈকতে পচা মাছ (ফিশফ্রাই) বিক্রিরোধে অভিযান, বিভিন্ন স্পা সেন্টারে অনিয়মবিরোধী ব্যবস্থা এবং টিকটক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। এছাড়া, পর্যটক সহায়তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগে সেবার মান দৃশ্যমান হয়েছে। জিনিয়া হোটেল ও কক্স ভ্যালি হোটেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, হারানো অন্ধ শিশুকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, পর্যটকদের মূল্যবান সামগ্রী উদ্ধার, নারী অপহরণ মামলার ভিকটিমকে উদ্ধার, ইয়াবাসহ মাদককারবারি আটক, তরুণ-তরুণী উদ্ধারসহ নানা কার্যক্রম কক্সবাজারে নিরাপত্তার চিত্র বদলে দিয়েছে।

এক বছরে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাফল্যের তালিকাও দীর্ঘ। এ সময় ত্রিশ জন ছিনতাইকারী, ছত্রিশ জন ভাসমান অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং একশো পঁচাত্তরটি সিআর মামলা নিবন্ধিত হয়েছে। হারানো দেড়শো শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে ছে, যার মধ্যে একশো সাতাশটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া, ছাব্বিশটি চুরি হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার, নয় জন ইভটিজার গ্রেপ্তার, উনিশটি মৃতদেহ উদ্ধার ও পনেরো জন জীবিত ব্যক্তিকে পরিবারের কাছে ফেরানো হয়েছে। এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, “পর্যটক হয়রানির দিন শেষ। পর্যটকদের সঙ্গে কেউ নয়ছয় করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।” তিনি বলেন, চলতি পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে পর্যটকরা যাতে নিরাপদ ভ্রমণ শেষে নির্বিঘ্নে নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।