ঢাকা ০১:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
টিকটকে উস্কানিমূলক ভিডিও : পার্বতীপুরের আ’লীগ নেত্রী আটক বালু-পাথর লুট, অবৈধ অস্ত্র ও চাঁদাবাজি বন্ধে জিরো টলারেন্স : সুনামগঞ্জের নবাগত পুলিশ সুপার বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় গাজীপুরের পূবাইলে বিএনপি’র দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ নবাগত পুলিশ সুপারের সঙ্গে নওগাঁর সাংবাদিকদের মতবিনিময় রামগঞ্জে জমি দখলে বাধা দেওয়ায় ভাতিজাদের হামলায় চাচার মৃত্যু ঘিওর বালিয়াখোড়া গ্রামের মনিদাস পাড়াকে ঢাক ঢোল পাড়া হিসেবে চেনে প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটনের মুনাফায় ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, আর্থিক সূচকে অসাধারণ সাফল্য বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বাগবাটী ইউনিয়ন বিএনপির দোয়া মাহফিল ছাত্র আন্দোলনের মুখে আল-আমিনের হত্যাকারী গ্রেপ্তার গাজীপুরের গাছায় খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

ঘিওর বালিয়াখোড়া গ্রামের মনিদাস পাড়াকে ঢাক ঢোল পাড়া হিসেবে চেনে

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া গ্রামের মনিদাশ পাড়াকে সবাই ঢাক ঢোল পাড়া হিসেবেই চেনে। দীর্ঘদিন পরে হলেও মুনিদাশ পাড়া এখন জেগে উঠেছে নব উদ্যমে।

ঢাক, ঢোল, ডুগি আর তবলা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সবাই। বাড়ির গৃহবধূদের যেন দম ফেলার সময় নেই। তাদের সময় কাটছে ডুগি তবলার বিড়া তৈরি করার কাজে। ঘর গৃহস্থালির কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা যুক্ত হয়ে পড়েন নানান কাজে। দিন রাত বিরামহীনভাবে চলে তাদের এই কাজ।

এ বিষয়ে মনিদাশ পাড়ার স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, পূর্ব পুরুষদের এই পেশা ধরে রাখতে তিনি ৩ যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাক ঢোল তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত। তিনি আরও বলেন, মনিদাশ পাড়ায় প্রায় ৩৫টি পরিবারের শতাধিক ব্যক্তি এই ঢাক ঢোল বানানোর কাজে জড়িত। কেউ পৈতৃক পেশা হিসেবে আবার কেউ দিন মজুর হিসেবে এই কাজ করে থাকেন। এতে খরচ বাদে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা রোজগার হয়।

এ পাড়ার আরেক প্রবীণ ব্যক্তি সাধন চন্দ্র দাস ( ৫৬ ) বলেন, শ্রীকান্ত বাবু নামের এক অভিজ্ঞ বাজনাদার গুরুর কাছ থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের কয়েকজন এই কাজটি শিখেছিলেন। পরবর্তীতে অনেকেই এই কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। মোটামুটি পাড়ার সবাই এই কাজ করেই সংসার চালান।

এখানে পাইকারি এবং খুচরা বাদ্য যন্ত্র বিক্রি করা হয়। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বড় বড় বাদ্যযন্ত্রের শোরুম থেকে এখানে অর্ডার আসে। এমনকি বিদেশ থেকেও বাদ্য যন্ত্রের অর্ডার আসে এখানে।

সরেজমিনে বালিয়াখোড়ার মনিদাস পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির উঠোনে ঢোল তৈরির পর রঙের প্রলেপ দিচ্ছিলেন গৌর চন্দ্র দাস ও মাধব চন্দ্র দাস। পাশেই কাপড় আর সুতা দিয়ে ঢোলের বিড়া বানানোর কাজে ব্যস্ত গৃহবধূ সবিতা রানী দাস। আশপাশের বাড়িগুলো থেকেও আসছে টুং টাং শব্দ।

গৌর চন্দ্র দাস ও মাধব চন্দ্র দাস জানান, আমরা প্রায় ৫০ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে জড়িত। বাদ্য যন্ত্র তৈরিতে আমরা আম, নিম, শিমুল কাঠ ব্যবহার করে থাকি। এখানে আমরা ঢাক, ঢোল, ডুগি, তবলা, হাত বাওয়া, নাল ও বাচ্চাদের ঢোল তৈরি করে থাকি। এখানে কাঠ ও আকারভেদে বাদ্য যন্ত্রের দাম বিভিন্ন রকমের।

স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল আওয়াল খান বলেন, বংশ পরম্পরায় বালিয়াখোড়া গ্রামের মনি দাস পাড়ার লোকজন বাদ্য যন্ত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তাদের তৈরিকৃত বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা দেশজুড়ে। এ ছাড়া এ পাড়ার বাসিন্দারা বাদ্যযন্ত্র তৈরির পাশাপাশি তাদের বাদ্য বাজানোর সুনামও রয়েছে।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাশিতা তুল ইসলাম বলেন, বালিয়াখোড়ার মনি দাস সম্প্রদায়ের লোকজনের এই ঢাক ঢোলেই ঘুরে গেছে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা। তাদের শৈল্পিক হাতের কাজের পরিচিতি পেয়েছে দেশজুড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা এমনকি দেশের বাইরেও ঘিওরের মনিদাশ পাড়ার অনেক সুনাম আছে। পরিশ্রম বেশি তবে লাভ খুব বেশিনা জানালেন ঢাক ঢোল পাড়ার বাসিন্দারা। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এই শিল্পটি আরও সমৃদ্ধ হবে এমনটিই প্রত্যাশা তাদের।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

টিকটকে উস্কানিমূলক ভিডিও : পার্বতীপুরের আ’লীগ নেত্রী আটক

ঘিওর বালিয়াখোড়া গ্রামের মনিদাস পাড়াকে ঢাক ঢোল পাড়া হিসেবে চেনে

আপডেট সময় ১২:০১:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া গ্রামের মনিদাশ পাড়াকে সবাই ঢাক ঢোল পাড়া হিসেবেই চেনে। দীর্ঘদিন পরে হলেও মুনিদাশ পাড়া এখন জেগে উঠেছে নব উদ্যমে।

ঢাক, ঢোল, ডুগি আর তবলা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সবাই। বাড়ির গৃহবধূদের যেন দম ফেলার সময় নেই। তাদের সময় কাটছে ডুগি তবলার বিড়া তৈরি করার কাজে। ঘর গৃহস্থালির কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা যুক্ত হয়ে পড়েন নানান কাজে। দিন রাত বিরামহীনভাবে চলে তাদের এই কাজ।

এ বিষয়ে মনিদাশ পাড়ার স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, পূর্ব পুরুষদের এই পেশা ধরে রাখতে তিনি ৩ যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাক ঢোল তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত। তিনি আরও বলেন, মনিদাশ পাড়ায় প্রায় ৩৫টি পরিবারের শতাধিক ব্যক্তি এই ঢাক ঢোল বানানোর কাজে জড়িত। কেউ পৈতৃক পেশা হিসেবে আবার কেউ দিন মজুর হিসেবে এই কাজ করে থাকেন। এতে খরচ বাদে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা রোজগার হয়।

এ পাড়ার আরেক প্রবীণ ব্যক্তি সাধন চন্দ্র দাস ( ৫৬ ) বলেন, শ্রীকান্ত বাবু নামের এক অভিজ্ঞ বাজনাদার গুরুর কাছ থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের কয়েকজন এই কাজটি শিখেছিলেন। পরবর্তীতে অনেকেই এই কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। মোটামুটি পাড়ার সবাই এই কাজ করেই সংসার চালান।

এখানে পাইকারি এবং খুচরা বাদ্য যন্ত্র বিক্রি করা হয়। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বড় বড় বাদ্যযন্ত্রের শোরুম থেকে এখানে অর্ডার আসে। এমনকি বিদেশ থেকেও বাদ্য যন্ত্রের অর্ডার আসে এখানে।

সরেজমিনে বালিয়াখোড়ার মনিদাস পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির উঠোনে ঢোল তৈরির পর রঙের প্রলেপ দিচ্ছিলেন গৌর চন্দ্র দাস ও মাধব চন্দ্র দাস। পাশেই কাপড় আর সুতা দিয়ে ঢোলের বিড়া বানানোর কাজে ব্যস্ত গৃহবধূ সবিতা রানী দাস। আশপাশের বাড়িগুলো থেকেও আসছে টুং টাং শব্দ।

গৌর চন্দ্র দাস ও মাধব চন্দ্র দাস জানান, আমরা প্রায় ৫০ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে জড়িত। বাদ্য যন্ত্র তৈরিতে আমরা আম, নিম, শিমুল কাঠ ব্যবহার করে থাকি। এখানে আমরা ঢাক, ঢোল, ডুগি, তবলা, হাত বাওয়া, নাল ও বাচ্চাদের ঢোল তৈরি করে থাকি। এখানে কাঠ ও আকারভেদে বাদ্য যন্ত্রের দাম বিভিন্ন রকমের।

স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল আওয়াল খান বলেন, বংশ পরম্পরায় বালিয়াখোড়া গ্রামের মনি দাস পাড়ার লোকজন বাদ্য যন্ত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তাদের তৈরিকৃত বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা দেশজুড়ে। এ ছাড়া এ পাড়ার বাসিন্দারা বাদ্যযন্ত্র তৈরির পাশাপাশি তাদের বাদ্য বাজানোর সুনামও রয়েছে।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাশিতা তুল ইসলাম বলেন, বালিয়াখোড়ার মনি দাস সম্প্রদায়ের লোকজনের এই ঢাক ঢোলেই ঘুরে গেছে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা। তাদের শৈল্পিক হাতের কাজের পরিচিতি পেয়েছে দেশজুড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা এমনকি দেশের বাইরেও ঘিওরের মনিদাশ পাড়ার অনেক সুনাম আছে। পরিশ্রম বেশি তবে লাভ খুব বেশিনা জানালেন ঢাক ঢোল পাড়ার বাসিন্দারা। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এই শিল্পটি আরও সমৃদ্ধ হবে এমনটিই প্রত্যাশা তাদের।