ঢাকা ০৯:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শীতের আগমনে লালপুরে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনে গাছিরা ব্যস্ত

নাটোরে শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। পদ্মা, বড়াল, চন্দ্রা নদনদীর তীরে অবস্থিত এই জনপদে এখন এক ভিন্ন কর্মচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। শীতের বার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গে গাছিদের মধ্যে খেজুরের রস সংগ্রহ পুরোদমে শুরু হয়েছে। সেই রসের সাথে মৌমাছিরাও গুনগুনিয়ে সঙ্গ দিচ্ছে তাঁদের কাজে। আরে মরা গ্রামের শহিদুল বলেন, তিনি প্রতিদিন প্রায় ষাট থেকে সত্তরটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন এবং পুরো তিন মাসের মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ কেজি গুড় পাওয়া যায়। জয়কৃষ্ট পুর গ্রামের প্রবীণ গাছি তফের মন্ডল জানান, তিনি চল্লিশ বছর ধরে রস সংগ্রহ করছেন এবং এবার দুইশতটি খেজুর গাছ প্রস্তুত করেছেন। সপ্তাহখানেক হলো রস নামতে শুরু হয়েছে, এখন প্রতিদিন প্রায় বিশ কেজি গুড় উৎপাদন হচ্ছে। আর বড় মাটি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, এখন বিশেষ কৌশলে কাটা অংশ থেকে রস নামছে; তবে পৌষ মাস থেকে পূর্ণমাত্রায় রস পাওয়া যাবে।

গাছিরা জানান, গোপালপুর, লালপুর, ওয়ালিয়া সহ বিভিন্ন বাজারে তাঁরা পাটালি গুড় বিক্রি করেন। এই গুড়গুলো রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। একসময় অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ এখন লালপুরের অর্থনীতির অংশ হয়ে উঠেছে। গাছ ঝোড়া ও রস সংগ্রহকে ঘিরে জনপদে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বছর লালপুরে প্রায় এক লাখ আটত্রিশ হাজার পাঁচশত আশিটি খেজুর গাছের রস থেকে দুই হাজার পাঁচশত মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার বলেন, রেললাইনের ধারে, ক্ষেতের আইলেও পতিত জমিতে বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ শুধু ঐতিহ্য নয়, লালপুরের অর্থনীতিরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীতের মৌসুমে প্রায় দুই হাজার পরিবার এই খেজুর গাছ কেন্দ্রিক কাজের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি আরও জানান, খেজুর রসে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গাছিদের রস সংগ্রহের পাত্র অবশ্যই ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

বার্তা বিভাগ

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

শীতের আগমনে লালপুরে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনে গাছিরা ব্যস্ত

আপডেট সময় ০২:২৮:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

নাটোরে শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। পদ্মা, বড়াল, চন্দ্রা নদনদীর তীরে অবস্থিত এই জনপদে এখন এক ভিন্ন কর্মচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। শীতের বার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গে গাছিদের মধ্যে খেজুরের রস সংগ্রহ পুরোদমে শুরু হয়েছে। সেই রসের সাথে মৌমাছিরাও গুনগুনিয়ে সঙ্গ দিচ্ছে তাঁদের কাজে। আরে মরা গ্রামের শহিদুল বলেন, তিনি প্রতিদিন প্রায় ষাট থেকে সত্তরটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন এবং পুরো তিন মাসের মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ কেজি গুড় পাওয়া যায়। জয়কৃষ্ট পুর গ্রামের প্রবীণ গাছি তফের মন্ডল জানান, তিনি চল্লিশ বছর ধরে রস সংগ্রহ করছেন এবং এবার দুইশতটি খেজুর গাছ প্রস্তুত করেছেন। সপ্তাহখানেক হলো রস নামতে শুরু হয়েছে, এখন প্রতিদিন প্রায় বিশ কেজি গুড় উৎপাদন হচ্ছে। আর বড় মাটি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, এখন বিশেষ কৌশলে কাটা অংশ থেকে রস নামছে; তবে পৌষ মাস থেকে পূর্ণমাত্রায় রস পাওয়া যাবে।

গাছিরা জানান, গোপালপুর, লালপুর, ওয়ালিয়া সহ বিভিন্ন বাজারে তাঁরা পাটালি গুড় বিক্রি করেন। এই গুড়গুলো রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। একসময় অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ এখন লালপুরের অর্থনীতির অংশ হয়ে উঠেছে। গাছ ঝোড়া ও রস সংগ্রহকে ঘিরে জনপদে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বছর লালপুরে প্রায় এক লাখ আটত্রিশ হাজার পাঁচশত আশিটি খেজুর গাছের রস থেকে দুই হাজার পাঁচশত মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার বলেন, রেললাইনের ধারে, ক্ষেতের আইলেও পতিত জমিতে বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ শুধু ঐতিহ্য নয়, লালপুরের অর্থনীতিরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীতের মৌসুমে প্রায় দুই হাজার পরিবার এই খেজুর গাছ কেন্দ্রিক কাজের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি আরও জানান, খেজুর রসে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গাছিদের রস সংগ্রহের পাত্র অবশ্যই ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।