ঢাকা ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তেমন দায়িত্ব পেলে মন্দ হয় না!

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন?

নববানী নিউজ ডেস্ক

সামাজিক চুক্তির পথ দেখিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা একদা বললেন। কী বললেন? প্রকৃতির রাজ্যে সবলদের আধিপত্য রুখতে হবে। দুর্বলেরা যে অসহায় হয়ে পড়ছে! সমাজ গড়ার আবেদনকারী! হ্যাঁ, সমাজবিজ্ঞানীরাই তাই শ্রেণি সংগ্রামের লড়াই ফলত শুরু করেছিলেন। মানুষ অতঃপর সামাজিক জীব হতে চাইলো। কিন্তু, খুবই অর্থবহ মতবাদ রেখে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল একদিন বলে বসলেন, মানুষ মুলত রাজনৈতিক প্রাণি।

এদিকে জীবনের নাটাই জানান দিয়েই যাচ্ছিল। সে নাটাই দাবী করে, রাজনীতি, রাজনীতিক, রাষ্ট্র ও সরকারের যোগসূত্রিতা সমন্বিত এবং সামষ্টিক কেন্দ্রীভূত উদ্রেকের ফলাফলে রাজনৈতিক অভিভাবকত্বকে বিজয়ী করায়। খুব সহজ করে বললে, সামাজিক ক্রমবিকাশের মুল চালিকা শক্তি হিসাবে ‘ক্ষমতা’ দৃশ্যমান হয়ে জনস্বার্থ সংরক্ষণের উপলক্ষ্য হয়ে রাজনীতির সীমানায় বিচরণ করে। বারটান্ড রাসেল তাই খানিকটা জিতে যায়। যখন তিনি, ক্ষমতাকেই সামাজিক ক্রমবিকাশের চালকাশক্তি বলে রায় দিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও রাসেল-এর মতবাদকে গুরুত্ব দিতেন। তিনি বুঝতে পারতেন, একটি জাতির ভাগ্যান্নয়নে তথা জনগোষ্ঠির আর্থ -সামাজিক পটভূমিকে সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনীতে বন্দি করতে চাইলে রাজনৈতিক দলের আদর্শিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে পথ পরিক্রমাকে নির্ধারণ করতে হবে। অধুনায়, অনেকেই বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দীপ্ত উচ্চারণের কথা! কিন্তু, কী সেই সোনার বাংলা? কি বলতে চাইতেন তিনি? তাঁর দার্শনিক মতবাদ্গুলো নিয়ে সেই আওয়ামী লীগ কততুকু গবেষণারত সত্তায় সিক্ত হয়ে সারাটা দিন সঁপে দেয়ার মানসিকতায় আছে? অথবা, গোষ্ঠিগত জায়গা থেকে একজন বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখাপড়াটা বাড়ানো যাচ্ছে কিনা! এই তো সামনেই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। ডিসেম্বর, ২০২২-এর মধ্যেই তা করা হবে বলে সূত্র দাবী করছে।

শাসকশ্রেণি কিংবা রাজনৈতিক বিদগ্ধজন কর্তৃক জনশ্রেণিকে প্রথমত নাগরিক শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার মধ্য দিয়ে যদি কোন দেশ তেমন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সূচনা করতে পারে— তবেই সেই অঞ্চলে রাজনৈতিক দলের জন্ম হওয়া উচিত। অর্থাৎ, মানুষকে নাগরিক করতে পারা এবং তাদের অধিকার প্রদানের সংকল্পের বাস্তবঘনিষ্ঠ চিত্রনাট্য রাজনৈতিক জমিনে অনুপস্থিত থাকলে কোন রাজনৈতিক দলেরই জন্ম হওয়া উচিত নয়। হ্যাঁ, হতে পারে। যদি সেই রাজনৈতিক দল তার দেশের মানুষগুলোকে নাগরিক করবার অভিপ্রায়ে রাষ্ট্রের সংবিধান, জাতীয়তা, শাসনরীতি সম্যক পুরোপুরি ধারণা দিয়ে তাদেরকে কার্যত শিক্ষিত করতে পারে। অতি অবশ্যই রাষ্ট্রের অর্থনীতি কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, কতদূর যেতে পারব তা অবহিত করার নামই রাজনীতি। আবার চিরন্তন কৃষ্টি কে ধরে রেখে নিজেদের উপযোগি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবার জন্য রাজনৈতিক দলের জন্ম হওয়াই উচিত। কিন্তু, বাংলাদেশের বাস্তবতায় চল্লিশ-বিয়াল্লিশটি রাজনৈতিক দল কিসের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, এমন প্রশ্নের অমিমাংসিত উত্তরে হতাশ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর আছে ?

যেমন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য দলটির নাম ‘আওয়ামী লীগ’ করা হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক হয় নৌকা। এই সেই রাজনৈতিক দল, যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং ক্ষমতায় গিয়ে সরকার গঠন করার উদ্দেশ্যে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়। দলটি সমষ্টিগত কল্যাণ কিংবা তাদের সমর্থকদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু প্রস্তাবিত নীতি ও কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐকমত্য পোষণ করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। অর্থবহ জনতার মঞ্চ তৈরি করে বলতে পেরেছিল, আওয়ামী লীগ গণস্বার্থে ধারাবাহিকভাবে জননেতাদেরকেও পেয়েছে। মওলানা ভাসানীকে ছাপিয়ে যেয়ে একজন বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছিল। জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এ এইচ এম কামারুজ্জুমানান, মনসুর আলী হয়ে জিল্লুর রহমান, আব্দুল জলিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হয়ে এক অদম্য শেখ হাসিনা। কিন্তু, সারাদেশে রাজনৈতিকমনস্ক তাঁবুতে আলাপ আছে। সেই আলাপের চূড়ান্ত রূপ হল, আগামী দিনগুলোয় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে।

একজন শেখ হাসিনা আর কত দিবেন? এই প্রশ্ন এখন দেশবাসীর। নিজ দলের নেতাকর্মীদের তো রয়েছেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, গেল একযুগে অন্তত গেল দুইটি সম্মেলনে দলের সভানেত্রী হয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, এবার আমাকে মুক্তি দিন। কাউন্সিল আবহের সেই সম্মেলনে আসা প্রতিটি নেতাকর্মী তখন সমস্বরে চিৎকার করে বলেছেন, ‘না, না, না! আপনাকেই সভানেত্রী হয়ে থাকতে হবে!’

শেখ হাসিনা তাই দলিয় গণতন্ত্র প্রদর্শনেও নিজের জাতকে চিনিয়েছেন। উদাহরণ দেখাতে সচেষ্ট হয়েছেন। এক গবেষণায় দেখা যায়, মোট চারবার করে গেল। ১৪ বছরে বিভিন্ন সময়ে শিশু-কিশোরদের বলেছেন, আগামীদিনের নেতৃত্ব তোমাদেরকে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী হতে হবে! নিশ্চয়ই তিনি পারিবারিক রাজনীতির উত্তরসূরীর ধারাবাহিকতার প্রথাই আইন হয়ে থাকতে হবে, তা প্রত্যাশা করেন নি। এখানেই তার নেতৃত্ব বড় হয়ে যায়। যদিও নিজের যোগ্য পুত্র, কন্যা কিংবা ভাগ্নেদের পুরোপুরি সামর্থ্য রয়েছে রাজনৈতিক দল, সরকার পরিচালনা করার—কিন্তু, শীর্ষ নেতৃত্ব নির্ধারিত করে এগোতে হবে, তেমন মানসিকতায় ভর করে শেখ হাসিনা চলেন না, টের পাওয়া যায়।

অন্যদিকে আরেকটি আলোচনাও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে থাকে। প্রতিবারেই আলোচনার খোরাকে থাকে, কে হবেন সাধারণ সম্পাদক? হালে বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে দলিয়ভাবে এসিস্ট করবার জন্য যোগ্য লোকটা কে হবেন?

ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের হয়ে অতীতে যারা দলের সভাপতি হয়েছেন তারা হলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, মহিউদ্দীন আহমেদ (ভারপ্রাপ্ত), আব্দুল মালেক উকিল ও শেখ হাসিনা। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তাজউদ্দীন আহমেদ, জিল্লুর রহমান, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, জোহরা তাজউদ্দীন (আহবায়ক), আব্দুল জলিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

আসন্ন ২২-তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কাউন্সিলে পুনরায় দলের সভানেত্রী হিসাবে শেখ হাসিনা ছাড়া কোন বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হবে তা স্বপ্নেও কেহ চিন্তা করতে পারছে না, পারবে না। সাধারন সম্পাদক পদে বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের। যিনি ২০১০ সাল থেকে বিবেক শ্রেণির প্রতিনিধি হিসাবে দলের মধ্যে ইমেজধারী সত্তা হয়ে তার পুনপ্রত্যাবর্তন হয়। তার শারীরিক অবস্থা আর আগের মত করে নেই। উপরন্ত তার আপন ভাইয়ের লাগামহীন অসংলগ্ন ধারাবাহিক বক্তব্য-বিবৃতি দলের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বিনষ্টে প্রভাব রেখেছে বলে অনুমিত হয়। এছাড়াও ওবায়দুল কাদের তার স্বকীয় রাজনৈতিক বিশিষ্টতাকে ধরে রাখতে পেরেছেন, তেমন যুক্তির সংখ্যা অপ্রতুল বলেই মনে হচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি নিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষের আগ্রহ রয়েছে। দলটি হতে ইতিবাচক রাজনীতির প্রত্যাশায় থাকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত। দেশের প্রতিটি নাগরিকের চাওয়া থাকে, একজন যোগ্য সাধারণ সম্পাদক আসুক। আজকের বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনা সফল। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রুপের নেতৃত্ব প্রশ্নে সাধারণ সম্পাদকই ভুমিকা রাখবেন তা ধরে নেয়াই শ্রেয়। দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরকে অবশ্য গুরুত্ব দিয়ে দলিয় গণতন্ত্রের অনুশীলনটা ধারালো হোক, সকলেই্ তেমন কিছুও প্রত্যাশা করে।

২২তম সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হতে পারেন, তেমন বেশ কিছু নাম সংবাদমাধ্যমে আসছে। যার মধ্যে ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গির কবীর নানক, আবদুর রহমান, জাফরউল্লাহ, বাহাউদ্দীন নাসিম, দীপু মনির নাম শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক পর্যায়ের বিদগ্ধজনেরা বলছেন, এই দায়িত্ব পেতে হলে ধার ও ভারের প্রাসঙ্গিক বাস্তবতা রয়েছে। জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামান তনয় ক্লিন ইমেজের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তেমন দায়িত্ব পেলে মন্দ হয় না!

সাংগঠনিক দিক বিচার করলে সজ্জন চরিত্রের ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক কতটুকু এমন বড় দলের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে ইমেজের কথা চিন্তা করলে আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও দীপুমণি আদৃত নাম নয়, তা স্বীকৃত। বাহাউদ্দীন নাসিম, ম্যাচিওর হতে পেরেছেন কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ! আবার নিজ সংসদীয় এলাকাতেই অপাংক্তেয় হয়ে ওঠার ধারাবাহিক অভ্যাসে একজন জাফরউল্লাহকে দায়িত্ব দেয়ার কথা হয়তো খোদ শেখ হাসিনাই চিন্তা করবেন।

প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পিতার পদাংক অনুসরণ করেই মৃত্যুর কিছুদিন আগে বলে গিয়েছিলেন, আমাদের রক্ত বেঈমানি করেনি, করবে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একজন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার জন্য ওই সেই জাতীয় চারনেতা ও তাদের ছেলেরা কথা রাখতে জানে, বিশ্বাসের মর্যাদা দেয় ও দায়িত্ব নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অপশক্তিদের মোকাবেলা করে। শেখ হাসিনা জাতীয় চার নেতাদের উত্তরাধিকারদের বিশ্বাস করেন, আস্থায় রাখেন, তা প্রচলিত আছে। তেমন বিবেচনায় রাজনৈতিক পর্যায়ের বিদগ্ধশ্রেণির সাথেই সুর মেলাতে স্বস্তিতে থাকব। আমি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকেই এগিয়ে রাখবো। তার মাঝে নেতৃত্বের মৌলিক গুনাবলিগুলোর সব দিকই আছে। প্রায় পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশে তার নামে নেতিবাচক কোন গল্প পর্যন্ত রচিত হয় নাই। কিন্তু, তিনি নিজে দায়িত্ব নিতে চান কিনা, তা জানা নেই। তবে দেশের জন্য, দলের জন্য এই ব্যক্তিসত্তার ঝুঁকি নেয়া উচিত।

আন্তর্জাতিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিচয় ও পরিচালনা পদ্ধতিতে কিছু মিল থাকলেও অনেকক্ষেত্রে ভিন্নতাও দেখা যায়। ফলশ্রুতিতে পররাষ্ট্রনীতি দাঁড় করাতে একটি দেশের দলভিত্তিক আয়োজন একেক রকম হয়। আওয়ামী লীগ টানা প্রায় ১৪ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। একটা সময় তারা কিংবা বাংলাদেশ পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের সাথে শুধুমাত্র সম্পর্ক ধরে রাখত। এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতি দাঁড় করাতে পারছে। দলিয় ভাবে সাধারণ সম্পদককেও বৈশ্বিক দূতিয়ালীতে সফল হতে হয়। তেমন যোগ্যতার কথা চিন্তা করলেও আওয়ামী লীগকে সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বগুড়া জেলার কাহালু থানা বার্ষিক পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তেমন দায়িত্ব পেলে মন্দ হয় না!

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন?

আপডেট সময় ০৬:৫৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২

সামাজিক চুক্তির পথ দেখিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা একদা বললেন। কী বললেন? প্রকৃতির রাজ্যে সবলদের আধিপত্য রুখতে হবে। দুর্বলেরা যে অসহায় হয়ে পড়ছে! সমাজ গড়ার আবেদনকারী! হ্যাঁ, সমাজবিজ্ঞানীরাই তাই শ্রেণি সংগ্রামের লড়াই ফলত শুরু করেছিলেন। মানুষ অতঃপর সামাজিক জীব হতে চাইলো। কিন্তু, খুবই অর্থবহ মতবাদ রেখে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল একদিন বলে বসলেন, মানুষ মুলত রাজনৈতিক প্রাণি।

এদিকে জীবনের নাটাই জানান দিয়েই যাচ্ছিল। সে নাটাই দাবী করে, রাজনীতি, রাজনীতিক, রাষ্ট্র ও সরকারের যোগসূত্রিতা সমন্বিত এবং সামষ্টিক কেন্দ্রীভূত উদ্রেকের ফলাফলে রাজনৈতিক অভিভাবকত্বকে বিজয়ী করায়। খুব সহজ করে বললে, সামাজিক ক্রমবিকাশের মুল চালিকা শক্তি হিসাবে ‘ক্ষমতা’ দৃশ্যমান হয়ে জনস্বার্থ সংরক্ষণের উপলক্ষ্য হয়ে রাজনীতির সীমানায় বিচরণ করে। বারটান্ড রাসেল তাই খানিকটা জিতে যায়। যখন তিনি, ক্ষমতাকেই সামাজিক ক্রমবিকাশের চালকাশক্তি বলে রায় দিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও রাসেল-এর মতবাদকে গুরুত্ব দিতেন। তিনি বুঝতে পারতেন, একটি জাতির ভাগ্যান্নয়নে তথা জনগোষ্ঠির আর্থ -সামাজিক পটভূমিকে সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনীতে বন্দি করতে চাইলে রাজনৈতিক দলের আদর্শিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে পথ পরিক্রমাকে নির্ধারণ করতে হবে। অধুনায়, অনেকেই বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দীপ্ত উচ্চারণের কথা! কিন্তু, কী সেই সোনার বাংলা? কি বলতে চাইতেন তিনি? তাঁর দার্শনিক মতবাদ্গুলো নিয়ে সেই আওয়ামী লীগ কততুকু গবেষণারত সত্তায় সিক্ত হয়ে সারাটা দিন সঁপে দেয়ার মানসিকতায় আছে? অথবা, গোষ্ঠিগত জায়গা থেকে একজন বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখাপড়াটা বাড়ানো যাচ্ছে কিনা! এই তো সামনেই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। ডিসেম্বর, ২০২২-এর মধ্যেই তা করা হবে বলে সূত্র দাবী করছে।

শাসকশ্রেণি কিংবা রাজনৈতিক বিদগ্ধজন কর্তৃক জনশ্রেণিকে প্রথমত নাগরিক শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার মধ্য দিয়ে যদি কোন দেশ তেমন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সূচনা করতে পারে— তবেই সেই অঞ্চলে রাজনৈতিক দলের জন্ম হওয়া উচিত। অর্থাৎ, মানুষকে নাগরিক করতে পারা এবং তাদের অধিকার প্রদানের সংকল্পের বাস্তবঘনিষ্ঠ চিত্রনাট্য রাজনৈতিক জমিনে অনুপস্থিত থাকলে কোন রাজনৈতিক দলেরই জন্ম হওয়া উচিত নয়। হ্যাঁ, হতে পারে। যদি সেই রাজনৈতিক দল তার দেশের মানুষগুলোকে নাগরিক করবার অভিপ্রায়ে রাষ্ট্রের সংবিধান, জাতীয়তা, শাসনরীতি সম্যক পুরোপুরি ধারণা দিয়ে তাদেরকে কার্যত শিক্ষিত করতে পারে। অতি অবশ্যই রাষ্ট্রের অর্থনীতি কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, কতদূর যেতে পারব তা অবহিত করার নামই রাজনীতি। আবার চিরন্তন কৃষ্টি কে ধরে রেখে নিজেদের উপযোগি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবার জন্য রাজনৈতিক দলের জন্ম হওয়াই উচিত। কিন্তু, বাংলাদেশের বাস্তবতায় চল্লিশ-বিয়াল্লিশটি রাজনৈতিক দল কিসের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, এমন প্রশ্নের অমিমাংসিত উত্তরে হতাশ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর আছে ?

যেমন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য দলটির নাম ‘আওয়ামী লীগ’ করা হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক হয় নৌকা। এই সেই রাজনৈতিক দল, যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং ক্ষমতায় গিয়ে সরকার গঠন করার উদ্দেশ্যে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়। দলটি সমষ্টিগত কল্যাণ কিংবা তাদের সমর্থকদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু প্রস্তাবিত নীতি ও কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐকমত্য পোষণ করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। অর্থবহ জনতার মঞ্চ তৈরি করে বলতে পেরেছিল, আওয়ামী লীগ গণস্বার্থে ধারাবাহিকভাবে জননেতাদেরকেও পেয়েছে। মওলানা ভাসানীকে ছাপিয়ে যেয়ে একজন বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছিল। জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এ এইচ এম কামারুজ্জুমানান, মনসুর আলী হয়ে জিল্লুর রহমান, আব্দুল জলিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হয়ে এক অদম্য শেখ হাসিনা। কিন্তু, সারাদেশে রাজনৈতিকমনস্ক তাঁবুতে আলাপ আছে। সেই আলাপের চূড়ান্ত রূপ হল, আগামী দিনগুলোয় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে।

একজন শেখ হাসিনা আর কত দিবেন? এই প্রশ্ন এখন দেশবাসীর। নিজ দলের নেতাকর্মীদের তো রয়েছেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, গেল একযুগে অন্তত গেল দুইটি সম্মেলনে দলের সভানেত্রী হয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, এবার আমাকে মুক্তি দিন। কাউন্সিল আবহের সেই সম্মেলনে আসা প্রতিটি নেতাকর্মী তখন সমস্বরে চিৎকার করে বলেছেন, ‘না, না, না! আপনাকেই সভানেত্রী হয়ে থাকতে হবে!’

শেখ হাসিনা তাই দলিয় গণতন্ত্র প্রদর্শনেও নিজের জাতকে চিনিয়েছেন। উদাহরণ দেখাতে সচেষ্ট হয়েছেন। এক গবেষণায় দেখা যায়, মোট চারবার করে গেল। ১৪ বছরে বিভিন্ন সময়ে শিশু-কিশোরদের বলেছেন, আগামীদিনের নেতৃত্ব তোমাদেরকে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী হতে হবে! নিশ্চয়ই তিনি পারিবারিক রাজনীতির উত্তরসূরীর ধারাবাহিকতার প্রথাই আইন হয়ে থাকতে হবে, তা প্রত্যাশা করেন নি। এখানেই তার নেতৃত্ব বড় হয়ে যায়। যদিও নিজের যোগ্য পুত্র, কন্যা কিংবা ভাগ্নেদের পুরোপুরি সামর্থ্য রয়েছে রাজনৈতিক দল, সরকার পরিচালনা করার—কিন্তু, শীর্ষ নেতৃত্ব নির্ধারিত করে এগোতে হবে, তেমন মানসিকতায় ভর করে শেখ হাসিনা চলেন না, টের পাওয়া যায়।

অন্যদিকে আরেকটি আলোচনাও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে থাকে। প্রতিবারেই আলোচনার খোরাকে থাকে, কে হবেন সাধারণ সম্পাদক? হালে বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে দলিয়ভাবে এসিস্ট করবার জন্য যোগ্য লোকটা কে হবেন?

ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের হয়ে অতীতে যারা দলের সভাপতি হয়েছেন তারা হলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, মহিউদ্দীন আহমেদ (ভারপ্রাপ্ত), আব্দুল মালেক উকিল ও শেখ হাসিনা। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তাজউদ্দীন আহমেদ, জিল্লুর রহমান, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, জোহরা তাজউদ্দীন (আহবায়ক), আব্দুল জলিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

আসন্ন ২২-তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কাউন্সিলে পুনরায় দলের সভানেত্রী হিসাবে শেখ হাসিনা ছাড়া কোন বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হবে তা স্বপ্নেও কেহ চিন্তা করতে পারছে না, পারবে না। সাধারন সম্পাদক পদে বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের। যিনি ২০১০ সাল থেকে বিবেক শ্রেণির প্রতিনিধি হিসাবে দলের মধ্যে ইমেজধারী সত্তা হয়ে তার পুনপ্রত্যাবর্তন হয়। তার শারীরিক অবস্থা আর আগের মত করে নেই। উপরন্ত তার আপন ভাইয়ের লাগামহীন অসংলগ্ন ধারাবাহিক বক্তব্য-বিবৃতি দলের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বিনষ্টে প্রভাব রেখেছে বলে অনুমিত হয়। এছাড়াও ওবায়দুল কাদের তার স্বকীয় রাজনৈতিক বিশিষ্টতাকে ধরে রাখতে পেরেছেন, তেমন যুক্তির সংখ্যা অপ্রতুল বলেই মনে হচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি নিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষের আগ্রহ রয়েছে। দলটি হতে ইতিবাচক রাজনীতির প্রত্যাশায় থাকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত। দেশের প্রতিটি নাগরিকের চাওয়া থাকে, একজন যোগ্য সাধারণ সম্পাদক আসুক। আজকের বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনা সফল। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রুপের নেতৃত্ব প্রশ্নে সাধারণ সম্পাদকই ভুমিকা রাখবেন তা ধরে নেয়াই শ্রেয়। দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরকে অবশ্য গুরুত্ব দিয়ে দলিয় গণতন্ত্রের অনুশীলনটা ধারালো হোক, সকলেই্ তেমন কিছুও প্রত্যাশা করে।

২২তম সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হতে পারেন, তেমন বেশ কিছু নাম সংবাদমাধ্যমে আসছে। যার মধ্যে ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গির কবীর নানক, আবদুর রহমান, জাফরউল্লাহ, বাহাউদ্দীন নাসিম, দীপু মনির নাম শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক পর্যায়ের বিদগ্ধজনেরা বলছেন, এই দায়িত্ব পেতে হলে ধার ও ভারের প্রাসঙ্গিক বাস্তবতা রয়েছে। জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামান তনয় ক্লিন ইমেজের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তেমন দায়িত্ব পেলে মন্দ হয় না!

সাংগঠনিক দিক বিচার করলে সজ্জন চরিত্রের ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক কতটুকু এমন বড় দলের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে ইমেজের কথা চিন্তা করলে আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও দীপুমণি আদৃত নাম নয়, তা স্বীকৃত। বাহাউদ্দীন নাসিম, ম্যাচিওর হতে পেরেছেন কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ! আবার নিজ সংসদীয় এলাকাতেই অপাংক্তেয় হয়ে ওঠার ধারাবাহিক অভ্যাসে একজন জাফরউল্লাহকে দায়িত্ব দেয়ার কথা হয়তো খোদ শেখ হাসিনাই চিন্তা করবেন।

প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পিতার পদাংক অনুসরণ করেই মৃত্যুর কিছুদিন আগে বলে গিয়েছিলেন, আমাদের রক্ত বেঈমানি করেনি, করবে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একজন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার জন্য ওই সেই জাতীয় চারনেতা ও তাদের ছেলেরা কথা রাখতে জানে, বিশ্বাসের মর্যাদা দেয় ও দায়িত্ব নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অপশক্তিদের মোকাবেলা করে। শেখ হাসিনা জাতীয় চার নেতাদের উত্তরাধিকারদের বিশ্বাস করেন, আস্থায় রাখেন, তা প্রচলিত আছে। তেমন বিবেচনায় রাজনৈতিক পর্যায়ের বিদগ্ধশ্রেণির সাথেই সুর মেলাতে স্বস্তিতে থাকব। আমি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকেই এগিয়ে রাখবো। তার মাঝে নেতৃত্বের মৌলিক গুনাবলিগুলোর সব দিকই আছে। প্রায় পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশে তার নামে নেতিবাচক কোন গল্প পর্যন্ত রচিত হয় নাই। কিন্তু, তিনি নিজে দায়িত্ব নিতে চান কিনা, তা জানা নেই। তবে দেশের জন্য, দলের জন্য এই ব্যক্তিসত্তার ঝুঁকি নেয়া উচিত।

আন্তর্জাতিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিচয় ও পরিচালনা পদ্ধতিতে কিছু মিল থাকলেও অনেকক্ষেত্রে ভিন্নতাও দেখা যায়। ফলশ্রুতিতে পররাষ্ট্রনীতি দাঁড় করাতে একটি দেশের দলভিত্তিক আয়োজন একেক রকম হয়। আওয়ামী লীগ টানা প্রায় ১৪ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। একটা সময় তারা কিংবা বাংলাদেশ পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের সাথে শুধুমাত্র সম্পর্ক ধরে রাখত। এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতি দাঁড় করাতে পারছে। দলিয় ভাবে সাধারণ সম্পদককেও বৈশ্বিক দূতিয়ালীতে সফল হতে হয়। তেমন যোগ্যতার কথা চিন্তা করলেও আওয়ামী লীগকে সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে হবে।