
ফরিদপুরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নানা নামের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতাল। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে একাধিক দালাল চক্র। এসব চক্রের একটির মূল হোতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন নাসিমা নামের এক নারী। সরকারি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা মিনারা (৩৫) নামের এক রোগী দালাল নাসিমার প্রলোভনে পড়ে এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
মিনারার স্বামী আশরাফ আলী জানান, আমার স্ত্রী জরায়ুজনিত সমস্যায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তখনই দালাল চক্রের সদস্য নাসিমা তাকে যমুনা ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়, যেখানে অল্প টাকায় উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেয়। এরপর গত ৭ মে যমুনা ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে জরায়ুর অপারেশন করানো হয়।
দালাল চক্রের মূল হোতা নাসিমা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন, আমি ডাক্তার শ্যামল স্যারের সহকারী। রোগীর জরায়ুর অপারেশন ১৫ হাজার টাকায় করানো হয়।” অপারেশনের ২০ থেকে ২৫ দিন পর একই হাসপাতালে মিনারাকে পিত্তথলি অপারেশন করা হয়। কিন্তু সেই অপারেশনই হয়ে ওঠে তার জীবনের কাল। অভিযোগ উঠেছে, ওই অপারেশনের সময় চিকিৎসক মিনারার পেটের ভেতর একটি নাড়ি ছিদ্র করে ফেলেন। এতে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতি হতে থাকে।
সাংবাদিকরা যখন যমুনা ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে গিয়ে নাসিমার সঙ্গে কথা বলেন, তখন তিনি নানা অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করেন। নিজেকে ‘সবজান্তা সমসের’ মতো উপস্থাপন করে বলেন, ডাক্তার শ্যামল স্যার ডায়াগনস্টি সেন্টারে ওটি করেন সেখানে আমি উপস্থিত থাকি। প্রতিটি ওটিতে তিনি ৩০০ টাকা করে পান।
নাসিমা আরও দাবি করেন, তিনি প্যারা মেডিক্যাল ও বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির অধীনে কাজ করেন এবং পরিবার পরিকল্পনা ক্যাম্পিং পরিচালনা করেন। এক পর্যায়ে প্রশ্নের মুখে সাংবাদিকদের উপর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং এসআই কে ফোন করে সাংবাদিকদের মানহানির মামলার হুমকি দেন।
যমুনা হাসপাতাল মালিকপক্ষের হাফিজুর রহমান মাস্টার স্বীকার করেন, ওই রোগী মেডিকেলে ভর্তি ছিল, দালালের মাধ্যমে আমাদের হাসপাতালে আসে, ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখে জরায়ুর সমস্যা, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অপারেশনের জন্য সিরিয়ালে ছিল, ওখানে তো ভোগান্তি সময়ের ব্যাপার, ডাক্তার শ্যামল দেখে ডেট দিয়ে অপারেশন করে দিয়েছে, রোগী মোটামুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। খাদ্যনালি ছিদ্রের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা তো ডাক্তার না, আমি হলো অন্য জগতের, আমি হলো পলিটিক্স করি।
তিনি আরো জানান, সালথা উপজেলা ইউসুফ দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ছিলেন আপাতত তিনি সাসপেন্ড আছেন। পরবর্তীতে জানা গেছে, তিনি একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তিনি সাসপেন্ড আছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এমন অসংখ্য নাসিমা ও দালাল চক্রের কারণেই ফরিদপুরে দিন দিন বাড়ছে অসহায় রোগীদের সাথে প্রতারণা। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকলে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। এদের কারণে সরকারি হাসপাতালের মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা প্রার্থী ব্যক্তিরা, এছাড়াও কিছু গুণগত ভালো মানের বেসরকারি হাসপাতাল ও বদনামের ভাগীদার হচ্ছেন।
এ সময়ে স্থানীয়রা জানান, ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন যদি ঠিকমতো প্রাইভেট হাসপাতাল গুলির তদারকি করে তাহলে সাধারণ জনগণ কিছুটা হলেই এই হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
স্টাফ রিপোর্টার : 



















