
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। গত এক মাস ধরে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বয়লার ও টারবাইন সিস্টেমে জটিল যান্ত্রিক সমস্যা ধরা পড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়ে কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জাতীয় গ্রিডে বড়পুকুরিয়া থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় লোডশেডিং বেড়েছে।
কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ত্রুটিযুক্ত যন্ত্রাংশ দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে বলে মেরামতের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মেরামতের কাজে গাফিলতি ও ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা দ্রুত মেরামত সম্পন্ন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন।
প্রতি বছর মেরামতের খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও প্রথম ও তৃতীয় ইউনিট প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে পড়ে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। কেন্দ্রটি থেকে উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে বড়পুকুরিয়া থেকে কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎনির্ভর শিল্পকারখানার উৎপাদনেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক জানান, ২০১৮ সালে দ্বিতীয় ইউনিটটি অধিক ব্যয়ের কারণে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও বাস্তবে উৎপাদন হয় মাত্র ৫০ মেগাওয়াট। তৃতীয় ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৫ মেগাওয়াট হলেও সেখান থেকেও উৎপাদন হতো ৬০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করে চীনা কোম্পানি সিএমসি ও এসএমএমসি, আর তৃতীয় ইউনিট নির্মাণ করে চীনের হারবিন কোম্পানি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে এসব ইউনিট প্রায়ই অচল হয়ে পড়ছে, ফলে মেরামতের ব্যয়ও ক্রমেই বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, তৃতীয় ইউনিট মেরামতে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বছরের পর বছর বিপুল অর্থ ব্যয় করেও বাস্তবিক উন্নতি কতটা হচ্ছে, তা পুনর্বিবেচনা জরুরি।
কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী জানান, “ত্রুটির কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদেশি প্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় মেরামতের কাজ চলছে, তবে কাজ সম্পন্নে কিছু সময় লাগবে।”
কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তিনটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে একটি সম্পূর্ণ বন্ধ এবং বাকি দুটি সীমিত উৎপাদনেও বন্ধ হয়ে গেছে।
দিনাজপুর প্রতিনিধি : 



















