ঢাকা ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক: হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:০৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

আবুল মনছুর, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :

বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক রুইজাতীয় মাছের প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীকে ‘মৎস্য হেরিটেজ এলাকা’ ঘোষণা করেছে সরকার। এ বিষয়ে ৫ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে রুইজাতীয় মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতকরণ এবং গাঙ্গেয় ডলফিনের আবাসস্থল সংরক্ষণের লক্ষ্যে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণার আওতায় খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ও মানিকছড়ি উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী উপজেলা ও পাঁচলাইশ থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী এবং নদীতীরবর্তী ৯৩ হাজার ৬১২টি দাগভুক্ত মোট ২৩ হাজার ৪২২ একর এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, এপ্রিল থেকে জুন মাসে হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে রুইজাতীয় মাছের প্রজনন মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ নিষিক্ত ডিম পাওয়া যায়। এ কারণে হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, হালদা নদী থেকে কোনো প্রকার মাছ ও জলজ প্রাণী ধরা বা শিকার করা যাবে না। মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ে নিষিক্ত ডিম আহরণের অনুমতি থাকবে। নদীর প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী কোনো কাজ, ভূমি বা পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন, নদীর বাঁক কেটে সোজা করা এবং শিল্পকারখানা বা বসতবাড়ির বর্জ্য নদীতে ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়া প্রজনন মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি-জুলাই) হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৭টি খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নদী ও সংযোগ খালের ওপর নতুন কোনো রাবার ড্যাম বা কংক্রিট ড্যাম নির্মাণ করা যাবে না। নদীতে ভারী ইঞ্জিনচালিত নৌযান (যেমন, বালুবাহী নৌকা ও ড্রেজার) চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। নদীর শাখা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও ইজারা দেওয়া যাবে না।
তাছাড়া, নদীর অববাহিকা অঞ্চলে তামাক চাষ, ক্ষতিকর কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার এবং ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হালদা নদীতে কোনো গবেষণা বা পানি উত্তোলন প্রকল্প গ্রহণের আগে ‘হালদা নদী মৎস্য হেরিটেজ তদারকি কমিটি’র অনুমতি নিতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, পরিবেশগত ও প্রতিবেশগত ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সময়ের প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় শর্তাবলি সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারবে। একই সঙ্গে, ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর জারিকৃত পূর্ববর্তী প্রজ্ঞাপনটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

বার্তা বিভাগ

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক: হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন

আপডেট সময় ০৮:০৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

আবুল মনছুর, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :

বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক রুইজাতীয় মাছের প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীকে ‘মৎস্য হেরিটেজ এলাকা’ ঘোষণা করেছে সরকার। এ বিষয়ে ৫ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে রুইজাতীয় মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতকরণ এবং গাঙ্গেয় ডলফিনের আবাসস্থল সংরক্ষণের লক্ষ্যে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণার আওতায় খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ও মানিকছড়ি উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী উপজেলা ও পাঁচলাইশ থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী এবং নদীতীরবর্তী ৯৩ হাজার ৬১২টি দাগভুক্ত মোট ২৩ হাজার ৪২২ একর এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, এপ্রিল থেকে জুন মাসে হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে রুইজাতীয় মাছের প্রজনন মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ নিষিক্ত ডিম পাওয়া যায়। এ কারণে হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, হালদা নদী থেকে কোনো প্রকার মাছ ও জলজ প্রাণী ধরা বা শিকার করা যাবে না। মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ে নিষিক্ত ডিম আহরণের অনুমতি থাকবে। নদীর প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী কোনো কাজ, ভূমি বা পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন, নদীর বাঁক কেটে সোজা করা এবং শিল্পকারখানা বা বসতবাড়ির বর্জ্য নদীতে ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়া প্রজনন মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি-জুলাই) হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৭টি খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নদী ও সংযোগ খালের ওপর নতুন কোনো রাবার ড্যাম বা কংক্রিট ড্যাম নির্মাণ করা যাবে না। নদীতে ভারী ইঞ্জিনচালিত নৌযান (যেমন, বালুবাহী নৌকা ও ড্রেজার) চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। নদীর শাখা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও ইজারা দেওয়া যাবে না।
তাছাড়া, নদীর অববাহিকা অঞ্চলে তামাক চাষ, ক্ষতিকর কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার এবং ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হালদা নদীতে কোনো গবেষণা বা পানি উত্তোলন প্রকল্প গ্রহণের আগে ‘হালদা নদী মৎস্য হেরিটেজ তদারকি কমিটি’র অনুমতি নিতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, পরিবেশগত ও প্রতিবেশগত ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সময়ের প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় শর্তাবলি সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারবে। একই সঙ্গে, ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর জারিকৃত পূর্ববর্তী প্রজ্ঞাপনটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।