
দেশে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশে গুমকে চলমান অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের ৪৭তম বৈঠকে এটি অনুমোদিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন এবং ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকাও অনুমোদিত হয়েছে। জাতীয় নগরনীতি নিয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশটি বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী আইন হিসেবে বিবেচিত হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার বা কর্তৃত্ববাদী শাসন দেশে গুমের রাজত্ব চালাতে পারবে না। কোনো গোপন আটক কেন্দ্র বা ‘আয়নাঘর’ আর তৈরি হবে না।”
অধ্যাদেশে গুমকে চলমান অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি বিধান করা হয়েছে। গোপন আটক কেন্দ্র বা ‘আয়নাঘর’ স্থাপন ও ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রেস সচিব জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম-সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে বাধ্য থাকবে।
অধ্যাদেশে ভুক্তভোগী, তথ্যদাতা ও সাক্ষীর নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ এবং আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করার স্পষ্ট বিধান রয়েছে। গুম-সংক্রান্ত ঘটনায় কার্যকর পদক্ষেপ ও ভুক্তভোগী পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ তহবিল এবং কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার গঠনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, আগের সরকারের আমলে দেশে গুমের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। গঠিত গুম কমিশনে প্রায় দুই হাজার অভিযোগ এসেছে, তবে প্রকৃত সংখ্যা চার হাজারের বেশি হতে পারে। অনেক মানুষ নিখোঁজ হয়ে ফেরেননি; কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। বিএনপির অনেক কর্মী এখনও নিখোঁজ। এই বাস্তবতাই আইনটিকে জরুরি করে তুলেছে।
তিনি আরও বলেন, অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ গত বছরের ২৯ আগস্ট জাতিসংঘের ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’-এ যোগ দেয়। ওই কনভেনশনের নীতিমালা অনুযায়ী এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রেস সচিব জানান, ৩০ অক্টোবর অধ্যাদেশটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্কের পর বিভিন্ন প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে এটি চূড়ান্ত আকারে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয় এবং অনুমোদিত হয়।
তিনি আরও বলেন, দেশের যোগানশৃঙ্খলা ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় লজিস্টিক নীতি অনুমোদন পেয়েছে। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে জাতীয় নগরনীতি নিয়ে আলোচনায় ঐকমত্য হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।