
বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেই লক্ষ্যেই সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ডসহ চাঞ্চল্যকর যেকোনো ঘটনায় দ্রুত সাড়া দিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন এ বিষয়ে নিবিড়ভাবে তদারকি করছেন।
নিহত মো. আমিরুল ইসলাম (২০), পিতা মৃত আহম্মদ আলী, মাতা মোছা. আমিনা খাতুন, সাং অলিদহ, থানা সলঙ্গা, জেলা সিরাজগঞ্জ—প্রতিদিনের মতো গত ৫ আগস্ট ২০২৫ দুপুর ১২টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে মিশুক গাড়ি নিয়ে ভাড়ার জন্য বের হন। তবে রাতে আর বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে তাকে না পেয়ে সলঙ্গা থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করা হয়। ধারণা করা হয়, অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে তাকে অটোসহ অপহরণ করে।
এরপর ১৮ অক্টোবর ২০২৫ বিকেল ৩টার দিকে সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চক নিহাল উত্তরপাড়া গ্রামের একটি ডোবার কচুরিপানার নিচে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ দেখতে পান এলাকাবাসী। খবর পেয়ে আমিরুলের মা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরনের কাপড় দেখে মরদেহটি তার ছেলের বলে শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় সলঙ্গা থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনার পর পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম গঠন করেন। টিমে ছিলেন রায়গঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম খান, জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ একরামুল হোসাইন (পিপিএম), ডিবির এসআই (নিঃ) মো. নাজমুল হক (বিপিএম), এএসআই (নিঃ) আব্দুল জলিল প্রামাণিক, এএসআই (নিঃ) মো. আরিফুর রহমান এবং এএসআই (নিঃ) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চৌকস টিমটি ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। পরে সলঙ্গা থানার চক নিহাল এলাকার মো. সাহেব আলী প্রামাণিক (২৫), পিতা মৃত সোহরাব আলী এবং তাড়াশ থানার ওয়াসিন গ্রামের মো. আব্দুল আজিম প্রাং (৩১), পিতা মৃত আব্দুল বাহের—এই দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের দেখানো মতে নিহত আমিরুলের অটোভ্যানের লুন্ঠিত অংশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে ছিল— একটি অটোর হ্যান্ডেল, সামনের চাকার স্ক্যাপ ২টি, মিটার ১টি, নষ্ট হেডলাইট ১টি, ৪০০-১২ সাইজের গাজী টায়ার রিংসহ ৩টি চাকা, লোহার তৈরি অটোগাড়ির বডি ১টি।
এগুলো ৫ নভেম্বর ২০২৫ ভোর ১টা ৩০ মিনিটে জব্দ তালিকা অনুযায়ী উদ্ধার করা হয়।
পরে ঘটনায় জড়িত আরেক আসামি মো. মনিরুজ্জামান সরকার (৪৪), পিতা মৃত শাহজাহান আলী, সাং চক নিহাল, থানা সলঙ্গা, জেলা সিরাজগঞ্জকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেখানো মতে ভিকটিমের অটোভ্যানের ৪টি ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে তিনটি JINDING POWER PLUS কোম্পানির 6-EV-12V ব্যাটারি এবং একটি H-POWER PLUS কোম্পানির 6-DGA-300-12V ব্যাটারি। ব্যাটারিগুলো ৫ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে জব্দ তালিকা মূলে উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত তিন আসামি ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।