তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সিলেটের বাসিন্দা হওয়ার দরুণ স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে জুলাই ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি করে নিরীহ ছাত্র-জনতাকে হত্যা মামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে রাতের আঁধারে দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন।
এ ছাড়াও তারা পিতা-পুত্র মিলে আওয়ামী লীগের বড় বড় এমপি-মন্ত্রীদেরকেও বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এভাবেই তারা বনে গেছেন টাকার কুমির।
ইতিমধ্যে মেসার্স ফখর উদ্দিন আলী আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ৬টি প্রতিষ্ঠান এবং পার্টনারদের সকল ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রেখেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।
সিআইসি সূত্র জানায়, তারা ইতোমধ্যে মহামান্য আদালত থেকে স্টে অর্ডার পেয়েছে এবং বকেয়া ট্যাক্স পরিশোধ করবে মর্মে আবেদন জানিয়েছে।
তাদের শত কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে হাজার কোটি টাকার প্রাচুর্যের সন্ধানে মাঠে নেমেছে এনবিআর, দুদকসহ অন্যান্য সংস্থা।
ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ব্যবসায়ী নেতা শেখ ফাহিমের ঘনিষ্ঠ নাহিয়ান এখন নিজেদেরকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
দুবাইয়ে উচ্চমূল্যের প্রোপার্টি ও গোপন বিনিয়োগের অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী বাপ-বেটা, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী, সিলেটের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফকর ব্রাদার্সের দুই কর্তা—পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে আরব আমিরাতে গড়ে তোলা উচ্চমূল্যের প্রোপার্টি ও গোপন বিনিয়োগের।
জানা যায়, এই সব অভিযোগকে কেন্দ্র করে তারা এনবিআরের বিশেষ তদন্তের নজরে রয়েছেন।প্রথম দফায় পাওয়া তথ্য ও অভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, কয়লা ও পাথরের আড়ালে দুই কর্তা দুবাইয়ে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ ও সম্পদ সৃষ্টি করেছেন, যা দেশের আয়কর নথিতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করা হয়নি বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, দুবাইয়ের জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে (প্লট নং-৬৮১৬৪৮১) ৯৫০ বর্গমিটার জমির ওপর ৩৩ তলা বিশিষ্ট 'সাফায়া ৩২' নামে একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভবনটি "দার আল কারামা" নামের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির আওতাভুক্ত। এই কোম্পানির যৌথ অংশীদার হিসেবে নাম রয়েছে ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ ও তার পুত্র ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—ভবনে মোট ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট থাকবে, যেখানে একক শোবার ঘরের মূল্যও বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকায় শুরু।
দুবাইয়ে ৩৩ তলা ভবনের সাইনবোর্ডকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিট (সিআইসি) ইতোমধ্যে ফকর ব্রাদার্স সম্পর্কিত ১৭ জন ও একাধিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।
গত জানুয়ারি মাসে সিআইসির একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দল দুবাই গিয়েছিল; ওই সফরের রিপোর্টে ফকর ব্রাদার্সসহ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। সিআইসির প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে—২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ থেকে পাথর ও কয়লা আমদানির নামে আয় দেখিয়ে সারচার্জ ও সম্পর্কিত জরিমানা এড়াতে মোট মিলিতভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকার আয়কর ফাঁকির আশঙ্কা আছে।
তদন্তে ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমেদ, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ফয়েজ হাসান ফেরদৌস ও ফকরুস সালেহিন নাহিয়ানসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান গণমাধ্যমকে বলেছেন দুবাইয়ের প্রকল্পটিকে তারা ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি’ হিসেবে দেখেন।
বাংলাদেশ থেকে ওই প্রকল্পে সরাসরি টাকা পাঠানো হয়নি, তারা কেবল বিক্রির পার্টনার হয়েছেন এবং ২০২৪ সালের ২ জুলাই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। তাই আয়কর আইনের শর্তানুযায়ী এখনও সবকিছু দাখিল করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন যে দেশি কোনো আয়ের তালিকায় তাদের সংশ্লিষ্টতা ভুল করে দেখানো হয়েছে এবং তা সংশোধনের সুযোগ আছে।
এনবিআর সূত্র বলছেন, প্রাথমিক প্রমাণে কর ফাঁকির অনিবার্য চিহ্ন দেখা গেছে; তদন্ত এখনও চলমান। তবে সংস্থাটি অনুসন্ধান থামাতে বিভ্রান্তকরণ ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করছে, এমন অভিযোগও রয়েছে।
তদন্ত চলাকালে বিভিন্ন স্তরের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সিদ্ধান্তহীন তদবিরের কথাও তদন্তকারীরা উল্লেখ করেছেন। আয়কর আইনে স্পষ্ট করা আছে—বিদেশে থাকা সম্পদ রিটার্নে প্রদর্শন না করলে জরিমানা ও অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। ২১ ধারায় বিদেশি সম্পত্তি অপ্রদর্শিত থাকলে উপ-কর কমিশনার সেই সম্পত্তির বাজার মূল্যের সমপরিমাণ জরিমানা আরোপ করতে পারবেন; তবে জরিমানার পূর্বে করদাতাকে যুক্তিসঙ্গত শুনানি দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশে গিয়ে তদন্ত ও সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের বিধানও রয়েছে।
অনুসন্ধানকারীরা বলছেন—অর্থ স্রোত ও বিনিয়োগের উৎস নিয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা না দিলেই এখান থেকে আইনগত জটিলতা অটল।
এই অনুসন্ধান শুধু এক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকছে না—এটি দেশের বাইরে থাকা সম্পদের স্বচ্ছতা ও করের ন্যায়পরায়ণতা চালিয়ে নেওয়ার একটি বড় ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নানা আর্থিক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে আস্থা হারায়। বর্তমানে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও দুবাইয়ে অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএসই সূত্র জানায়, ফকর ব্রাদার্সের দুই কর্তা বাপ-বেটার সঙ্গে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ব্যাপক সখ্যতাও রয়েছে, এদিকে পাচারকৃত অর্থের পেছনে মূল কারিগর ছিলেন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। ক্রিকেট নিয়ে জুয়ার আসর ও ক্রিকেট বেটিংয়ের সাথেও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় ফকর ব্রাদার্সের এ দুই কর্তার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ফখর উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মালিকানাধীন গুলশানের পাঁচতারকা হোটেল স্টার প্যাসিফিকের সহকারি ম্যানেজার উসমান বলেন, “স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা যোগাযোগ করানোর অনুমতি আমাদের নেই। সহকারী ম্যানেজার আরও বলেন, তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার দেওয়াও নিষেধ রয়েছে। তবে তিনি বিষয়টি জেনারেল ম্যানেজারকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
অনেকে বলছেন, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হলে তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে। সরকারকে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আরও কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।