গত জুন মাসের বান্দরবানের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র রুমা উপজেলাকে কেন্দ্র করে জারি করা পর্যটক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর্যটক চলাচল বন্ধ থাকার পর গত ৫ জুন বৃহস্পতিবার "রুমা জোনে " সকালে স্থানীয় গুণীজন, ব্যবসায়ী, ড্রাইভার ও পর্যটক সংশ্লিষ্টদের সাথে আংশিকভাবে পর্যটন স্পর্ট খুলে দেয়ার ব্যাপারে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়।
ঐ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন রুমা জোনের ৩৬ বীর ক্যাপ্টেন ইফতেখারুল কাশেম চৌধুরী, রুমা থানায় এসআই মোঃ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিলন মার্মা, বাজার কমিটি সভাপতি খলিলুল রহমান, রুমা সরকারি কলেজে সহকারী অধ্যক্ষ শৈপ্রুচিং মারমা, অগ্রবংশ পরিচালক হ্লাথোয়াইচিং মারমা (ভিক্ষু), রাজনীতিবিদ মো: ইদ্রিস মিয়া, ও পলাশ চৌধুরী, পর্যটন ব্যবসায়ীগণ, বগালেক কারবারি, মুনলাই পাড়ার গ্রামবাসী, বাজার এলাকায় গুণীজন ব্যক্তিবর্গ এবং অনলাইন এবং পত্রিকা সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। তারপর সর্বসম্মতিতে কয়েকদিন পর রুমা জোনের সুদৃঢ় ৩৬ বীর ৭৮৮৮ মেজর মেহেদী হাসান সরকার পিএসসি নির্দেশনায় মুনলাইন পাড়া ও বগালেক টুরিস্ট স্পটগুলো সীমিত আকারে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ ৪ মাস অতিক্রম হলেও এখনো পুরোপুরি উন্মুক্ত না হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, গাইড, হোটেল-মোটেল মালিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা পূর্ণ উন্মুক্তের দাবি জানিয়েছেন।
রুমা উপজেলা বান্দরবানের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নীলগিরি, নীলাচল, বগালেক, কেওক্রাডং, রেমাক্রি ঝর্ণা, দেবতাখুমসহ অসংখ্য পর্যটন স্পটের কারণে প্রতি বছর হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে ভিড় জমায়। কিন্তু সম্প্রতি পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাজনিত কারণে পর্যটক প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে রুমার পর্যটন খাত সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়েছিল।রুমার অর্থনীতির একটি বড় অংশ নির্ভর করে পর্যটন শিল্পের ওপর। স্থানীয় গাইড, জিপচালক, নৌকার মাঝি, হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীসহ অনেকেই পর্যটকদের সেবা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ৫/৬ মাস আগে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের আয় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চরম আর্থিক সংকটে পড়েন তারা।
রুমা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা বলেন, গত কয়েক মাসে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পর্যটক না থাকায় হোটেল খালি পড়ে থাকত, দোকানে বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যেত। এখন আংশিক উন্মুক্ত হয়েছে, আশা করছি দ্রুত পুরোপুরি খুলে দেওয়া হবে।
স্থানীয় টুরিস্ট গাইড মো. আলমগীর জানান, প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে রুমার কিছু অংশে সীমিত পরিসরে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি মেলেছে। তবে এখনো কেওক্রাডং, রেমাক্রি ও রিঝুক ঝর্ণা মতো বিখ্যাত স্পটগুলো পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়নি। এতে একদিকে স্থানীয়রা কিছুটা স্বস্তি পেলেও পূর্ণ উন্মুক্তের দাবি জানাচ্ছেন।
রুমা ট্যুর গাইড সমিতির সভাপতি বলেন, আমরা পর্যটন নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করি। বর্তমানে আংশিক উন্মুক্ত হওয়ায় আমাদের কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব আসন্ন শীতের সব পর্যটন স্পটগুলো উন্মুক্ত করে দিলে আরো ভাল হবে বলে মনে করেন।
রুমার পর্যটন খাত দেশের একটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে এই খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত পূর্ণ উন্মুক্ত করা গেলে পর্যটন শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এবং এলাকার অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠবে।
বান্দরবানের রুমা বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী বলেন, পর্যটকেরা এলে শুধু ব্যবসা নয়, এলাকার সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ হয়। তাই আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব পর্যটন স্পটগুলো পুরোপুরি খুলে দেওয়া হোক।
রুমার পর্যটনকেন্দ্র আংশিক উন্মুক্ত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে পূর্ণ উন্মুক্তের অপেক্ষায় দিন গুনছে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসন ও স্থানীয়দের সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকলে খুব শিগগিরই রুমার পর্যটন শিল্প আবারও প্রাণ ফিরে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।