ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের যাতায়াত ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে। উপজেলার ৯৭ প্রধান শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ হওয়া ২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা এখনও তাদের হাতে পৌঁছেনি। অভিযোগ রয়েছে, ওই অর্থ কয়েকজন শিক্ষক নেতা বিশেষ কৌশলে নিজেদের একাউন্টে তুলে নিয়ে হাওর ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বোয়ালমারীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০২টি। এর মধ্যে পৌর এলাকার ৫টি বিদ্যালয় বাদে ৯৭ জন প্রধান শিক্ষকের জন্য প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ হয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ এসেছে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা। তবে তা শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ না হয়ে ছোলনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোশাররফ হোসেন, বনচাকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুর রহমান এবং প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মোঃ জাহিদুর রহমানের কাছে গচ্ছিত রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক নেতা শফিকুর রহমান বলেন, “আমাদের কাছে ২ লক্ষ সামথিং টাকা জমা আছে। শিক্ষকদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে টাকাগুলো রেখেছি হাওর ভ্রমণের জন্য। অচিরেই আমাদের এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে।” একই কথা জানান জাহিদুর রহমানও। তবে মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নিয়মিত উপজেলা সদরে গিয়ে অফিসিয়াল কাজ করতে হয়, অথচ তারা কখনো ভাতার টাকা সঠিকভাবে পাননি। চলতি অর্থবছরের টাকা ৩০ জুনের মধ্যে পাওয়ার কথা থাকলেও এখনও কেউ পাননি। বরং ‘ভ্রমণের নামে’ টাকা আটকে রাখা হয়েছে।
একজন প্রধান শিক্ষিকা অভিযোগ করে বলেন, তার একাউন্টে কয়েকজন শিক্ষকের ভাতার টাকা জমা হলেও পরে এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ‘পিকনিকের কথা বলে’ তার কাছ থেকে টাকাগুলো নিয়ে নেন। কিন্তু তিনি ভ্রমণে না যাওয়ায় নিজের ভাতার টাকাও ফেরত পাননি।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির এক সাবেক নেতা বলেন, “প্রতি বছরই এই বরাদ্দ আসে। কিন্তু প্রকৃত হকদাররা খুব কমই টাকা পান। শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে কিছু শিক্ষক নেতা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেন। এবারও ভ্রমণের নামে টাকা বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহাদ মিয়া জানান, এ বছর মাত্র ৩৮ জন শিক্ষকের নামে বরাদ্দ এসেছে। হিসাব রক্ষণ শাখায় তালিকা দেওয়ার পর কী হয়েছে সে বিষয়ে তিনি অবগত নন। তার দাবি, ভাতা উত্তোলনের জন্য জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। অনেক শিক্ষক আবেদন না করায় বঞ্চিত হন।
এ ঘটনায় স্থানীয় শিক্ষক মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক নেতাদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারের কারণে প্রকৃত হকদাররা বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন।