
মিথ্যা ও বানোয়াট ছাত্রী কেলেঙ্কারির অভিযোগে হয়রানির প্রতিবাদ ও যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে নির্দোষিতা প্রমাণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে মিথ্যা অভিযোগ তুলে নেওয়ার আবেদন করেছেন আল-হেরা দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান।
তিনি সকল গণমাধ্যমকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে দ্বীনি শিক্ষা প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত রয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা সর্বদা শিক্ষার্থীদের নৈতিক, ধর্মীয় ও চারিত্রিক গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, গত ১৭ই জুন তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঘিরে এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ছাত্রী কেলেঙ্কারির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্য মূলকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সম্পূর্ণভাবে বানোয়াট ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে তিনি দাবি করেন। এতে তিনি মনে করেন, তার ব্যক্তিগত সুনাম ও সম্মানহানিই শুধু হয়নি বরং একজন দ্বীনি শিক্ষকের মর্যাদাও চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।
গত ২১ জুন গণমাধ্যমের নিকট প্রেরিত চিঠিতে তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সাথে তার কোন প্রকার সম্পর্ক নাই এবং তাকে অযথা হয়রানি করার জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন এটি তার বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার যা তার ধর্মীয় সামাজিক ও পেশাগত জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার গভীর ষড়যন্ত্রের অপপ্রয়াস।
তিনি তার প্রেরিত চিঠিতে, গণমাধ্যম, সাইবার ক্রাইম ইউনিট, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরে বলেনঃ
১। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধান করে তদন্ত করলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। তাই যেকোন সংস্থা দিয়ে নিরপেক্ষভাবে সম্পূর্ণ ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
২। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ যেসব জায়গায় এই মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।
৩। যারা তাকে সম্মানহানি ও হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে এই ঘটনার সাথে জড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান। যাতে ভবিষ্যতে আর কোন শিক্ষককে এ ধরনের হয়রানির শিকার হতে না হয়। তিনি ন্যায় বিচার পেতে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
এ বিষয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, সম্পূর্ণ বিষয়টি দুই পক্ষের ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক আল হেরা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নাজমুল সম্পর্কে বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই মাদ্রাসার নামে আমরা কোনদিন কোন অভিযোগ শুনিনি।
মাদ্রাসার একজন শিক্ষক জানান, আমি এখানে শিক্ষকতা শুরু করার পর থেকে কোনদিন প্রিন্সিপাল ও এই মাদ্রাসার নামে এরকম কোন কথা শুনি নাই যার কারণে এই মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুন্ন হতে পারে। তিনি আরো বলেন, এই মাদ্রাসায় প্রায় সাড়ে চারশ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রায় আড়াইশো ছাত্রী এবং দুইশত রয়েছে। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের সাথেই সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় থাকে। কখনো কোন ছাত্র-ছাত্রী কিংবা অভিভাবকগণের কাছ থেকে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযোগ আসে নাই।
এ বিষয়ে আল-হেরা মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত কয়েকজন ছাত্রীর জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রিন্সিপাল স্যার অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। আমাদেরকে তার নিজের সন্তানের মত মনে করে সার্বক্ষণিক পড়াশোনা খোঁজখবর রাখেন। গত ১৭ জুন মঙ্গলবার যে ঘটনাটি ঘটেছে প্রিন্সিপাল স্যার এমন কিছু করতে পারে আমরা আমরা বিশ্বাস করিনা। যে ছাত্রীটি স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেওয়ার যে অভিযোগটি করেছে সেও আমাদের সহপাঠী। তবে আমাদের ধারণা এখানে কোন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এসময় ছাত্র-ছাত্রীরা আত্মবিশ্বাসের সাথে আরও বলেন এই প্রতিষ্ঠানের আরও তিনটি ক্যাম্পাস আছে বিভিন্ন জায়গায়। প্রিন্সিপাল স্যার এবং মাদ্রাসার সুনাম না থাকতো তবে এটা সম্ভব হতো না। প্রিন্সিপাল স্যার ভালো বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
আল-হেরা মাদ্রাসার গেটের নিরাপত্তারক্ষী জানান, মাদ্রাসা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গেটের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয় এবং ১২:১৫ এবং ১২:৪৫ এই দুই টাইমে মাদ্রাসা ছুটির সময়ে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হয়। তিনি বলেন দীর্ঘদিন এই মাদ্রাসায় চাকরি করি এবং আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ডিউটি করি এই গেটের সাথেই প্রিন্সিপাল স্যারের অফিস। থাই গ্লাস দিয়ে ঘেরা সবকিছু দেখা যায়। বিভিন্ন সময় অনেক ছাত্রছাত্রী স্যারের রুমে আসা যাওয়া করে যা এখান থেকে দেখা যায়। প্রিন্সিপাল স্যার কখনো কারো দিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়েছে বা কিছু বলেছে বা কোন ছাত্র ছাত্রীর সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করেছে এমন কিছু আমার কখনো মনে হয় নাই। তিনি বলেন প্রিন্সিপাল স্যার অনেক ভালো মনের মানুষ। তার বিরুদ্ধে গায়ে হাত দেওয়ার যে অভিযোগ টি করা হয়েছে আমার মনে হয় সেটা ছাত্রী ও স্যারের মাঝে কোন ভুল বোঝাবুঝির বিষয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে দেখা যায়, এখানে যে সময়ের ঘটনার কথা বলা হয়েছে তখন মাদ্রাসার প্রথম পর্বের ছুটির পরে অর্থাৎ ১২:১৫ সময়ে যে ছুটি হয় সেই সময়টিতে। সূত্রমতে সেই সময়টিতে সাধারণত মাদ্রাসার প্রবেশ পথে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর চলাফেরা থাকে। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন এরকম একটা পরিবেশে আসলেই কি অনৈতিক কিছু করা সম্ভব? আরও দেখা যায়, স্থানীয় প্রধান সড়কের সাথেই লাগোয়া একটি ভবনে মাদ্রাসাটি অবস্থিত। একটি মাত্র প্রবেশ পথ সেখান দিয়েই মাদ্রাসার সকল ছাত্র-ছাত্রী আসা-যাওয়া করে। মাদ্রাসার প্রবেশ পথেই ডানদিকে থাই গ্লাস করা প্রিন্সিপালের অফিস। কক্ষে দিকে তাকালেই সবকিছুই দেখা যায়। অনেকেই বিষয়টি দেখে বলেন এরকম একটি পরিবেশে আসলে অনৈতিক কিছু করা সুযোগ নেই। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমাদের দুই পক্ষের পরিবারের মধ্যে বিষয়টি বোঝাপড়া হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে আমরা আর কারো সঙ্গে কথা বলতে চাই না।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মানসহ বিভিন্ন নিয়ম-নীতি ও নিরাপত্তার-শৃঙ্খলার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত অত্যন্ত সুনামের সাথে আল-হেরা মাদ্রাসা তিনটি ক্যাম্পাসে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সাথে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলাকাবাসীসহ সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।