
মোঃ শিহাব উদ্দিন শেখ, স্টাফ রিপোর্টার।।
ঢাকার আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাতদলের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এসময় লুট হওয়া ১৩ ভরি স্বর্ণ, স্বর্ণ বিক্রির ৭৬ হাজার টাকা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে আশুলিয়া থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো: আনিসুজ্জামান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার পিটুয়া বন্দের বাড়ি গ্রামের মো. হক ভূঁইয়ার ছেলে মো. রিপন মিয়া (৪০), পাবনা জেলার সুজানগর থানার চর ভবানীপুর শেখ পাড়া গ্রামের জোনাই প্রামাণিকের ছেলে মো. আরিফ প্রামাণিক (৩০), একই জেলার আতাইকুলা থানার সরাডাঙ্গী (সরদারপাড়া) গ্রামের মৃত করিম শেখের ছেলে মো. শাহ আলম (৪৫), মো. আরমান শেখ (৩৭), রাজশাহী জেলার কর্নহার গ্রামের রাধানগর শল্লাপাড়া মোড় এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বাবু (৪৫) ও কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার বৃষ্টিপুর গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মো. মাসুদ রানা কালা মাসুদ (৪৫)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। এদের মধ্যে কেউ দিনের বেলায় অটোরিকশা চালায়, কেউ ফলের ব্যবসা করে এলাকায় রেকি করে রাতের বেলায় ডাকাতি করে। এদের মধ্যে ৫ ডাকাত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যা ও স্বর্ণ ডাকাতি সংঘটিত করে এবং একজন ডাকাতির মালামাল তার জিম্মায় রাখে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির সময় ডাকাত ইমরান, তার দুই ভাই শাহ আলম ও আরমান, রিপন, আরিফ, আকাশ, তালিম ও মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ একটা ভাড়া গাড়িতে করে নয়ারহাট এলাকায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির টার্গেট করে। ইমরান ও আকাশ উক্ত ভাড়া গাড়ির ভিতরে অবস্থান করে, আরমান ও শাহ আলম ঘটনাস্থলের পাশে পাহারা দেয় এবং তালিম ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক তৈরী করে। রিপন ও আরিফ দুটো চাপাতি দিয়ে দিলীপকে কোপ দেয় এবং মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ স্বর্ণের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে ভাড়াকৃত গাড়িতে ওঠে ৮ জন মিলে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তার ডাকাতদের মধ্যে রিপনকে সাভারের যাদুরচর এলাকা থেকে, মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ, শাহ আলম এবং আরমানকে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা ৩ জন একে অপরের আপন ভাই। পরে রিপন, শাহ আলম, আরমান ও মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদের দেওয়া তথ্য মতে আরিফকে রাজবাড়ির গোয়ালন্দ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া ৮ ভরি স্বর্ণ এবং স্বর্ণ বিক্রয়ের ৭৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির স্বর্ণ ক্রয়ের সাথে জড়িত ইব্রাহিমকে রাজশাহীর কর্ণহাট এলাকা থেকে লুট করা ৫ ভরি স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আরিফের দেখানো আরমানের ফলের দোকান থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। তারা সবাই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। দিনের বেলায় এরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে একত্র হয়ে বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করে থাকে। তাদের চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে ঢাকা জেলা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুজ্জামান বলেন, আমি সাভার আশুলিয়া ও ধামরাইবাসীকে আস্বস্ত করতে চাই যে, আপনারা নির্ভয়ে বাসা বাড়িতে ঘুমান। অত্র এলাকার জানমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু নিরাপত্তায় পুলিশ অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করে যাবে। কোন অপরাধী অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এসময় তিনি জানান, আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর এবং ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাভার আশুলিয়ায় আমাদের কয়েক স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির, আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন্স) সফিকুল ইসলাম সুমন, এসআই মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।