ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওমুসলিম রবিউলকে না খেয়েই রোজা রাখতে হচ্ছে

সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ এনায়েতপুর থানা সদরের অদূরে গোয়াইল বাড়ি মসজিদসংলগ্ন রাস্তার পাশে টং দোকানে বসবাস করছেন ৬৫ বছর বয়সি রবিউল ইসলাম। তিনি এক যুগের বেশি সময় আগে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

এরপর থেকেই পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বর্তমানে তার আপন বলে কেউ নেই। বার্ধক্যে দুর্বল এই বৃদ্ধ পায়ে সমস্যার কারণে হাঁটাচলাও কষ্টসাধ্য। নেই স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি। অন্যের দেওয়া সহযোগিতায় কখনও খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। পায়ের সমস্যা বেশি হওয়ায় হাঁটাচলা বন্ধের পথে। বর্তমানে ইফতারে সবাই খাবার দিলেও সেহরিতে কেউ খবর রাখে না।

বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদককে এমন আক্ষেপের কথা জানান রবিউল।

রবিউল ইসলাম বলেন, রোজার শুরু থেকে এলাকা ও পথচারীদের দেওয়া খাবার খেয়ে সেহরি ও ইফতারি করেছি। তবে কয়েক দিন হলো শরীরটা বেশ ভালো যাচ্ছে না, এজন্য বাহিরে অন্যের দুয়ারে যেতে পারছি না। এজন্য কদিন পানি অথবা মুড়ি খেয়ে সেহরি করেছি। তবে ইফতারে অনেকেই খাবার দেয়; কিন্তু সেহরিতে তেমন কেউ খোঁজ নেয় না। রান্না করে খাবো সেই ব্যবস্থাও নেই। তাই বৃহস্পতিবার সেহরিতে পানি খেয়েই রোখা রেখেছি।

তিনি আরও বলেন, এতেও আমি অসন্তুষ্ট না। কারণ মহান আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন। যেহেতু হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছি শান্তির ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। তাই কোনো কিছুকেই আমি অশান্তি মনে করি না। আল্লাহ আমাকে নিশ্চয়ই শরীর ভালো করে দেবেন, খাবারের জন্য কাউকে না কাউকে পাঠিয়ে দেবেন, আমার পাশে এসে দাঁড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা হযরত আলী জানান, রবিউল ইসলাম বৃদ্ধ বয়সে নিজের পরিবার-পরিজন ছাড়া অসহায় অবস্থায় একটি খুপরি টং দোকানে জরাজীর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন। স্যাঁতসেতে কাপড় চোপড় ও কিছু খড়ি, রান্নার পাতিল, কাঁথা-বালিশ নিয়ে ঘুমানোর উপায় নেই। তারপরও নওমুসলিম এই বৃদ্ধার মুখে হাসি থাকে।

এনায়েতপুর হাট বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মুক্তার হাসান জানান, এনায়েতপুর-পাচিল আঞ্চলিক সড়কে যাতায়াতে প্রায়ই দেখা যায় অসহায় বৃদ্ধ রবিউল চাচাকে। খুপরি টং দোকানের দরজা খুলে ফ্যাল ফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে অন্যের কাছে সহযোগিতা চাইতে বের হতেন। তবে বর্তমানে ভার না থাকায় রমজানে সেহরিতে খাবারের অভাবে পানি খেয়ে রোজা পালন করছেন জেনে কিছু সহযোগিতা করেছি। বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

সমাজ কর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী বয়োবৃদ্ধ রবিউল চাচার ঘর নেই ও খাবার নেই। তাকে একটি ঘর নির্মাণ ও দোকান করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি। সবার সহযোগিতা চাই। আশা করছি দ্রুতই তাকে নিরাপদ স্থানে একটি দোকান করে দিতে পারব।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

পলাশবাড়ীতে কারেন্টের শট সার্কিটে আগুনে  দোকান পুড়ে ছাই,,,

নওমুসলিম রবিউলকে না খেয়েই রোজা রাখতে হচ্ছে

আপডেট সময় ০৯:৫৮:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ এনায়েতপুর থানা সদরের অদূরে গোয়াইল বাড়ি মসজিদসংলগ্ন রাস্তার পাশে টং দোকানে বসবাস করছেন ৬৫ বছর বয়সি রবিউল ইসলাম। তিনি এক যুগের বেশি সময় আগে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

এরপর থেকেই পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বর্তমানে তার আপন বলে কেউ নেই। বার্ধক্যে দুর্বল এই বৃদ্ধ পায়ে সমস্যার কারণে হাঁটাচলাও কষ্টসাধ্য। নেই স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি। অন্যের দেওয়া সহযোগিতায় কখনও খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। পায়ের সমস্যা বেশি হওয়ায় হাঁটাচলা বন্ধের পথে। বর্তমানে ইফতারে সবাই খাবার দিলেও সেহরিতে কেউ খবর রাখে না।

বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদককে এমন আক্ষেপের কথা জানান রবিউল।

রবিউল ইসলাম বলেন, রোজার শুরু থেকে এলাকা ও পথচারীদের দেওয়া খাবার খেয়ে সেহরি ও ইফতারি করেছি। তবে কয়েক দিন হলো শরীরটা বেশ ভালো যাচ্ছে না, এজন্য বাহিরে অন্যের দুয়ারে যেতে পারছি না। এজন্য কদিন পানি অথবা মুড়ি খেয়ে সেহরি করেছি। তবে ইফতারে অনেকেই খাবার দেয়; কিন্তু সেহরিতে তেমন কেউ খোঁজ নেয় না। রান্না করে খাবো সেই ব্যবস্থাও নেই। তাই বৃহস্পতিবার সেহরিতে পানি খেয়েই রোখা রেখেছি।

তিনি আরও বলেন, এতেও আমি অসন্তুষ্ট না। কারণ মহান আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন। যেহেতু হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছি শান্তির ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। তাই কোনো কিছুকেই আমি অশান্তি মনে করি না। আল্লাহ আমাকে নিশ্চয়ই শরীর ভালো করে দেবেন, খাবারের জন্য কাউকে না কাউকে পাঠিয়ে দেবেন, আমার পাশে এসে দাঁড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা হযরত আলী জানান, রবিউল ইসলাম বৃদ্ধ বয়সে নিজের পরিবার-পরিজন ছাড়া অসহায় অবস্থায় একটি খুপরি টং দোকানে জরাজীর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন। স্যাঁতসেতে কাপড় চোপড় ও কিছু খড়ি, রান্নার পাতিল, কাঁথা-বালিশ নিয়ে ঘুমানোর উপায় নেই। তারপরও নওমুসলিম এই বৃদ্ধার মুখে হাসি থাকে।

এনায়েতপুর হাট বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মুক্তার হাসান জানান, এনায়েতপুর-পাচিল আঞ্চলিক সড়কে যাতায়াতে প্রায়ই দেখা যায় অসহায় বৃদ্ধ রবিউল চাচাকে। খুপরি টং দোকানের দরজা খুলে ফ্যাল ফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে অন্যের কাছে সহযোগিতা চাইতে বের হতেন। তবে বর্তমানে ভার না থাকায় রমজানে সেহরিতে খাবারের অভাবে পানি খেয়ে রোজা পালন করছেন জেনে কিছু সহযোগিতা করেছি। বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

সমাজ কর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী বয়োবৃদ্ধ রবিউল চাচার ঘর নেই ও খাবার নেই। তাকে একটি ঘর নির্মাণ ও দোকান করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি। সবার সহযোগিতা চাই। আশা করছি দ্রুতই তাকে নিরাপদ স্থানে একটি দোকান করে দিতে পারব।