
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পূর্ণিমা রানী শীল ধর্ষণ মামলায় অন্যায়ভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করা ১১ জন নিরপরাধ ব্যক্তির মুক্তি ও মামলাটির পুনঃবিচারের দাবিতে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লাপাড়া থানার সামনে আয়োজিত এই মানববন্ধনে হাজারো মানুষ ন্যায়বিচারের দাবিতে আওয়াজ তোলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা ২০০১ সালের ৮ অক্টোবরের ঘটনাটি স্মরণ করে বলেন, এটি ছিল একটি তুচ্ছ প্রতিবেশী ঝগড়া, যাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় রূপান্তর করা হয়। তারা অভিযোগ করেন, পূর্ণিমার বাবা অনিল শীল প্রথমে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন, যেখানে ধর্ষণের কোনো উল্লেখ ছিল না। ১১ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ পূর্ণিমাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পরই ধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসে।
বক্তারা সিআইডি রিপোর্টের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ১৪ অক্টোবরের মেডিকেল পরীক্ষায় বলা হয়েছিল যে, ঘটনার ২-৩ দিন আগে যৌনসঙ্গমের আলামত পাওয়া গেছে, অথচ ঘটনার তারিখ ছিল ৮ অক্টোবর। তারা প্রশ্ন তোলেন—তাহলে পূর্ণিমার ধর্ষণ ঠিক কবে এবং কার দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল?
এই মামলার রায় প্রসঙ্গে বক্তারা জানান, পূর্ণিমা রানী শীলের ২২ ধারার জবানবন্দি ও ৭ জন সাক্ষীর মধ্যে কেবলমাত্র একজন সাক্ষী, সাধন মাস্টারের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করেই সাজা ঘোষণা করা হয়েছিল। অথচ সাধন মাস্টার নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তাকে গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়।
২০১২ সালের উচ্চ আদালতে আপিলের পর আসামিদের জামিন মনজুর করা হলেও মাত্র ৭ দিনের মাথায় এটর্নি জেনারেলের তদবিরে চেম্বার কোর্টের বিচারপতি সামসুদ্দিন মানিক সেই জামিন বাতিল করে পূর্বের রায় বহাল রাখেন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, এটি বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুস্পষ্ট প্রমাণ।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেন:
১. পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ পুনঃতদন্ত করতে হবে। ২. ১৭ বছর যাবত নিরপরাধ ১১ জন কারা বন্দির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি। ৩. প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৪. বিচার ব্যবস্থা লঙ্ঘনকারী বিচারকসহ মিথ্যা সাক্ষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ৫. নিরপরাধ ১১ জনের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া ১৭ বছরের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। ৬. পূর্ণিমা রানী শীল ও তার পরিবারকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৭. পূর্ণিমা রানী শীলকে দেওয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করতে হবে।
বক্তারা বলেন, এই মামলাটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নিরপরাধদের শাস্তি ভোগের একটি জ্বলন্ত উদহারণ। তারা ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটির পুনর্মূল্যায়নের জোর দাবি জানান।
সিরাজগঞ্জের জনগণসহ বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা এই মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং নিরপরাধদের মুক্তির জন্য ন্যায়বিচারের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।