
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নীলফামারী জেলায় টানা দুই দিনের ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় চলতি মৌসুমের আমন ধান ও শীতকালীন সবজি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, মাঠের আধপাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে এবং অনেক ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে, ফলে ঘরে ফলন তোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে নীলফামারীতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকার ফসল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় ধানগাছ হেলে পড়েছে এবং কিছু জমি পানিতে ডুবে গেছে, যা ধানের গোড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এদিকে, জেলার কৃষকরা আমন ধান কাটার পর প্রায় ৫,৫৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ শুরু করেছিলেন। উঁচু জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হলেও টানা বৃষ্টিতে এসব ফসলেও ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় (যার মধ্যে নীলফামারীও রয়েছে) ৪২,১৩০ হেক্টর জমিতে মোট ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৩ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সদর উপজেলার কৃষক মো. আছাদুল হক বলেন,
“ধান পাকার পথে ছিল। কয়েকদিন পরই কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সব গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। পানি না নামলে ফলন ঘরে তোলা কঠিন হবে।”
একই এলাকার কৃষক হাবিবুর ইসলাম বলেন,
“আমরা সারাবছর এই ফসলের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু ঝড়ো বাতাসে ধান পড়ে যাওয়ায় বছরের পরিশ্রম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
শুধু ধান নয়, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ ও আলুসহ শীতকালীন ফসলেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেতেই পানি জমে শিকড় নষ্ট হয়ে গাছ মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর রহমান বলেন,
“নিম্নচাপের প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় ধান ও সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকদের আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশন, নুয়ে পড়া ধানগাছ বাঁধা এবং অতিরিক্ত পানি জমে না থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।”
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শুরু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সেলিম রেজা, নীলফামারী : 



















